পাকিস্তানে পরমাণু বোমার জনক বলে পরিচিত ড. আবদুল কাদের খান আর নেই (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। আজ রোববার রাজধানী ইসলামাবাদে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি সহ বিভিন্ন রাজনীতিক শোক প্রকাশ করেছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তরফ থেকে কোনো শোকবার্তা পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, ড. আবদুল কাদের খানের এই বিদায় জাতির জন্য এক বড় ক্ষতি। রেডিও পাকিস্তানকে উদ্ধৃত করে অনলাইন ডন বলছে, সকালের দিকে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকলে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পিটিভি বলছে, তার ফুসফুসে সমস্যা ছিল। হাসপাতালে স্থানান্তরের পর এই পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। তিনি বলেছেন, ১৯৮২ সাল থেকে ড. আবদুল কাদের খানকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তার ভাষায়, জাতি রক্ষায় তিনি আমাদের পরমাণু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়তা করেছেন। কৃতজ্ঞ এই জাতি কখনো তার এসব সেবার কথা ভুলবে না। জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতা শেহবাজ শরীফ বলেছেন, জাতি সত্যিকারের একজন হিতকারীকে হারিয়েছে। তিনি হৃদয় ও মন দিয়ে মাতৃভূমির সেবা করেছেন। ড. খানের এই চলে যাওয়া দেশের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা সবসময় কেন্দ্রে থাকবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খাত্তাক বলেছেন, তার এই মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত এবং তার এই চলে যাওয়া এক বড় ক্ষতি। তিনি আরো বলেছেন, জাতির জন্য তিনি যা করেছেন তা চিরদিন পাকিস্তান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে সমুন্নত করতে তার অবদানের কাছে জাতি গভীরভাবে ঋণী।
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আসাদ উমর বলেছেন, ড. আবদুল কাদের খান দেশকে অজেয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই চলে যাওয়ায় তার আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করেছেন মন্ত্রী আসাদ উমর।
উল্লেখ্য, ভারতের ভুপালে ১৯৩৬ সালে জন্ম ডক্টর আবদুল কাদের খানের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করে চলে যান পাকিস্তানে। গত মাসে ড. আবদুল কাদের খান অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বা তার মন্ত্রীপরিষদের কোনো সদস্য তার শারীরিক অবস্থার কোনোই খবর নেননি। রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) মতে, করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়েছিল ড. আবদুল কাদের খানের। এরপর গত ২৬ শে আগস্ট খান রিসার্স ল্যাবরেটরিজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পর তাকে ছাড় দেয়া হয়।
এখানে আরো উল্লেখ করার বিষয় হলো, ২০০৪ সালে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক স্ক্যান্ডালের কেন্দ্রে চলে আসে আবদুল কাদের খানের নাম। নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটতে থাকে তখন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন তখনকার সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। তার অভিযোগ, ড. আবদুল কাদের খান পারমাণবিক সামগ্রীর একটি দুর্বৃত্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। অর্থাৎ তিনি পারমাণবিক প্রযুক্তি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। জেনারেল পারভেজ মোশাররফের এ ঘোষণার অল্প পরেই আবদুল কাদের খানের স্বীকারোক্তিমূলক একটি রেকর্ডেড বক্তব্য প্রচার করা হয়। এতে তিনি অভিযোগের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে নেন।
আবদুল কাদের খান পাকিস্তানে শ্রদ্ধা সহকারে মহসিন-ই-পাকিস্তান, অতি জনপ্রিয় ড. এ. কিউ. খান হিসেবেও পরিচিত। তিনি একজন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং একজন ধাতুবিদ্যা প্রকৌশলী। পাকিস্তানের সমন্বিত পারমাণবিক বোমা প্রকল্পের জন্য এইচইইউ ভিত্তিক গ্যাস-সেন্ট্রিফিউস ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে গণ্য করা হয় তাকে। ১৯৭৬ সালে, তিনি খান গবেষণা পরীক্ষাগারসমূহ (কেআরএল) প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০১ সালে, অবসরে যাওয়া পর্যন্ত তিনি একজন সাধারণ-পরিচালক এবং ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী ছিলেন এবং অন্যান্য বিজ্ঞান প্রকল্পে তিনি একটি প্রাথমিক এবং প্রাণোদ্দীপক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পারমাণবিক বোমা প্রকল্পে অংশগগ্রহণকারী ছাড়াও, তিনি আণবিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা, বাস্তব মারটেনসাইট এবং তার সমন্বিত ঘনীভূত এবং উপাদান পদার্থবিদ্যাতে অবদান রাখেন।