‘প্রতিটি ব্যাংকে এখন পুঁজির ঘাটতি’

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের অর্ধেকই সরকারি ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকিং কমিশন গঠন প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করে সিপিডি।

গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকিং কমিশন গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে আজ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গুটি কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি দেশের ব্যাংকিং খাত। তিনি বলেন, আমরা নাগরিকরা অসহায় আতঙ্ক নিয়ে একটা ভয়ংকর ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। এই পরিস্থিতির বিভিন্ন সূচক আপনারা ইতিমধ্যেই জানেন।

এটা শুধু মন্দঋণের বিষয় নয়। শত প্রতিশ্রুতির পরও মন্দঋণ অব্যাহত রয়েছে। এর নিচে লুকিয়ে রয়েছে আরও গল্প। প্রতিটি ব্যাংকের এখন পুঁজির ঘাটতি, সঞ্চিতির ঘাটতি, তাদের প্রকৃত বাণিজ্যিক লাভজনকতার ঘাটতি। এখন ব্যাংকে মানুষের টাকা রাখার পরিমাণ ক্রমাণ্বয়ে কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সুদের সমস্যা আছে, জমার ক্ষেত্রে সুদের সমস্যা আছে। কি হারে, কোন সুদে টাকা বিনিয়োগ করবো, তাতে সমস্যা আছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে সমস্ত সুবিবেচিত নীতিমালা দেয়া হয়েছে, তার প্রকাশ্য বরখেলাপ ঘটছে। এই বরখেলাপগুলি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেআইনি কার্যকলাপে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকেও এখানে যুক্ত হতে হচ্ছে।

ড. দেবপ্রিয় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই যে ব্যাপারগুলো আমরা দেখছি, শুনছি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাগজ থেকে দেখছি- গুটিকয় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের হাতে ব্যাংকিং সেক্টর জিম্মি হয়ে গেছে। এই পরিস্থতি যখন বিকাশ লাভ করছিল, তখন আজ থেকে ৮ বছর আগে হলমার্ক কেলেংকারির সময় থেকে আমরা এ কথা বলে আসছি। তিনি বলেন, এখন এ ব্যাপারে যখন কিছু অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তখন আমরা এতে অত্যন্ত খুশি, প্রীত এবং সন্তুষ্ট। আমরা জেনে উৎসাহিত বোধ করেছি, এই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে আশীর্বাদ এসেছে, সম্মতি এসেছে। এবং আমরা মনে করি অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে আমাদের সামনে এসেছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংকিং কমিশনের মেয়াদ হওয়া উচিত সাময়িক। সমস্যা চিহ্নিত করার পর সমাধানের উপায় নির্ধারণ করে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে সুপারিশ দেবে কমিশন। এই কমিশন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, কারা দায়ী তা চিহ্নিত করে এসব সংকট উত্তরণের উপায় নির্ধারণের করবে। ব্যাংকিং কমিশন গঠন হবে একটা অভুতপুর্ব সুযোগ। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাক ফেরানোর সুযোগ আসতে পারে এতে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং কমিশন শুধু ব্যাংকগুলোকে দেখবে না, সরকার যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তাও দেখবে। এছাড়া ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে কি না সে বিষয়েও প্রতিবেদন দেবে।

Advertisement