পাকিস্তানে নির্বাচন, আটঘাট বেঁধেছে সেনাবাহিনী, কতটা সফল হবে?

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ক্ষমতার পালাবদলের সন্ধিক্ষণে পাকিস্তান। কাল বুধবার দেশটির সাধারণ নির্বাচন হবে। দেশের পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করতে ভোট দেবে জনগণ। কিন্তু সত্যিই কি জনগণের রায়ে নেতৃত্ব ঠিক হবে?

পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ও নিজের দলের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, নির্বাচন ঘিরে কট্টরপন্থীদের সরব হওয়ার সুযোগ দেওয়া কিংবা ইমরান খানের প্রতি সেনাবাহিনীর সুনজর—এসব ঘটনাপ্রবাহের কারণে ওই প্রশ্ন উঠছে। এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের সন্দেহ এতটাই চাউর হয়েছে যে সেনাবাহিনীকে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হয়েছে—নির্বাচনে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু নির্বাচনের তিন দিন আগে সেনবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ায় জনমনে হস্তক্ষেপের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে—পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে আসলেই আটঘাট বেঁধে নেমেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু কাজটা কতটা সরল?

গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের ফল বলছে, পাকিস্তানে ভোটের আগাম হিসাব-নিকাশ করাটা বেশ কঠিন। কারচুপি করে হয়তো কোনো দলকে জিতিয়ে আনা যায়, কিন্তু নির্বাচনের ফল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না।

ইমরান খানের প্রতি সেনাবাহিনীর সুনজর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০০২ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-কিউ) ১২৪ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ওই সময় ক্ষমতায় ছিলেন সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফ। তাঁর সমর্থন ছিল এই দলটির প্রতি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। তারপরও ক্ষমতাসীন সেনাশাসকের দল জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। পরে পিএমএল (কিউ) জোট সরকার গঠনে বাধ্য হয়। আর সামরিক উর্দি ছেড়ে প্রেসিডেন্ট হন মোশাররফ। ওই নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৯৪টি আসন লাভ করে। পিপিপির এই সাফল্যে বিশ্লেষকেরা এমনকি পিপিপির নেতারাও অবাক হয়েছিলেন।

ইসিপির তথ্য বলছে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিপিপি ১২৫টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনের প্রচার চালানোর সমাবেশে বোমা হামলায় নিহত হন পিপিপির তৎকালীন প্রধান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। নির্বাচনে জনগণের সহানুভূতি পেয়ে দলটি এককভাবে সরকার গঠন করছে—এটা ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ পিপিপি। আর চমক হিসেবে আবির্ভূত হলো নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)। দলটি ৯২টি আসনে জয়ী হয়।

আর সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে নির্বাচন বিশ্লেষক-পর্যবেক্ষকসহ অনেকেই ভেবেছিলেন, ৯০ থেকে ১০০ আসনে জয় পাচ্ছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। কিন্তু ফলাফলের পর দেখা গেল, পিটিআই ৩৫ আসনে জয় পেয়েছে। নওয়াজের দল পিএমএল-এন ১৬৬ আসনে জয় পায়।

সর্বশেষ এই তিন সাধারণ নির্বাচনের ফলের প্রবণতা বজায় থাকলে এটা বলা যেতে পারে—সেনাবাহিনী ইমরানকে নির্বাচনে জিতিয়ে এনে ক্ষমতায় বসানোর যে পরিকল্পনা করছে, সেটা বাস্তবায়ন করা একেবারে সরল কোনো কাজ নয়। সেটা ২০০২ সালে পারভেজ মোশাররফ ভালোই টের পেয়েছেন। ক্ষমতায় থেকে কারচুপি করিয়েও পিএমএল-কিউকে এককভাবে ক্ষমতায় আনতে পারেননি।

দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে আছেন নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। লন্ডনে স্ত্রীকে মৃত্যুশয্যায় রেখে দেশে ফিরেছেন নওয়াজ। গত বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণার কয়েক মাস পর তাঁকে নিজের দলের প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন আদালত। আর আদালতের এই রায়ে দেশটির রাজনীতির সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় সেনাবাহিনীর ভূমিকা আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই বিষয়গুলো নওয়াজের পক্ষে যাবে বলে মনে করা হয়। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে নওয়াজের প্রতি এই আচরণ ভোটের রাজনীতিতে তাঁর দলের জন্য ‘শাপে বর’ হতে পারে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রভাব খাটানোর নানা আলামত পাওয়া যাচ্ছে। যায়, সেনাবাহিনী যখন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে  
এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, ইমরান ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পিএমএল-এন কিংবা পিপিপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করবেন না। কারণ, এই দল দুটির সঙ্গে জোট করলে তাঁর ক্ষমতায় যাওয়ার যে উদ্দেশ্য, ‘নতুন পাকিস্তান’ গড়ার যে লড়াই, সেটাই ব্যাহত হবে। তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট করতে তাঁর আপত্তি নেই।

সব মিলিয়ে বলা যায়, সেনাবাহিনী আসলে ইমরানকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজালেও তাদের খেলার শেষ অংশ বোধ হয় এখনো বাকি। আর সেটা দেখা যাবে নির্বাচনের ফলাফলের পর। সবকিছু পরিকল্পনামতো না হলে হয়তো নতুন কোনো খেলা শুরু করবে তারা। আপাতত নির্বাচনের দিকেই মনোযোগ তাদের।

 

Advertisement