দেশের ৮৯ হাজার কারাবন্দির স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনা চেয়ে রিট

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা ৮৯ হাজার বন্দির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে।

রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র ও আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি প্রিজন্স) বিবাদী করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আজ রবিবার (১৭ মে) ই-মেইলের মাধ্যমে এই রিট আবেদন দাখিল করেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।

রিট আবেদনে দেশের সকল কারাগারে বন্দি ও কারারক্ষীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের আলোকে কী কী প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আদালতকে জানানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এর আগে কারাবন্দিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ জানতে চেয়ে গত ১৪ মে আইনি নোটিশ পাঠান ওই আইনজীবী। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব জানতে চাওয়া হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে আজ রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বকে প্রধান উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের সকল দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রতিনিয়ত নির্দেশনা জারি করছে।

গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছুটির আদলে মূলত লকডাউন পালন করছে। সকল পর্যায়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা কারাবন্দিদের অবস্থা খুবই নাজুক। দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে।

আইনি নোটিশে বলা হয়েছিল, সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, দেশের ৬৮টি কারাগারে ৪১ হাজার ২৪৪ জন বন্দির থাকার কথা। কিন্তু সেখানে আছে ৮৫ হাজারের বেশি বন্দি। কারাভ্যন্তরের এই অবস্থায় বন্দিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বস্তুত অসম্ভব। ইতিমধ্যে ২৩ জন কারারক্ষী এবং দুইজন বন্দির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত ১২ মে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে, করাগারের সংকীর্ণ জায়গা সংক্রামক ব্যাধির উর্বর ক্ষেত্র। অধিকন্তু কারাবন্দিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী তাদের চলতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে করাবন্দিদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায়।

নোটিশে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হাজার হাজার বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও প্রায় তিন হাজার বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এটি অবশ্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এটি যথেষ্ট নয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কারাবন্দি, কারারক্ষী এবং কারা চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন কারাগার ও সংশোধনাগারে কারাবন্দিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং মুক্তির বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপ জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটিশে।

Advertisement