নতুন চাঁদ দেখার আনন্দ

মো: রেজাউল করিম মৃধা।। রমজানের নতুন চাঁদ দেখার আনন্দ আমাদের সকলের মাঝেই বিদ্যমান আছে।কি ছোট কি বড় ।
চাঁদ দেখে রোজা রাখা এবং চাঁদ দেখে রোজা না রাখা। চাঁদ দেখে ঈদ আনন্দে মেতে উঠা। তাই অন্য সব মাসের চেয়ে রমজানের চাঁদ দেখার গুরুত্ব সব চেয়ে বেশী।
চাঁদ দেখা বা চাঁদ উঠা একটু এ দিক সেদিক হলেই রমজান মাস ছোট বা বড় হয়ে যায়। চাঁদের উপর ভিত্তি করেই রমজান মাস ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। আরবী ১২ মাসই চাঁদের উপর নির্ভরশীল। তবে সব মাসের হিসেব চাঁদ দেখা কমিটি বা জ্যোতিষি ছাড়া সাধারন মানুষের তেমন গুরুত্ব নেই।
কিন্তু পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ বিশ্বের প্রতিটি মুসলমান গুরুত্বের সাথে দেখেন। আর না দেখলেও শুনে নেন রমজানের চাঁদ উঠেছে কিনা? আগামী কাল রোজা হবে কি না? এই চাঁদ উঠলে আনন্দে সবাই আত্বহারা হয়ে উঠে।
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য মহত্তের মাস। রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। এ মাসেই পবিত্র কোরয়ান নাজেল হয়েছে।লাইলাতুল কদর নাজিল হয়েছে। হাদিস মোতাবেক সবচেয়ে রহমতের মাস এই পবিত্র মাহে রমজান মাস।কবর বাসীদের কবর আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আর আজাবের ফিরেস্তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এ মাসে বড় নিয়ামত খাবারের কোন হিসাব নেওয়া হবে না। এক জন রোজাদার কে ইফতার করালে একটি রোজার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।আর দান করলে ৭ থেকে ৭০ গুন বা আরো বেশী সওয়াব দেওয়া হয়।
রোজার সময় ইফতারের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। পুরানো ঢাকার ইফতারে আছে বিশেষ ঐতিহ্য। এই ইফতারের ঐতিয্য এখন ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন শহরে এমনকি বিশ্বের প্রতিটি দেশে যেখানে অবস্থান করছেন বাংলাদেশীরা সেখানেই এই ইফতারের ঐতিয্য বহন করছেন।
ইফতারের বিভিন্ন অনুষ্টান, পার্টির আয়োজন, এছাড়া নিজেদের ঘরে কিছু না হলেও ইফতারের একটু ভিন্ন আয়োজন আছে সর্বত্র সব মুসলমান বা রোজাদারদের ঘরে ঘরে। রোজার মাসে সকল পরিবারেই একটু বড় বাজেট থাকে। তাই এ মাসে ইফতার বা রাতের খাবার এবং সেহেরীতে খাবারের ধরন থাকে ভিন্ন অন্য মাসের চেয়ে আলাদা ।
রোজা শেষ হলেই মহা খুসির সেই দিন ঈদ। ঈদের আমেজ প্রতিটি ঘরে ঘরে। রোজা শুরু হতে না হতেই শুরু হয় ঈদের কেনা কাটা। রোজার শেষের দিকে কেনাকাটা বেড়ে যায়। দোকানগুলিতে থাকে উপচে পরা ভীড় । চাঁদ রাতের কথা তো আপনাদের সবার জানা। সারা রমজানে বা সারা বছর যা বিক্রী হয় তার চেয়ে বেশী বিক্রী হয় এক রাতে রোজার শেষে ঈদের আগের রাত। তাই এরাত কে চাঁদ রাত বলা হয়।
রমজানের শেষে চাঁদ দেখার জন্য কৌতুহল সবার মাঝে। কাল ঈদ এই যে আনন্দ সে আনন্দ সত্যই প্রতিটি মানুষকে উৎফল্লিত করে। কি ধনী, কি গরীব, কি মধ্য শ্রেনী, পেশাজীবি, শ্রমজীবী, শিক্ষক, তাঁতী , মুদি, মুজুর, জেলে, কৃষক , ছোট বড় সকল মানুষের মনে।আর এ আনন্দধরে রাখার জন্য কেউ কেউ ছুটে যান গ্রামের বাড়ী আর যারা যেতে পারেন না মনের কস্ট বুকে চেপে রাখেন ফেলেন দীর্ঘ শ্বাস।
রমজানের চাঁদ দেখার আগ্রহ প্রতিটি মুসলমানের। পৃথিবীর এর প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সময়ের ব্যাবধানে চাঁদ এক দিন আগে বা পরে দেখা যায়। এ জন্য ঈদ ও এক দিন অাগে বা পরে হয়ে থাকে। বর্তমানে আধুনিক যুগে সোস্যালমিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এক মূহূর্তে। তারপরও কে কার আগে খবর পেয়েছে। সেই খবরটি এক জন বা এক বন্ধু অন্য বন্ধু কে পৌঁছে দিবে। টেলিভিশন সহ সকল মিডিয়ায় প্রচার করবেন খোস আমদেদ মাহে রমজান। ছড়িয়ে যায় চাঁদ দেখার খবর।
কিন্তু ছোট বেলায় দেখেছি। যখন মিডিয়া ছিল না। শুধু মাত্র রেডিও ছিল। সেই রেডিওর খবর শোনার জন্য। চাঁদ দেখার খবর শোনার জন্য সন্ধ্যা বেলায় মসজিদে অথবা গ্রামের মোল্লা বা মাতব্বর বা ইমামের নিকট হাজির হতেন। আর ইমাম চাঁদ দেখার জন্য খোলা জায়গায় যেতেন সাথে অনেকেই যেতেন । সকলের দৃষ্টি থাকতো আকাশের দিকে। যে অংশে চাঁদ যাবে সেই অংশের দিকে। যখন চিকন এবং শুরু এক ফালি চাঁদ দেখা যায়।সকলে আনন্দে আত্ব্যহারা হয়ে উঠেন। আর হুজুর চাঁদ দেখার পর এক লম্বা মোনাজাত করতেন।চাঁদ দেখার আনন্দ আমাদের সবাইকে আনন্দিত করুক। বয়ে আনুক অনাবিল সুখ এবং শান্তি। কবি বলেন “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ” রমজান মোবারক ও ঈদ মোবারক।

লেখক : মোহাম্মদ রেজাউল করিম মৃধা, সিনিয়র ক্যামেরা পার্সন, চ্যানেল এস এবং ব্রিটবাংলার কমিউনিটি এডিটর।

Advertisement