ডিজিটাল প্রতারণা থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন (দ্বিতীয় পর্ব)

        ॥ ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী॥

ইমেইল এবং স্মার্ট ফোন পে : মডার্ন টেকনোলজি আমাদের একদিকে যেমন জীবনে স্বাচ্ছন্দ এনে দিয়েছে অপরদিকে এর সঠিক ব্যবহার না জানার জন্য আমাদের জীবনে অনেক সময় চলে আসে ভুগান্তি। প্রথম পর্বে লিখেছিলাম ডিজিটাল জালিয়াতি হোয়াটস অ্যাপ এবং ফেসবুক নিয়ে আজ লিখলাম ইমেইল এবং স্মার্ট ফোন থেকে জালিয়াত চক্র কিভাবে আমাদেরকে ভুগান্তির মধ্যে ফেলে।

ইমেইল :  আমরা প্রতি নিয়ত ইমেইল পাই মিলিয়ন পাউন্ড লটারি জেতার, আফ্রিকা থেকে আপনার একাউন্টের মাধ্যমে মিলিয়ন পাউন্ড টাকা পাঠানোর অনুরোধ, এমনকি ট্যাক্স অফিস থেকে টাকা ফেরত পাবেন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রতারকরা খুব কৌশলে আপনার ব্যাংক একাউন্টের নম্বর পাঠানোর অনুরোধ করে। ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিলেই বলে টাকা আপনার একাউন্টে টাকা চলে আসবে। ইউকেতে যারা বসবাস করেন তারা মোটামুটি এই জালিয়াত চক্র সম্পর্কে অভ্যস্ত। বাংলাদেশে এখন ইমেইলের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে এই জালিয়াত চক্রের ভরও বেড়েছে। প্রায়ই ফোন আসে ইমেইলে এই সকল চটকদার খবর পাবার তথ্য। সেদিন একজনকে অনেক করে বুঝলাম এগুলো ভুয়া। কিন্তু বেচারা নাছোড় বান্দা। তার স্বপ্ন মিলিয়ন পাউন্ড! সুতরাং আমার কথা শুনার তার সময় নাই। ইমেইল অনুযায়ী দুই মিলিয়ন পাউন্ড লটারির টাকা পাবার জন্য প্রথমে দুই হাজার ডলারের ড্রাফট পাঠাতে বলা হয়। তার পর আসে আইনজীবীর জন্য আরো চার হাজার ডলার, সবশেষে ব্যংকের আটকানো টাকা ছুটানোর জন্য চাওয়া হয় আরো ৬ হাজার ডলার। সর্বমোট ১২ হাজার ডলার পরিশোধ করার পর যখন আর কোন খবর আসেনা। তখন আমাকে আক্ষেপ করে বলে ভাই আপনার কথা শোনা উচিত ছিলো। আমি তখন তাকে বললাম, লন্ডন থেকে ২মিলিয়ন পাউন্ড লটারির টাকা তোমাকে কেন দিবে? তুমি লটারি কিনলেনা হঠাৎ করে তোমাকে একজন ইমেইল দিলো আর তুমি তার কথা বিশ্বাস করলে, আমার কথা শুনলেনা।

পরামর্শ : ইমেইলের একাউন্ট খুললেই মিলিয়নিয়ার হওয়া যায়না। আর কেউ ফাও কাউকে টাকা দেয়না। এই সকল ভুয়া ইমেইলের উপর ভর করে কোন প্রকার লেনদেন করবেননা। অন্যতায় নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন।

তাছাড়া আপনি আপনার ইনবক্সে দেখবেন আপনার অতিপরিচিত কেউ একজন আপনাকে একটি লিংক পাঠিয়েছে। ভুল করে এই সকল লিংকে ক্লিক করবেন না। এগুলো হ্যাকাররা সাধারণত আপনার ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করার জন্য পাঠায়। আপনি ক্লিক করলেই আপনার ইমেইলের সকল তথ্য চলে যাবে তাদের কাছে। ইমেইল খোলার আগে ইমেইলের লিংকটি ভালো করে দেখে নিবেন। ফিশিং ইমেইলের লিংকে কখনো ক্লিক করবেননা।

টেক্স অফিসের রিফান্ড, টিভি লাইসেন্সের নবায়ন অথবা গাড়ির এমওটির টাকা পরিশোধ করার জন্যও হ্যাকাররা সাধারণত ইমেইল করে। এই সকল ইমেইল না খোলাই ভালো আর যদি খোলে ফেলেন তাহলে কখনোই তাদের দেয়া লিংকে কোন প্রকার লেনদেন করবেন না। সন্দেহ হলে আপনি সরাসরি কোম্পানির ভ্যারিফাইড ওয়েবসাইট গিয়ে পরিশোধ করবেন।

আপেল অথবা স্মার্ট পে: আপেল অথবা স্মার্ট পের নামেও প্রতারক চক্র ইমেইল দিয়ে বলে আপনার একাউন্ট থেকে কেউ একজন অ্যাপ কিনেছে আর এজন্য ২/৩ দিনের মধ্যে আপনার একাউন্ট থেকে নিয়মিতভাবে চার্জ করা শুরু হবে। আপনি অর্ডার বাতিল করতে হলে একটি লিংক পাঠিয়ে বলা হবে এই লিংকে গিয়ে করতে হবে। যখনি লিংকে যাবেন আপনার ব্যাংক একাউন্টের সকল তথ্য চাইবে। আর তথ্য দেয়ার সাথে সাথে আপনার একাউন্ট হ্যাক করবে।

পরামর্শ: কখনোই আপেল অথবা স্মার্ট পের নাম পাঠানো কোন ইমেইলের লিংকে ক্লিক করবেন না। প্রথমে পাঠানো ইমেইল ঠিকানা চেক করুন আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। আপেলের ইমেইল এড্রেস সাধারণত আপেল ডট কম থাকে কিন্ত ঐ ইমেল এড্রেস দেখবেন অনেক লম্বা দেখেই মনে হবে এটি একটি ভুয়া ইমেইল এড্রেস। তাছাড়া সন্দেহ হলে আপনি আপেলের সাথে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলুন এবং তথ্য যাচাই করুন। মনে রাখবেন আপেল কখনোই লিংক পাঠিয়ে কোন অর্ডার ক্যানসেল কিংবা পরিবর্তনের কথা বলেনা।

লেখক:
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কন্ট্রিবিউটর, ব্রিট বাংলা২৪ এবং প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কেসি সলিসিটর্স, লন্ডন।

Advertisement