টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ফান্ডিংয়ে ব্যাপক পরিবর্তন : কমিউনিটি সংগঠনগুলোর অস্থিত্ব হুমকির মুখে

বিশেষ প্রতিনিধি : টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বিভিন্ন ফান্ড প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রয়োগ করা হচ্ছে কঠোর নিয়মাবলী। এরফলে স্থানীয় ছোট্টখাটো সংগঠনগুলোর অস্থিত্ব যেমন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে ঠিক তেমনি বড় বড় সংগঠনগুলোও কঠোর নিয়মের গ্যাড়াকলে পড়ে বঞ্চিত হচ্ছে ফান্ড থেকে।
ব্যাপক পরিবর্তন মেইন্ট্রীম গ্রান্টে :
কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত কমিউনিটি সংগঠনগুলোর মূলপ্রাণশক্তি হল মেইনস্ট্রীট গ্রান্ট। এবার মেইনস্ট্রীম গ্রান্টের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি গ্রান্ট প্রদানের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নাম দেওয়া হয়েছে লোকাল কমিউনিটি ফান্ড। মেইনস্ট্রীম গ্রান্টের জন্যে আবেদনের পর একটি কমিটি এর সিদ্ধান্ত নিত। কাউন্সিলর, কাউন্সিলের অফিসার এবং কোনো ফান্ডের জন্যে আবেদন করেনি থার্ড সেক্টরের এমন কোনো সংস্থার প্রধানকে নিয়ে এই কমিটি করা হত। আবেদনকারী সংগঠনগুলোকে দেওয়া যাবে কি না, সব কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে এই কমিটি সিদ্ধান্ত নিত। কিন্তু মেইনস্ট্রীম গ্রান্টের নাম পরিবর্তন করে লোকাল কমিউনিটি ফান্ড করার পাশাপাশি এ্যাসেসর বা নির্ধারকের ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় এবং অস্থানীয় যে কোনো সংগঠনের জন্যে। এখন আর আবেদন করতে হবে না। বিড করে নিতে হবে গ্রান্ট।
পূর্বে মেইনস্ট্রীম গ্রান্টের জন্যে শুধু স্থানীয় সংগঠনগুলো আবেদন করতে পারত, নতুন নিয়মে লোকাল কমিউনিটি ফান্ডের জন্যে বাইরের যে কোনো সংগঠন বিড করতে পারবে। এই বিডিংয়ে বাইরের বড় সংগঠনগুলোর কাছে স্থানীয় সংগঠনগুলোর মার খাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বিডিংয়ের পর এ্যাসেস বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও স্থানীয় সংগঠনগুলোর জন্যে আশঙ্কার আরেকটি পথ তৈরী করে দিচ্ছে কাউন্সিল। লোকাল কমিউনিটি ফান্ডের জন্যে এ্যাসেসর হিসেবে আগের মতো বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে কোনো কমিটি থাকবে না, স্বনির্ভর যে কোনো একটি সংস্থাকে দেওয়া হবে এই দায়িত্ব! এই এ্যাসেসর নিয়োগ নিয়েও লুকোচুরি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ইংলিশ একটি কোম্পানীকে এ্যাসেসর নিয়োগের জন্যে একজন কাউন্সিলর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই সংগঠনের সাথে তার নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলে কাউন্সিলের ওয়েব সাইটে ঘোষণা করেছেন তিনি। এই সংগঠনকে লোকাল কমিউনিটি ফান্ডের এ্যাসেসর নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও কাউন্সিলের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ্যাসেসর নিয়োগের বিষয়টি এখনো চুড়ান্ত হয়নি। আগামী বুধবার কেবিনেট মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর জানিয়েছেন। তবে এ্যাসেসর হিসেবে যেই নিয়োগ পাক না কেন, বিডিংয়ে বাইরের বড় বড় সংগঠনের কাছে স্থানীয় ছোট্টখাটো সংগঠনগুলো পাত্তাই পাবে না বলে ধারণা এই কাউন্সিলরেরও। ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ডের লোকাল কমিউনিটি ফান্ড বিডিং এবং এ্যাসেসরের সিদ্ধান্তের ফলে কোথায় যাবে কেউই টের পাবে না বলেও আশঙ্কা তার।
বিড করে অর্থ নিচ্ছে কারা আর কি সেবা দিচ্ছে?
বিডিং পদ্ধতির বিরূপ প্রভাব এরিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে টাওয়ার হ্যামলেটসের স্থানীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থার্ড সেক্টরের এক কর্মকর্তা জানালেন, কাউন্সিলের ফান্ডের জন্যে বিডিং পদ্ধতিতে উন্মোক্ত করে দেওয়া হয়েছে বাইরের সংগঠনগুলোর জন্যে। বাইরের সংগঠন হলেও টাওয়ার হ্যামলেটসে তাদের অল্পস্বল্প কার্যক্রম থাকলেই তারা কাউন্সিলের যে কোনো ফান্ডের জন্যে বিড করতে পারবে। এই তরিকায় মাই টাইম এক্টিভ নামে কেন্টের ব্রোমলির একটি সংগঠন ২০১৭ সালে প্রায় ২শ হাজার পাউন্ডের ফান্ড নিয়ে গেছে। ২০০৭ সাল থেকে এনএইএস প্রাইমারি কেয়ার ট্রাস্ট এবং টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক হেলথ বারার সাধারণ মানুষের হেলথ ট্রেইনিংয়ের জন্যে এই ফান্ড দিয়ে আসছে। বর্তমান চীফ এক্সিকিউটিভের পুরনো কর্মস্থল ব্রোমলীর মাই টাইম এক্টিভের টাওয়ার হ্যামলেটসে কার্যক্রম আছে বলে বিডিংয়ের মাধ্যমে তারা এই ফান্ড পেয়েছে। এছাড়াও টাওয়ার হ্যামলেটসের ইমিগ্র্যান্টদের ইংরেজী ভাষা শেখানোর জন্যে অর্থাৎ ইএসওএল কোর্সের জন্যে প্রায় ১শ হাজার পাউন্ড ফান্ড পেয়েছে হ্যাকনির একটি সংগঠন!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কাউন্সিলর এবং থার্ড সেক্টরের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বললেন, কঠোর পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে ফান্ড দিতে পারলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান তৈরীর পাশাপাশি অর্থের অপচয় বন্ধ হবে। বাইরের সংগঠনগুলো বিডিংয়ের মাধ্যমে ফান্ড নিশ্চিত করার পর স্থানীয়দের নিড বা চাহিদা কি সেটা জানান জন্যে তারা প্রাপ্ত ফান্ডের অর্ধেকের বেশি ব্যয় করে থাকে। অথচ স্থানীয় সংগঠনগুলো আগে থেকেই স্থানীয় কমিউনিটির চাহিদা জানা কিন্তু ফান্ডের অভাবে তারা কিছুই করতে পারছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানালেন, এখানেই শেষ নয়, কাউন্সিলের কঠোরতা আরো আসছে বলে মনে করছেন তারা। যে সব সংগঠন কাউন্সিলের প্রোপার্টিতে নাম মাত্র ভাড়া দিয়ে কমিউনিটির সেবা করে যাচ্ছে সেই সব সংগঠনগুলোর ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কাউন্সিল। ভাড়া বাড়ানোর নাম করে তাদের লিজও কমিয়ে আনা হচ্ছে। ভাড়া বাড়িয়ে তা পরিশোধের জন্যে কাউন্সিল থেকে নির্ধারিত একটি সময়ের জন্যে ঋনও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর হয় পুরো ভাড়া দিতে হবে। আ না কুলাতে পারলে হয়তো অফিস বা বভন ছেড়ে দিতে হবে বলেই আশঙ্কা করছেন তারা।
বিডিং সিস্টেম, এ্যাসেসরের পরিবর্তন, কমিউনিটি সংগঠনগুলোর ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ক্রমেই ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে কমিউনিটি সংগঠনগুলোর মধ্যে। ফান্ড থেকে বঞ্চিত হবার ভয়ে অনেকেই মূখ খুলতে চাইছেন না। তবে কেউ কেউ বলেছেন, দেয়ালে পিঠ টেকে গেলে যা হয়, তাই হবে। তাদের ক্ষোভ রাজনীতিকদের প্রতি। ক্ষুব্ধরা মনে করছেন, নির্বাহী মেয়র এবং কাউন্সিলরদের এড়িয়ে শীর্ষ অফিসাররা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে ফান্ড পাইয়ে দেবার আকাঙ্খায় থার্ড সেক্টরের এই ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসছেন। বিষয়গুলোতে রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মত তাদের।

উল্লেখ্য টাওয়ার হ্যামলেটসের ফান্ড তছরূপ নিয়ে সাবেক মেয়র লুতফুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে অপরাধ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি মেট পুলিশ।

Advertisement