বাবরি মসজিদ রায়ের আগেই অযোধ্যায় শত শত আটক

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভূমি মামলার রায়ের আগে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে ভারতীয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৭০ জনকে আটক করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে। রাজ্যে রাজ্যে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অযোধ্যায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিরাপত্তায় কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছে অযোধ্যা।

৩০০ কোম্পানি সেনা, ৪০ কোম্পানি আধা সেনা (প্রায় ৪০০০) মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ কোম্পানি সিআরপিএফ, ৬ কোম্পানি আইটিবিপি, সিআইএসএফ ও এসএসবি। শুধু কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন নয়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ৮টি অস্থায়ী জেলও প্রস্তুত করেছে যোগীর প্রশাসন। হামলা ঠেকাতে পাঠানো হয়েছে ৩০টি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল (বোম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড। খবর ইকোনমিক টাইমস ও এএফপির।

সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আগামী ১৭ নভেম্বর অবসর নেবেন। তার আগেই বাবরি মসজিদ মামলার রায় দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে ভারতজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই জায়গাটির দাবি করে আসছে। কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদের জায়গাটিতে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের দাবি, রাম মন্দির ভেঙে সেখানে বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিপরীতে মসজিদ নির্মাণের অধিকার ফিরে পাওয়ায় আশায় রয়েছে মুসলিমরা।
ষোড়শ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলে উগ্র হিন্দুরা। আদালতে মামলা হয়। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাবরি মসজিদের ভূমি তিন ভাগে ভাগ করে বণ্টনের আদেশ দেয়।

আদালতের নির্দেশনায় মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড, নিরমাজি আখড়া আর রামনালা পার্টিকে সেখানকার ২ দশমিক ৭ একর জমি সমানভাগে ভাগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। হিন্দু-মুসলিম দু’পক্ষই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছিল। রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে ১৪টি আবেদন জমা পড়ে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর অধীনে শুনানি হয়। দীর্ঘ ৪০ দিনের ম্যারাথন শুনানির পর ১৬ অক্টোবর তা শেষ হয়। কিন্তু রায় স্থগিত রাখা হয়। এখন রায়ের অপেক্ষায় পুরো ভারত।

যে কোনো সময় রায় হতে পারে। রায়ের আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদারের বৃহস্পতিবার নির্দেশিকা পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব মন্দির-মসজিদ খালি করে দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় মানুষ বাদে অন্যদের শহর ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রধান ওপি সিং শুক্রবার জানান, পাঁচ শতাধিক জনকে আটক করা হয়েছে। আরও ১০ হাজার জনকে টার্গেটে রাখা হয়েছে। বুধবার মন্ত্রীদের সঙ্গে অযোধ্যা রায় ইস্যুতে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বিনয়ের সঙ্গে রায় গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। বিতর্কিত মন্তব্যে যাতে শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ব্যাহত না হয় সেদিকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মোদি। আগের দিন মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ।

পরদিন জমিয়াতে উলামায়ে হিন্দের প্রধান আরশাদ মাদানি বলেন, বাবরি শরিয়া আইন অনুযায়ী মসজিদ ছিল, থাকবে। রায় যাই হোক, সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে হবে। এদিকে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ককর্ণধর গান্ধী পরিবারের আর কাউকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে না মোদি সরকার।
কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তার ছেলে রাহুল গান্ধী ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) নিরাপত্তা তুলে নিল দিল্লি। এখন থেকে জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাবে এই পরিবার। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়।

গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, সরকারি সিদ্ধান্তের কথা তাদের জানানো হয়নি। কিছু দিন আগে ভিআইপিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পর এ সিদ্ধান্ত নিল দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার।

এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই শুধু এসপিজি নিরাপত্তা সুরক্ষা পাবেন। জেড প্লাস সিকিউরিটি অর্থাৎ সিআরপিএফের জওয়ানরা পাহারা দেবেন গান্ধী পরিবারের।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ১৯৯১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী জঙ্গিদের হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা এসপিজি কভার পেয়ে থাকেন।

১৯৮৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার এক বছর বাদে স্পেশাল প্রোটেকশন ফোর্স বা এসপিজি গঠন করা হয়। সেই বাহিনীতে তিন হাজার সদস্য আছেন। ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দেয়া তাদের কাজ। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর এসপিজি আইনে পরিবর্তন করে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাদের পরিবার ১০ বছর স্পেশাল প্রোটেকশন গার্ডের সুরক্ষা পাবেন। ২০০৩ সালে অটলবিহারি বাজপেয়ি সরকারের আমলে সেই আইনে পরিবর্তন করে বলা হয়, ১০ বছর নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার এক বছর এসপিজি প্রোটেকশন পাবেন।

তারপর খতিয়ে দেখা হবে, তাদের কতদূর নিরাপত্তা দেয়ার প্রয়োজন আছে। গান্ধী পরিবারের দু’জন জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন। তারা বরাবরই দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত পরিবারগুলোর অন্যতম।

Advertisement