বাংলাদেশ ও ভারতে মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে চীনের এআইআইবি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে চীনের এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। ব্যাংকটির অর্থায়নে হওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয়দের বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। যদিও ব্যাংকটির দাবি, তারা সামাজিক ও পরিবেশের মান ধরে রাখতে সচেষ্ট। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান একদল অধিকারকর্মী। এ খবর দিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
খবরে বলা হয়, ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে এআইআইবি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বিশ্ব ব্যাংকের চীনা-বিকল্প হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ তুলেছেন অধিকারকর্মীরা।

জার্মান পরিবেশবাদী সংগঠন আর্জেওয়াল্ডের সদস্য নরা সসমিকা বলেন, ২৫টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে বেইজিং-ভিত্তিক এআইআইবি তাদের ‘হালকা, পরিষ্কার ও সবুজ’ নীতিমালা মেনে চলছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বা ভারতে একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য যেসব মানুষের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে তাদের খুব অল্প ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণই দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া, এআইআইবি’র পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জোরপূর্বকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত মানুষকে। জীবিকা হারিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ম্যানিলা-ভিত্তিক এডিবি বিষয়ক এনজিও ফোরাম। সংস্থাটি বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সসমিকা বলেন, এআইআইবি গত জুলাইয়ে তাদের বার্ষিক বৈঠকে নাগরিক সমাজ বিষয়ক সংস্থাগুলোকেও এড়িয়ে চলেছে। তিনি বলেন, এই বছরের বৈঠকটি সম্পূর্ণ বিনিয়োগ-কেন্দ্রীক ছিল। এতে প্রথমবারের মতো নাগরিক সমাজ বিষয়ক সংস্থাগুলোর কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। এটা একটি সরকারি ব্যাংক। তাদের স্বচ্ছ ও সর্বব্যাপী থাকতে হবে। তাদের তথ্যগুলো উন্মুক্ত থাকতে হবে ও আলোচনায় সবসময় নাগরিক সমাজের অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে, যেমনটা অন্যান্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক করে থাকে।

ভারতে পর্যবেক্ষণ সংস্থা গ্রৌথওয়াচের বিদ্যা দিঙ্কর বলেন, বেঙ্গালোর মেট্রো রেইল প্রজেক্ট নির্মাণের জন্য গত জুনে তাদের অনেকেরই তখন কাজ ছিল না। তিনি বলেন, ওই পরিবারগুলোকে করোনার মাঝে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই এখন আয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা কোথায় কাজ করবে, কী আয় করবে, লকডাউন শেষে নিজেদের জীবন কিভাবে গড়ে তুলবে?

বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী হাসান মেহেদি বলেন, এআইআইবি ভোলা ইন্ট্রেগ্রেটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট ঘিরে ওঠা অভিযোগ নিয়ে চুপ রয়েছে। যদিও সেখানে কাজ চলার কারণে বন্যা হচ্ছে ও দুই জন শ্রমিক মারা গেছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকটির কাছ থেকে খুবই স্বল্প প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। প্রকল্পটিতে পর্যবেক্ষণ ছিল খুবই কম। গত বছরের জুলাইয়ে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ডিসেম্বরে প্রকল্পটি পরিদর্শন করে আমাদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো নিয়ে আলোচনায় বসবে। আজ অবধি তা হয়ে ওঠেনি।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে এআইআইবি’র এক মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকটির মূল মিশনগুলোর একটি হচ্ছে স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো এআইআইবিও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের ওপর হুমকির বিষয়ে সচেতন। ব্যাংকটির অর্থায়নে পরিচালিত কোনো প্রকল্পে যখন কিছু ঘটে তখন ব্যাংকের কর্মীরা এ বিষয়ে গ্রাহক, অংশীদার ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে। আমরা বর্তমানে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। একদল মানবাধিকারকর্মীকে তাদের পরামর্শ জানাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

Advertisement