জো বাইডেন ও কমালা হ্যারিস : প্রগতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমালা হ্যারিসকে নিজের ডেপুটি হিসেবে বেছে নিয়ে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন দেখালেন, আমেরিকান রাজনীতির অলিগলিটা তিনি ভালোই চেনেন। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এমন একজনকেই বাছাই করতে হতো, যিনি দেশ ও দলের বিভক্ত সব অংশের কাছে পৌঁছতে পারবেন, যা বাইডেন নিজে করতে পারতেন না। মিসেস হ্যারিস এমনই একজন প্রার্থী। তাই প্রার্থী হিসেবে তাঁকে পছন্দ করাটা নিরাপদ, একই সঙ্গে ঐতিহাসিকও। নির্বাচিত হলে কমালা হ্যারিস হবেন দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ (কৃষ্ণাঙ্গ নিপীড়নবিরোধী অহিংস প্রতিবাদ) ও ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’ আন্দোলন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনতত্ত্ব বদলে যাওয়ার এই সময়ে হ্যারিসের মনোনয়নের অর্থ হচ্ছে অনেকটা ইতিহাসের ধনুককে ন্যায়বিচারের প্রতি বাঁকিয়ে আনা।

এই বার্তাটি তরুণ ভোটার, বিশেষ করে জো বাইডেনের প্রতি অনুরক্ত বর্ণের লোকদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মিসেস হ্যারিসের এই মনোনয়ন পাওয়া মানে দলের বামপন্থী বার্নি স্যান্ডার্সের ভক্তরা বাইডেনের ভক্ত হয়ে যাবেন এমনটা নয়। তবে হিলারিকে ভোট না দেওয়া সেই সব কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের কাছে তাঁদের গুরুত্ব ও স্বীকৃতির বার্তাটি কমালা হ্যারিস ঠিকই পৌঁছে দিতে পারবেন যে ডেমোক্র্যাটদের জন্য কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা মূল ভূমিকা পালন করতে পারেন। মিসেস হ্যারিস এমন এক আন্তর্জাতিতাত্ত্বিক আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করেন, যে দর্শন নিয়ে বসবাস করার ইচ্ছা পোষণ করেন দেশটির বেশির ভাগ মানুষ। তাই এই মনোনয়ন এক ভবিষ্যমুখও বটে। নির্বাচিত হলে বাইডেন হবেন আমেরিকার বয়স্কতম প্রেসিডেন্ট, সেখানে ৫৫ বছর বয়সী মিসেস হ্যারিস হচ্ছেন বাইডেনের চেয়ে দুই দশকের বেশি ছোট।

বয়স বিবেচনায় বাইডেনের এমন একজন ডেপুটি দরকার ছিল, যিনি দৌড়াতে পারেন। ২০১৭ সাল থেকে সিনেটরের দায়িত্ব পালন করে আসা কমালা হ্যারিস ওয়াশিংটনকে ভেতর থেকেই চেনেন। তিনি আমেরিকান কংগ্রেসে দেখাতে পেরেছেন যে তিনি তাঁর দক্ষিণপন্থী প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন প্রসিকিউটর হিসেবে তাঁর রেকর্ডগুলো নিয়ে যে ব্যাখ্যাই করা হোক, এগুলো তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য যথেষ্ট নয়। একজন ডিস্ট্রিক অ্যাটর্নি ও একজন স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি অপরাধের প্রতি নমনীয়—ট্রাম্প শিবির থেকে ওঠা এই অভিযোগ তাঁকে আলাদা করেই রাখে।

এই পরিস্থিতি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নোংরা নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছে। কভিড যত দীর্ঘায়িত হবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আগ্রাসী সমাবেশের ঘাঁটিগুলোকে উজ্জীবিত করতে ততই ব্যর্থ হবেন। তিনি আর অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের কথা বলতে পারবেন না। এরই মধ্যে জরিপগুলো বলছে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউস হারানোর পথে রয়েছেন এবং তাঁর দল সিনেটে পরাজয়ের আশঙ্কার মধ্যে আছে। তাই মরিয়া রিপাবলিকানরা মোক্ষম ও কঠিন আঘাত হানতে পারে। একই সঙ্গে সময় ও অর্থের দিক থেকে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে গভীর বিভাজনমূলক প্রচারণা চালানোর ক্ষমতাও ট্রাম্প শিবিরের আছে।

সুতরাং ট্রাম্পের বিরোধী পক্ষকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই সপ্তাহেই (বেশির ভাগই ভার্চুয়াল) ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কনভেনশন শুরুর কথা রয়েছে। সেখানে দলের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের পাশাপাশি বামপন্থী অনেক উঠতি তারকাও একই স্টেজ ভাগাভাগি করবেন। সুবিধা হলো, ধনী দাতাদের সমর্থন পাওয়া বাইডেন ও হ্যারিস দুজনই দলের মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা প্রগতিশীল মূল্যবোধের প্রতিও প্রতিশ্রুতিশীল। তাঁরা আমেরিকার জন্য ভয়াবহ এক ঝুঁকিপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন। নানা উপায়ে জো বাইডেনকে সে পথেই চলতে হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ভোটারও বুঝতে পেরেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মোটেও ভালো করছেন না। আবার বাইডেনও জনগণকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে তিনি খারাপ কিছু করবেন না। এখন মিসেস হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তাঁদের সেটাই বোঝাতে চাচ্ছেন যে তিনি ও তাঁরা (জনগণ) মিলে অনেক ভালো কিছু করতে পারেন।

সূত্র : সম্পাদকীয়, গার্ডিয়ান (ইউকে)

ভাষান্তর : আফছার আহমেদ

Advertisement