ব্রিটেনের নর্থাম্পটনে চুরি ডাকাতি বৃদ্ধিতে কমিউনিটিতে আতঙ্ক

এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম : এশিয়ান ঘর-বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার চুরি ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকায় একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। নর্থাম্পটনে সম্প্রতি চুরি -ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। চোর চক্রের সদস্যরা নানা কৌশল অবলম্বন করে বাসায় প্রবেশ করে সোনা সহ মুল্যবান জিনিষ পত্র নিযে চম্পট দেয়। তাই এ নিয়ে আতংক বিরাজ করছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে।

নর্থাম্পটনে সাম্প্রতিক সময়ে চুরি যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগি সেলিম আহমদ জানান,  তাদের বাসার পরিবারের সবাই আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি নিজেও কাজে ছিলেন। রাত প্রায় ৮ টার দিকে তাদের বাসা চুরি হয়ে যায়। রাত ১০টায় পরিবারের সবাই এসে দেখেন ঘরের দরজা খুলা,  আসবাবপত্র সব কিছু তছনছ করা। তখন বাসা থেকে তাকে ফোন করলে তিনি বাসায় ফিরেন। পরে পুলিশ আসে। সোনা ও নগদ পাউন্ড সব নিয়ে গেছে চোরেরা।

চোরের ভয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষ বাসা-বাড়ি খালি রেখে কোথাও যাচ্ছেন না।
আল জামাত উল মুসলিমিন অফ বাংলাদেশ জামে মসজিদ নর্থাম্পন এর মোতয়াল্লী ও প্রবীন মুরব্বি শফিক খান মখন বললেন, কমিউনিটির মানুষ খুব ভয়ে আছে।
নর্থাম্পটনশায়ার পুলিশের সাবেক হেড অফ ত্রুাই ডেনিস মুড়ে বলেছেন, তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চোর চক্রের সদস্যদের আটক করার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। বাসা বাড়ি সোনা না রেখে ব্যাংক অথবা অন্য কোন নিরাপদ জায়গায় রাখার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ডেনিস মুড়ে বলেন, নিরাপত্তার জন্যে বাসা-বাড়ীতে সিসিটিভি, এলারাম লাগানো প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা গেছে, বাসায় যখন কেউ থাকে না তখন সংঘবদ্ধ চোররা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। ঘরের দরজা ভেঙ্গে চোর ঢুকে আর কিছু না নিয়ে খুঁজে কেবল স্বর্ণালঙ্কার। যাদের বাড়ীতে এসব ঘটনা ঘটছে তারা বলছেন, সারা ঘর তছনছ করে ঘরে রাখা সব স্বর্ণালঙ্কার নিযে যায়। সাথে লেয় নগদ পাউন্ডও।
নর্থাম্পটন ইমারজেন্সী পেট্রল গ্রুপ


ব্রিটেনের নর্থাম্পটনে চুরি -ডাকাতি কমানোর জন্য ব্রিটিশ বাংলাদশী বেশ কয়েকজন তরুন, যুবক মিলে ২০১৮ সালে গড়ে তুলেছেন নর্থাম্পটন ইমারজেন্সী পেট্রল গ্রুপ। এ গ্রুপ নর্থাম্পটনের বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় গিয়ে টহল দিচ্ছে। প্রথম দিকে এই সংগঠনের কার্যক্রমে সকলেই অংশ গ্রহণ করায় চুরি -ডাকাতি কমে যায়। তারা সফলও হয়েছিল। চুরি -ডাকাতি কমে যাওয়ায় সকলের কাছে নর্থাম্পটন ইমারজেন্সী পেট্রল গ্রুপ প্রশংসিত হয়েছিলো। এই সংগঠন বেশ কয়েকজন চুরকে ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছিলো। বর্তমানে নর্থাম্পটন ইমারজেন্সী পেট্রল গ্রুপের প্রায় দুই শত সদস্য রয়েছেন। কিন্তু নর্থাম্পটন ইমারজেন্সী পেট্রল গ্রুপ আগের মত বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় গিয়ে টহল দিচ্ছে না। তাই চুরি ডাকাতি আবারো বেড়েছে। তাই অভিজ্ঞত মহল মনে করেন,  পুলিশের পাশাপাশি নর্থাম্পটন ইমারজেন্সী পেট্রল গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আবারো আগের মত টহল দিবে।
স্ট্রিট  ওয়াচ


নর্থাম্পটনে চুরি ডাকাতি কমানো জন্য ২০১২ সাল থেকে “স্ট্রিট ওয়াচ” নামে আরো একটি বাংলাদেশীদের সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠন পুলিশকে সংগে নিয়ে ডালিংটন ও স্পেনসার এলাকায় কাজ করছে। প্রতি মাসে স্ট্রিট ওয়াচ গ্রুপের সদস্যরা টহল দিচ্ছে। প্রথম দিকে অনেকেই কাজ করেছেন।কিন্তু এখন স্ট্রিট ওয়াচ এ কাজ করছেন প্রবীন মুরব্বি আলতাব আলী। তিনি স্ট্রিট ওয়াচের কো করডিনেটারের দায়িত্ব পালন করছেন। আলতাব আলীর সাথে রয়েছেন শহিদ আহমদ, মাসুক মিয়া, মানিক মিয়া, সামছুল হক ও আজিজ খান।
স্পেনসারের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চুরি ডাকাতি কমানোর জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন বাংলাদেশী সংগঠন কাজ করছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর নিয়মিত টহল দেওয়ার জন্য এই সংগঠন গুলোর প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
মেট্রো ব্যাংকে স্বর্ণালংকার রাখা যাবে
নর্থাম্পটনবাসীর জন্য এখন সুখবর হচ্ছে এখন থেকে টাউন সেন্টারের মেট্রো ব্যাংকের শাখায় স্বর্ণালংকার রাখা যাবে।আগে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় স্বর্ণালংকার রাখা গেলেও বর্তমানে কোনো ব্যাংকে স্বর্ণালংকার রাখা যাচ্ছে না। তাই অনেক বাংলাদেশী দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন। চুরি ডাকাতির ভয়ে কেউ ঘরে স্বর্ণালংকার রাখছেন না। অনেকেই বহু দুর গিয়ে লেস্টার, মিল্টন কিংসসহ বিভিন্ন শহরে গিয়ে স্বর্ণালংকার রাখতে হতো। কিন্তু এখন নিজ শহরে মেট্রো ব্যাংকে রাখতে পারবেন স্বর্ণালংকার । তাই অনেকেই খুশী।
ইনডিপেনডেন্ট এডভাইজারি গ্রুপ (আই এ জি) চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মিজান চৌধুরী বলেন, মেট্রো ব্যাংকে এখন থেকে স্বর্ণালংকার রাখতে পারবেন সবাই। তবে একটি কোড আছে সেটি জানলে ৫০ ভাগ ছাড় পাওয়া যাবে।

Advertisement