জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ’ মাধ্যমে পাঠকরা ফিরে যাবেন ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে এবং ‘৭৫-এর ১৫ই আগস্টের কালরাত্রিতে, নিউইয়র্কে গ্রন্থ আলোচনায় আলোচকবৃন্দ  

ফিরে দেখা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পরবর্তীতে নানান ঘটনা ও পথ পরিক্রমা নিয়ে এবং অনেক কূট কৌশল এবং ষড়যন্ত্র নিয়ে লেখা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডঃ নূরুন নবীর ‘জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ’ গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা হলো গত ৩০শে সেপ্টেম্বর শনিবার, নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ‘৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি,নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার আয়োজিত অনুষ্ঠানে। 

সংগঠনের সভাপতি ফাহিম রেজা নূরের সভাপতিত্বে সভায় আলোচকবৃন্দ ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব বেলাল বেগ, সাপ্তাহিক বাঙালীর সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস ও কবি সৈয়দ কামরুল। আলোচনার এক পর্যায়ে ডাঃ আব্দুল বাতেন, ডঃ আবেদীন কাদের ও কামাল হোসেন মিঠুও গ্রন্থ সম্পর্কে মতামত রাখেন।

নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার পরিচালনায়, ‘জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ গ্রন্থের আলোচনায় বেলাল বেগ বলেন লেখক ডঃ নবীর দেশপ্রেম ও ঘটনাগুলির সাথে নিবিড় সম্পর্কের কারণে সৎভাবে আলোচনা করে পাঠকদের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন বিচার বিবেচনার জন্য।

তিনি নিজে কিন্তু কোন মতামত না দিয়ে শুধু ঘটনার আড়ালে ঘটনাগুলি তুলে ধরেছেন মাত্র।

সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ তার আলোচনায় বলেন ‘৭৫ পরবর্তীতে ঘটনাসহ বইয়ের অন্য অধ্যায়গুলি আর একটু বিষদভাবে উল্লেখ করলে পাঠকদের মনের ক্ষুধা মিটতো এবং বইটি রহস্য দিয়ে শুরু হয়ে অনেক অধ্যায়ে তা অব্যাহত ছিল যা পাঠকদের মধ্যে কৌতূহলী হয়ে গ্রন্থের মধ্যে ঢুকতে এক প্রকার বাধ্য করবে বলে মনে হয়েছে।সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, যে সব ঘটনাগুলি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন লেখক ডঃ নবী, সেসব ঘটনা উপস্থিত প্রায় সবারই জানা, তবে এতবছর পর তা অনেকে ভুলে গিয়েছেন বা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব সত্য ঘটনাগুলি আবার সুন্দরভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরে লেখক ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

কবি সৈয়দ কামরুল বলেন ইতিহাস আশ্রিত ঘটনা তুলে ধরতে হলে তা নির্ভর করে যিনি লিখছেন তার উপর কারণ তিনি তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লিখছেন, তাই সত্য মিথ্যা বিচার করার ভার পাঠকদের।

সুতরাং পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে নিরপেক্ষভাবে লেখার কৃতিত্ব সেই লেখকদের হয় যারা কোন পক্ষ অবলম্বন না করে ঘটনাগুলি বলে যান।কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস বলেন, গ্রন্থের নামটি একটি হাইফেনের অভাবে বোঝা কঠিন, তারপরও বলব সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন ঘটনাগুলি তবে বিস্তারিত নয়। আরও ব্যাপকভাবে লিখলে পাঠকরা তৃপ্তি পেতেন, বিশেষকরে ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সাথে তিনি তার ব্যাক্তিগত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন যা বইটির রহস্যের সাথে রোমান্টিকতাও ধরা পড়ে। ‘৭৫এর পট পরিবর্তনের পড় উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে যাচ্ছেন কিন্তু প্রেমিকা যিনি স্ত্রী (ডঃ জিনাত নবী) হয়েছেন তিনি তখনো গত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই যানতেন না। যখন আকাশে উড়োজাহাজ ডানা মিললো তখন লেখক বলছেন তার সাথে কর্নেল তাহেরের গোপন যোগাযোগের কথা।

স্ত্রী তখন খুব মন খারাপ করে জানালা দিয়ে মেঘ দেখছিলেন, তিনি রাগে দুঃখে জাপানের পথে ব্যাংকক পর্যন্ত একবারও লেখকের দিখে ফিরেও তাকাননি । কারণ তারা প্রেম করার সময় পরস্পরকে কথা দিয়েছিলেন কেউ কোনদিন কোনকিছু গোপন করবেন না। অথচ কর্নেল তাহেরের সাথে গোপন যোগাযোগের কথাটি আগে থেকে  স্ত্রীকে না বলা তার কাছে মনে হয়েছে এটি চরম অন্যায়। এরকম সহজ সরল অনেক স্বীকারুক্তি লেখকের আছে, যা পাঠকদের আপ্লুত করে। 

সভাপতির ভাষণে ফাহিম রেজা নূর বলেন, ১৭টি অধ্যায় দিয়ে ১৭টি বই লিখতে পারতেন লেখক ডঃ  নূরুন নবী। কিন্তু তিনি ঘটনাগুলিকে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিচার বিশ্লেষণের পথ খুলে দিয়েছেন।

এ জন্য লেখক ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য এবং সেই সাথে সাপ্তাহিক বাঙালী বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করায় সম্পাদক কৌশিক আহমেদকেও ধন্যবাদ।

Advertisement