নোরা শরীফ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনজীবি পাঠাতে সাহায্য করেছিলেন

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং মহীয়সী নারী ব্যারিস্টার নোরা শরীফের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে,২ডিসেম্বর রবিবার,সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনে একটি হলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি , যুক্তরাজ্য আয়োজন করে এক স্মরণ সভার।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক জামাল আহমেদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনের নব নিযুক্ত হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের হাই কমিশন লন্ডনের সহকারী হাই কমিশনার জুলকার নাইন,,যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মিলাদ এবং দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা কুতুব উদ্দিন। এরপর সঞ্চালক জামাল খান ব্যারিস্টার নোরা শরীফের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরেন সকলের সামনে। তিনি বলেন ব্যারিস্টার নোরা শরীফ জন্মসূত্রে ছিলেন আইরিশ, জন্ম আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে।

সম্ভ্রান্ত পরিবারে । বাবা শ্যন এফ মারে (Sean F. Murray) আইরিশ কারেন্সি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৬ বোন, ৩ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। নোরা শরীফ লিংগুইস্টিক্স-এ গ্র্যাজুয়েশন করেন ডাবলিন, তারপর কৃষি বিষয়ে পড়তে গিয়েছিলেন ফ্রান্সে। সেখান থেকে লন্ডনে আসেন ব্যারিস্টারি পড়ত, এখানেই সুলতান মাহমুদ শরীফের সাথে পরিচয়, ছয় দফা আন্দোলনের সময়। সংশ্লিষ্টতা বাড়তে থাকে বাঙালিদের সব রকমের আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে।

সে সময় বাঙালিদের আন্দোলন সংগ্রামের যত প্লাকার্ড, ফেস্টুন একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় বহন করতে হত তা সবই করতেন তিনি ।

নোরা শরীফ , সুলতান মাহমুদ শরীফের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন ১৯৬৮-এর ৩০ সেপ্টেম্বর।১৯৭২-৭৪-এ, স্বাধীন বাংলাদেশে নোরা শরীফ তিন বছর কাটিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে; একেবারে পুরোপুরি একজন বাঙালি নারী হিসেবে। ল্যাটিন ভাষা জানতেন। দক্ষ ছিলেন আইরিশ, ইংরেজি, বাংলা, ফ্রেঞ্চ ও ইটালিয়ান ভাষাতেও।

বাঙালিদের সঙ্গে তিনি বাংলাতেই কথা বলতেন। বাসায় ও বাইরের প্রায় সব অনুষ্ঠানে শাড়ি পরতেন তিনি।’৭১-এ আমাদের যেসব বিদেশী বন্ধু বাংলাদেশের বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়ে সাহস, উৎসাহ, প্রেরণা দিয়েছেন, সরাসরি মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন কেউ কেউ, তাদের প্রায় সবাইকে সম্মাননা দিয়েছেন, ২০১২-এর ২৭ মার্চ, ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের বন্ধু হিসেবে নোরা শরীফ এ সম্মাননা গ্রহন করেন।

প্রধান অতিথি বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনের নব নিযুক্ত হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম, লন্ডনে ব্যারিস্টার নোরা শরীফ কে নিয়ে একটি ফাউনডেশন গঠন করার প্রস্তাব করেন যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নোরা শরীফ সম্পর্কে আরও গভীর ভাবে জানতে পারে।

প্রধান বক্তা সাংবাদিক কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন নোরা শরীফ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনজীবি পাঠাতে সাহায্য করেছিলেন,যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবীতে বিপুল কাজ করেছেন এবং যুক্তরাজ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ,সুলতান মাহমুদ শরীফ এবং নোরা শরীফ দম্পতির দুই কন্যা রাজিয়া এবং ফউজিয়া,যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক নইমুদ্দিন রিয়াজ,সহ সভাপতি জালাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সাজ্জাদ মিয়া, সোরাব আলী,শাহ শামিম,আসম মিসবা,সায়েদ আহমেদ সাদ, হুসনা মাতিন, আঞ্জু মান আরা আঞ্জু , খালেদা কোরেশী, সাজিয়া স্নিগ্ধা , আলতাফুর রহমান মুজাহিদ, খলিল কাজি, আনসার আহমেদ উল্লাহ, লোকমান হোসেন, লুতফুর রহমান সায়েদ, ইকবাল হোসেন, এনামুল হক এনাম, শাহ বেলাল, রুবি হক , আব্দুল বাসির, মাশুদুল হক রুহুল, কাজি হুসেন, বাবুল হোসেন, ডঃ ফয়জুর রহমান, বাবুল খান, আমিনুল হক জিলু, আব্দুল হেলাল চৌধুরী সেলিম, মাহমুদ আলী, ফয়সল আহমেদ, কামরুল ইসলাম , সজিব ভুঁইয়া, গোলাব আলী,জুবায়ের আহমেদ, মনিরুল ইসলাম মঞ্জু, ঊর্মি মাজ হার,বাংলা টিভির সামাদুল হক, মজিবুল হক মনি, মজুমদার আলী, কবি নজ্রুল, এহসান ,ফারুক আহমেদ, শাহিন আকতার, নাজমা হুসাইন,নাসিমা রহিম, শাহিন নাহার,সালমা আকতার,রোজি, শাহনাজ সুমি, মিতা কামড়ান, মুনিরা মলি, মিফাতুল নূর, মাহমুদা মনি, পুষ্পিতা, জোসনা , জানিফার, স্মৃতি আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের শাখা সংগঠন সহ কমিউনিটির সর্ব স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য নোরা শরিফ ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৭০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান। নোরা শরীফ এবং সুলতান মাহমুদ শরীফের দুই মেয়ে রাজিয়া, ফওজিয়া। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত।

Advertisement