ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: নতুন নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে হংকংয়ের ওপর। শহরটির রাস্তায় বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশে সয়লাব। সেনাবাহিনীকে সংঘাতের মুখোমুখি হতে প্রস্তাব থাকার নির্দেশ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পাল্টা হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, বেইজিংয়ের এমন উদ্যোগ অসন্তোষজনক। তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজ বুধবার হংকংয়ে পূর্ব পরিকল্পিত বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে এরই মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
এমন অবস্থায় হংকং ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে কোনো অবরোধ দিতে যাচ্ছেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমরা কিছু একটা করছি। আমি মনে করি আপনারা দেখবেন এটা খুব আকর্ষণীয়। কিন্তু এটা নিয়ে আজই আমি কথা বলবো না। তিনি বলেন নি অবরোধ দিতে যাচ্ছেন নাকি ওই শহরের জন্য বিশেষ বাণিজ্য সুবিধায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। তবে প্রেস সেক্রেটারি কিলি ম্যাকইনানি বলেছেন, যদি চীন হংকংকে তাদের দখলে নিয়ে নেয় তাহলে কিভাবে তা অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র থাকে তা প্রত্যক্ষ করা খুব কঠিন হবে। চীনের এমন উদ্যোগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব অসন্তুষ্ট। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, বিস্তারিত এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ প্রকাশ করা হতে পারে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দিয়েছেন, সশস্ত্র সংঘর্ষের জন্য অবশ্যই সেনাবাহিনীকে তার প্রস্তুতি বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি এমন ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই জোরালো হুঁশিয়ারি দেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হংকংয়ের নাম উল্লেখ না করেই সেনাবাহিনীকে সশস্ত্র সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। হংকংয়ে গ্যারিসনে থাকা পিপলস লিবারেশন আর্মির কমান্ডার একদিন আগে বলেছেন, তার সেনারা ওই শহরে চীনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত এবং জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে সমর্থন করে। এখানে মোট সেনা সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সেনা কমান্ডারের এমন মন্তব্যের একদিন পরেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ওই মন্তব্য করেন।
বুধবার পৃথক একটি বিতর্কিত বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে হংকংয়ে। এ জন্য সকাল সকাল পুলিশ বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। ওই বিতর্কিত বিলে চীনের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে উপহাস করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। দলে দলে মোতায়েন হয়েছে দাঙ্গা পুলিশ। তারা বিভিন্ন জনকে রাস্তায় থামিয়ে তাদের তল্লাশি করছে। প্রধানত বিপুল সংখ্যক এমটিআর ট্রেন স্টেশনের বাইরে তারা এই কাজটি করছে। মঙ্গলবার থেকে লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ভবনের চারদিকের সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফুটপাথে শুধু যাদের কাজে যাওয়ার পাস আছে, তারা যেতে পারছেন, অন্যদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বিক্ষোভের আয়োজনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণকে পানির ¯্রােতের মতো বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে স্বীকার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়ার বড় রকমের ঝুঁকি ছাড়া জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে এই বিতর্ক বন্ধ করা খুব কঠিন হবে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, আপনি অন্তত একটি বিবৃতিও তো দিতে পারেন।
স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় পুলিশ বলেছে, এ সময়ের মধ্যেই তারা পেট্রোল বোমা সহ বেশ কয়েকজন টিনেজার ও যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ফেসবুকে বলেছে, বিক্ষোভকারীরা রেল লাইনের বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করে। তারা ট্রাফিক পয়েন্টের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। এরপর আবর্জনার স্তুপে আগুন ধরিয়ে দেয়। জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ক প্রস্তাবিত আইনে একজন মানুষ তখনই অপরাধ করবেন, যদি তিনি এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অবমাননাকর অবস্থা নেন। যেমন জাতীয় সঙ্গীতের কথা পরিবর্তন করেন, সুর পাল্টে ফেলে অথবা তা অসম্মানজনক উপায়ে পরিবেশন করেন। এমন অপরাধ করলে আর্থিক জরিমানাসহ সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল হবে।
প্রস্তাবিত ওই আইনের ওপর ভোট হওয়ার কথা রয়েছে ৪ঠা জুন। তবে গত সপ্তাহ থেকে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষ করে চীনের ঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে গত রোববার হংকংয়ের রাজপথে নেমে পড়েন হাজার হাজর মানুষ। তাদেরকে মোকাবিলা করতে মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। হংকংয়ের বেশির ভাগ মানুষ, ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং পশ্চিমারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীনের প্রস্তাবিত এসব আইন বা বিল চাপিয়ে দেয়া হলে তাতে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের ইতি ঘটবে। বিশেষ করে চীনের নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্টদেরকে হংকংয়ের ভিতরে কাজ করতে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে বড় রকমের উদ্বেগ রয়েছে। আশঙ্কা করা হয়, যারাই বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ভিন্ন মত পোষণ করবে তাদের বিরুদ্ধেই দমনপীড়ন চালানো হবে।
ওদিকে ফক্স নিউজ চ্যানেলকে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলো বলেছেন, বেইজিংয়ের কর্মকান্ড অত্যন্ত বিরক্তিকর। তিনি ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে আলাদাভাবে বলেছেন, খোলামেলা বলছি চীন বড় একটা ভুল করছে। তিনি বলেন, হংকং বা মূল চীনা ভূখন্ডে যদি কোনো মার্কিন কোম্পানি থাকে তাহলে তা প্রত্যাহার করে আনা উচিত ওয়াশিংটনের। প্রত্যাহার করা উচিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা।
ওদিকে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বলেছেন, চীনের প্রস্তাবিত আইন হংকংয়ের স্বাধীনতার কোনো খর্ব হবে না। এ নিয়ে অন্য দেশের মাথা গলানোর কোনো অধিকার নেই।