সাহিদুর রহমান সুহেল
রাজাকারের ধুলোর শহরে আমাকে চোখ বন্ধ করে হাটতে শেখায়নি আমার আগের প্রজন্মরা যারা ৭১’এর ২৮-শে মার্চ বহির্বিশ্বে প্রথম ঐতিহাসিক বার্মিংহাম শহরের স্মলহিথ পার্কে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় ১০ হাজার বাঙালীর উপস্থিতিতে পতাকা উত্তোলন ও শপথ বাক্য পাঠ করেন ৷এখন আমরা আরো পরিপূর্ণ-শুধু এই বার্মিংহামে প্রায় ৭৫ হাজার লোকের বসবাস-এই পার্কেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি স্বাধীনতা বিরোধীদের রুখে দিয়েছে৷তাই আর লৌহ খাঁচায় বন্ধি থাকতে চাইনা ৷সে সময়ে স্বপক্ষের লোকেরা চেতনা প্রকাশ তোমার কাছ থেকে চাবি খুঁজে নিয়ে আর নয়,এবার ৭৫ হাজার লোকের খোলা মনের খোলা দাবি বার্মিংহামের ” বাংলা টাউন”খ্যাত স্মলহিথের ঐতিহাসিক পার্কে খোলা মাঠে স্থায়ী শহীদ মিনার সময়ের দাবী করেন !
আমরা পৃথিবীতে একমাত্র জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি-সবচেয়ে কম সময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি ৷আমরা সে জাতি ৫২-৭১ শুনলেই চোখের জ্বল চলে আসে ৷
২১ যদি হয় ভাই হারা বোনের চিৎকার,ছেলে হারা মায়ের আর্তনাদ,পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ তবে সে শোকের পথ পেরিয়ে আমি আজন্ম পেয়েছি “মা” বলে ডাকার অধিকার ৷
২১ এর ভাষা সৈনিকদের রক্তের কণিকা গুলো আমাকে সাহস জুগিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যে ঐতিহাসিক বার্মিংহামে বাঙালীর ঐতিহাসিক স্মলহিথ পার্কে শহীদদের বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস নিয়ে গর্ব করে খোলা মাঠে চিৎকার বলেছি আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ৷এখন আমি বলতে পারি,পরাজিত হয়েছে শৈত্য প্রবাহ-শত্রু পক্ষের ঘাঁটিতে দাঁড়িয়েছিল আমাদের শহীদ বেদি-মানুষ রুপি শকুনের মোনাজাতরত হাত ফসকে বিশাল জনগোষ্ঠীর হাত শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ বেদি ফুলের স্তূপে এখানকার উপস্থিত জনতার হৃদয় আকাশ ছুয়েছিলো ৷ সেই আকাশ ছুয়া হৃদয় নিয়ে ১৬ জন স্বপ্ন দেখেছিলো বার্মিংহামের বাংলা টাউন খ্যাত স্মলহিথের ঐতিহাসিক স্মলহিথ পার্কে স্থায়ী শহীদ মিনার!!!
বার্মিংহামের কয়েকজন তরুণ স্বপ্ন দেখেছিলো “সুদুর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে
থাকলেও বুকের মধ্যে বাংলার জমিন নিয়ে বার্মিংহাম প্রবাসীরা সাগরের মতো বিশাল খোলা হৃদয়ে,খুলা জায়গায় “আমার ভ৷ইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী..গান গেয়ে শহীদ বেদিতে গর্বিত বাঙালি হিসাবে পুস্পস্থপক অর্পণ করবেন,সেই মহেন্দ্রক্ষণ ঐতিহাসিক স্মলহিত পার্ক যেখানে ১৯৭১ সালে ২৮শে মার্চ ১০ হাজার বাঙালির উপস্থিতিতে বহির্বিশ্বে প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো সেই জায়গায় ২০১৪ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী এবং ১৫,১৬,১৭,১৮ এর ২১শে ফেব্রুয়ারী অনেক ধস্তাদস্তি ,প্রতিকুলতা ও ক্ষমতা লোভী বৈরী চেতনাধারীদের মোকাবেলা করে প্রতি বছর বার্মিংহামের ইতিহাসে খোলা মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করে একুশ উদযাপন পরিষদের কয়েকটা বুলেট (সে
সময়ে মনে হতো )পলাশীর আম্রকাননে মোহনলাল,মিরমদন থেকে ৭১ এর সিপাহী হামিদুর রহমান,রুহুল আমিনদের মতো পূর্বসুরীদের রক্তের কনা থেকে সৃষ্ট তারাই এই স্বপ্নের সীমানাকে বাউন্ডারী দেয় ৷
সে থেকে অস্থায়ী থেকে স্থায়ী শহীদ মিনারের বাস্তবায়ন স্বপ্ন তৈরী ৷পরের ইতিহাস অত্যন্ত সংক্ষেপে তুলে ধরছি ;
একুশ উদযাপন পরিষদ”বার্মিংহামের প্রবীন মুরব্বি,সেই ২৮শে মার্চের প্রথম সারির নেতৃত্ব দানকারী,দেশ ও জাতীয় স্বার্থের প্রতিটি আন্দোলনের অগ্রভাগের সৈনিক মরহুম ইব্রাহিম আলীর প্রকৃতির নিয়মের এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্তর খবরে একুশ উদযাপন পরিষদ এই দেশ প্রেমিক প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকের প্রতি তরুনদের দেশ প্রেমিক গুরুজনের প্রতি দ্বায়ব্দ্ধতার বহি:প্রকাশ হিসাবে একবার আয়োজন তিনির নেতৃত্বের উপর ন্যস্ত করে ৷
পরের আয়োজন টিক-টাক চলছিল স্থায়ী করণের প্রক্রিয়ায় কমিটির প্রয়জোনীয়তা দেখা দেয়,তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় মাসুদ আহমেদকে সভাপতি ও এম এ মুন্তাকিমকে সম্পাদক করে ৷এর আগে এবং পরে বারংবার মসুদ আহমদ ও অস্থায়ী শহীদ মিনারের প্রক্রিয়ায় অত্যান্ত পরিশ্রমী মুরাদ খানের মধ্যে কাজের সমন্বয় নিয়ে বিরোধ যখন তুঙ্গে,মূলত এ দু’জনের জন্য কমিটির সভায় সদস্যরা খুব বিব্রত ছিলেন !কমিউনিটির বিভিন্ন ইস্যু পরিসংখ্যানে সংগঠন গঠন এবং অকার্য করতে কিছু ব্যক্তির জন্ম হয়েছে !আজকের এই অস্থায়ী শহীদ মিনার নিয়ে বিভক্ত কমিউনিটি এ দুজন কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না !কার দোষ বেশি সেটি সংগঠনের বাকি সদস্যদের উপর ছেড়ে দিলাম !সত্যি কথা বলতে কি ব্যক্তিগত ইগো,স্বার্থনেষী মনোভাব অনেক ভালো কাজকে গলা টিপে হত্যা করা হয় এটি তার প্রমান !আমরা সদস্যরা কোনোভাবে দায় এড়াতে পারিনা,মূলত প্রিয় ব্যক্তি কিংবা অনুসারীর ভুল গুলো আমাদের চোখে পড়েনা !তার পর এই কমিটিতে ১০০ পাউন্ড করে ছাড়া ধার্য্য করা হয়,আমার কাছে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানালেন বর্তমান হাইকমিশনের গঠিত কমিটিতে উনি নেই,উনার টাকাটা কে ফেরত দিবে?কিংবা পুরো কার্যক্রম শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অর্থের লেন-দেন স্বচ্ছ ভাবে তুলে ধরা হয়নি !
তার পর হটাৎ মুরাদ খান পদত্যাগ করে কাউন্সিলে আরেকটি আবেদন করেন ৷ একে একে পদত্যাগ করলেন আবু হায়দার চৌধুরী সুইট ও কবির উদ্দিন ৷মুরাদ খান সহ আবু হায়দার সুইট সভাপতি ও জাহিদ হোসেন লিটনকে সম্পাদক করে গঠন করা হয় ভাষা শহীদ মিনার ৷ উভয় পক্ষ গত বছরে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনে পার্কে আবেদন করেন ৷ অবশেষে কমিউনিটির মধ্যস্থতায় যোজন-বিয়োজনে উভয় পক্ষ সম্মিলিত ভাবে পালনে একমত হন ৷
এর আগে হাইকমিশনে একটি মিটিঙে আমি উপস্থিত ছিলাম জনাব জুলকার নাইন দাবি করেন তার তত্থাবধানে স্থায়ী করণের প্রক্রিয়া এগুচ্ছে,তিন কাউন্সিলকে বলে রেখেছেন কমিউনিটির একটি অংশ স্বমন্নয় করবে ৷ সেদিন সবাই হতবম্ব হয়ে পড়লেন,শহীদ মিনারের দিকে চেয়ে সেদিন কেউ প্রতিবাদ করেননি ৷ আমাদের কাজ হাইজ্যাক হয়ে গেলো?মূলত আমাদের কিছু লোকের চামচামি এবং
স্যার সম্বোধনে এমন পরিস্থিতির মুখো-মুখী হতে হয় !
এর পরে বিভাজমান কমিটি নিয়ে একাদিক মিটিং হয় ! নেতৃবৃন্ধ এবং হাইকমিশনে ৷ফলাফল অন্ত সার শূন্য!!
অতি সম্প্রতি হাইকমিশনের কাছে মসুদ আহমেদ,মুরাদ খান ও মিসবাউর রহমান তিনটি পৃথক কমিটি জনাব জনাব জুলকার নায়েনের হাতে হস্তান্তর করেন ৷ তিনি তিন কমিটি থেকে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন ৷যদি আমি বলি তিন জনের অনুসারী কিংবা আনুগত্য কারীরা স্থান সহ সর্বাধিক সরকার দলীয় লোকের সদস্য করণে হাইকমিশনার প্রশ্ন বিদ্ধ রয়ে গেলেন !আগামীতে যদি সরকার বদলে আরেকটি সহিংসতা বার্মিংহামে বাঙালী কমিউনিটির আসন্ন !চতুরতা বলতে বিএনপি থেকে জনাব সৈয়দ জমসেদ আলীকে ভারসাম্য রক্ষায় অন্তৰ্ভুক্তি ও আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি ৷ কিন্তু এখানে হাইকমিশনের জুলকার নায়েন সাহেব কমিউনিটির সাথে যে সম্পর্ক শুধু মাত্র বিভিন্ন অনুষ্টানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন তার প্রমান পাওয়া যায় যেমন,আমি স্বশরীরে উপস্থিত থেকে
দেখেছি আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হচ্ছে হাইকমিশন কিন্তু উনার সামনে একজন আরেকজনের উপর শারীরিক হামলা সহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ নীরব দর্শকের ভূমিকা আমাকে হতবম্ব করেছে !তার পরেও কমিউনিটিতে কার্যরত ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্য চোখে পরে যেমন,এই অস্থায়ী শহীদ মিনার শুরু থেকে যে ১৬ জন গত চার/পাঁচ বছরে শ্রম/অর্থ/পরিবার/কাজকে অপেক্ষা করে অস্থায়ী শহীদ মিনারকে স্থায়ী করণের রাস্তায় নিয়ে আসার কয়েকজন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি না করণে !যেমন জিয়া তালুকদার,এলাহী হক সেলু,মোহাম্মদ কবির উদ্দিন,ফাহিমা রাহিম এবং আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল যে অসুস্থ শরীর নিয়ে শ্রম,টাকা এবং অনবরত তার হল ব্যবহার করলেন তার কি মূল্যয়ন করলেন আপনি ? এই ১৬ জনের বাহিরে আরো কিছু সদস্য নিতে পারতেন তারা কিছু না হলেও এই প্রবাসে অতীত এবং বর্তমানে দেশ-মাতৃকার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আলী ইসমাইল, মুহাম্মদ মারুফ,রিয়াদ আহাদ,সৈয়দ নাসির,নাসির আহমেদ শ্যামল প্রমুখ ৷তবে এই ১৬ জনের মধ্যে বর্তমান কমিটিতে যারা আছেন তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন বাকি সদস্যদেরকে রেখে আপনাদের সদস্য পদ গ্রহণ কতটা মহত্বের পরিচয় দিলেন বিবেককে প্রশ্ন করবেন? বর্তমান সদস্য জনাব কবির উদ্দিন সাহেবের সাথে আলোচনা করে জানতে পারি এই ৩২ জন ১০০০ পাউন্ড করে চাঁদা দিলে অন্তর্ভুক্তি হবেন অন্যতায় নয় !জনাব জুলকার নায়েন সাহেব আমাদের কমিউনিটির এই সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে সম্মানিত করলেন নাকি অসম্মানিত করলেন ?বিত্তশালী দেখলেন না যোগ্যতা দেখলেন ? স্থায়ী করণে টাকার প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটা কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে টাকাটা কিভাবে আসবে ?এখন দেখার বিষয় কে টাকা দিয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করেন ?আর কেউ যদি পদত্যাগ করেন এর ব্যর্থতার দ্বায়ভার আপনার ৷এই কমিটি যদি পরাজিত হয় তাহলে স্থায়ী শহীদ মিনারের স্বপ্ন অধরা রয়ে যাবে ৷