জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে তাদেরই মাঠে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলো জিম্বাবুয়ে, ২৯৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে। এ মাঠে রানতাড়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে হতো বাংলাদেশকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর এতো রান তাড়ায় ভাঙতে হতো নিজেদের রেকর্ডও। বাংলাদেশ করলো সেসব। লুক জঙ্গুয়েকে ছয়ের পর চার মেরে ম্যাচ শেষ করেছেন আফিফ। বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটেই।২০০৯ সালের পর বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে প্রথমবার ধরলধোলাই বাংলাদেশ সম্পন্ন করেছে ২ ওভার বাকি থাকতেই। এ জয় দিয়ে সিরিজে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পুরো ৩০ পয়েন্টও পেল বাংলাদেশ। এক নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান এখন ১৫ পয়েন্টের।২৯৯ রানের বড় লক্ষ্য। শুরুটা যেমন ভালো হওয়া চাই, তেমনই দিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। প্রথমে দেখেশুনে খেললেও (৬ ওভারে ২৬ রান) পরে আস্তে আস্তে রানের গতি বাড়িয়েছেন এই যুগল।

ওভারপ্রতি ছয়ের ওপর নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এরই মধ্যে তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৫২তম হাফসেঞ্চুরি, ৪৬ বলে। কিন্তু তামিমের ফিফটি ছোঁয়া ওভারেই উইকেট হারিয়ে বসেন লিটন।ওয়েসলে মাদভেরে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সাজঘরে ফিরিয়েছেন লিটনকে, তাতে ভাঙে ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ হন এই ওপেনার। ৩৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেন ৩২ রান।তারপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৬৯ রানের আরেকটি জুটি তামিমের। সেই জুুটিটি ভেঙেছেন লুক জঙউই। জিম্বাবুইয়ান পেসারের স্লোয়ার এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ সাকিব। ৪২ বলে একটি করে চার-ছক্কায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।৩৪ ওভার শেষে ২ উইকেটে ২০৪ রান ছিল বাংলাদেশের। ৯৬ বলে দরকার ৯৫। পানি পানের বিরতিতে যাওয়ার সময় সহজ জয়ের পথেই ছিল টাইগাররা।কিন্তু বিরতির পরই জোড়া আঘাত ডোনাল্ড তিরিপানোর। টানা দুই বলে সেঞ্চুরিয়ান তামিম আর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে ফেরান ডানহাতি এই পেসার।

৯৭ বলে ৮ চার আর ৩ ছক্কায় ১১২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা তামিম উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হওয়ার পর প্রায় একইভাবে আউট হন মাহমুদউল্লাহ (০)। হ্যাটট্রিক বল খেলতে উইকেটে আসেন সিরিজে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান সোহান।সোহান অবশ্য ওই বলটিতে একটুও নার্ভাস হননি। বরং বাউন্ডারিতে দূর করেন হ্যাটট্রিকের শঙ্কা। চোখ ধাঁধানো কিছু শট খেলে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন এরপরও।পঞ্চম উইকেটে মিঠুনের সঙ্গে গড়েন ৫৪ বলে ৬৪ রানের জুটি। যাতে মূল অবদান সোহানেরই (৩৯)। মিঠুন খেলেছেন ভীষণ ধীরগতিতে। একের পর এক শট খেলতে গিয়ে মিস করেছেন। একদমই আত্মবিশ্বাসহীন মনে হচ্ছিল তাকে।শেষ পর্যন্ত নিজেই যেন নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে যান মিঠুন। জিম্বাবুইয়ান স্পিনার মাদভেরেকে বড় শট খেলতে ডাউন দ্য উইকেটে এসেছিলেন, এবারও ঠিকমত ব্যাটে বলে করতে পারেননি। লংঅফে ক্যাচ হয়েছেন চাতারার।তবে এরপর আর দলকে কোনো বিপদে পড়তে দেননি সোহান-আফিফ। ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছেন তারা। সোহান ৩৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪৫ আর আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৭ বলে ৩ চার, এক ছক্কায় ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টসে জিতে শুরুতে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুর দিকে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন রেগিস চাকাভা ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি। প্রথম ৮ ওভারে কোনো সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে আক্রমণে এসেই দলকে উল্লাসের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন সাকিব।সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেটি মাহমুদউল্লাহর জন্য মাইলফলকের ম্যাচ। ২০০তম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন তিনি। বোলিংও করতে আসেন অষ্টম ওভারে। তার পরের ওভারেই আঘাত হানেন সাকিব। আউট হওয়ার আগে খেলা ১৯ বলে ৮ রান করতে পেরেছেন জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি ওপেনার মারুমানি।এরপর টেইলর ও চাকাভা ৪২ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে টেইলর ২৮ রানের ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহর শিকার হন। তবে চারে নামা মায়ার্সকে নিয়ে ফের রানের চাকা সচল রাখেন চাকাভা। তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি। দুজনের জুটিতে আসে ৭১ রান। মায়ার্সকে বোল্ড করে এই জুটিও ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরেকে (৩) সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন ইনজুরির কারণে প্রথম দুই ম্যাচ মিস করা মোস্তাফিজুর রহমান।

১৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা জিম্বাবুয়ের ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন চাকাভা। ছুটিছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথেও। কিন্তু তাসকিনের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। তবে এরপর থেকেই শুরু বার্ল ও রাজার লড়াই। দুজনেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ফিফটি। ৪৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৭তম ওয়ানডে ফিফটির দেখা পান ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা রাজা। অন্যদিকে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩৮ বলে ফিফটি তুলে নেন বার্ল। দুজনের জুটিতে আসে ১১২ রান, মাত্র ৮০ বলে।একসময় ৭ ওভারে ৭৯ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থাকা সাইফউদ্দিন ইনিংসের ৪৯তম ওভারে পর পর দুই বলে বার্ল (৫৯) ও ডোনাল্ড তিরিপানোকে বিদায় করেন। হ্যাটট্রিকের দেখা না পেলেও ওই ওভারের শেষ বলে টেন্ডাই চাতারাকে বোল্ড করে ফেরান ডানহাতি পেসার। এরপর ব্লেসিং মুজারাবানিকে (০) বোল্ড করে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দেন মোস্তাফিজ।বল হাতে ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ। ২ উইকেট গেছে মাহমুদউল্লাহর ঝুলিতে। ১টি করে উইকেট গেছে তাসকিন ও সাকিবের দখলে।

Advertisement