ব্রিটেনে স্পাউস ভিসা : ১০ আগষ্ট থেকে আয়ের উৎস দেখাতে স্পন্সরের সুযোগ নেওয়া যাবে

।। ইব্রাহিম খলিল।।

ব্রিটেনে স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে আয়ের যে সীমা ১৮ হাজার ৬শ পাউন্ড বর্তমানে প্রচলিত আছে। এই নিয়মের একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। আগামী ১০ আগষ্ট থেকে ভিসা আবেদনকারীরা তাদের আয়সীমার প্রমান হিসেবে থার্ড পার্টি বা ম্পন্সর ব্যবহার করতে পারবেন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ফলে ইমিগ্রেশন আইনে নতুন এই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে হোম অফিস। গত ২০ জুলাই হোম অফিস তাদের ওয়েবসাইটে ইমিগ্রেশন আইনের নতুন তথ্য আপডেট করে। আর এর ফলে হাজার হাজার স্পাউস ভিসা আবেদনকারীদের মাঝে আশার সঞ্চার হলো।

হোম অফিস স্পাউস ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ১৮ হাজার ৬শ পাউন্ড আয় প্রদর্শনের এই নিয়ম চালু হয় ২০১২ সালে। ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে স্বামী কিংবা স্ত্রীকে নিয়ে আসতে অথবা ব্রিটেনে থাকা নন ইউরোপীয়ান দেশের নাগরিকদের স্পাউস ভিসা আবেদনে জন্য এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করে সরকার। এই আইনের ফলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আইনটির প্রভাবে বিশেষ করে ব্রিটেনের বাইরে অবস্থানকারী হাজার হাজার দম্পতি এক কঠিন জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকেই দেশে ছেলে মেয়ে নিয়ে বছরের পর বছর পার করছেন। ফলে স্কাইপের মাধ্যমেই তাদের নিয়মিত পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়েছে। মূলধারার মিডিয়াতে এসব স্কাইপ পরিবার নিয়েও অনেক খবরও প্রকাশিত হয়।

এই আইনটিকে মানবাধিকারের চরম পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করে শুরুতেই অনেক আইনজীবি সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় লড়েছেন। অনেকেই নানাভাবে এটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। নি¤œ আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এসব মামলা। এর পরও সম্প্রতি একটি মামলায় হোম অফিস সুপ্রিম কোর্টেও জয়লাভ করে। কিন্তুু ২০১২ সালে শুরুর দিকে এমএম লেবানন নামের এক বক্তির দায়ের অপর একটি মামলা সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে গত ২২ ফেব্রুয়ারী জয়লাভ করলো। এর সূত্রধরে ২০ জুলাই ইমিগ্রেশননের স্পাউস ভিসা আইনে পরিবর্তন ঘোষনা করে হোম অফিস। হোম অফিস তাদের ওয়েবসাইটে এই তথ্য আপডেট দিয়ে জানিয়েছে নিয়মটি কার্যকর হবে আগামী আগষ্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে।

পূর্বে স্পাউস ভিসার জন্য একজন আবেদনকারীকে তার নিজের আয়সীমা সর্বনি¤œ ১৮৬০০ পাউন্ড দেখাতে হতো। কোন ধরনের বেনিফিট সংক্রান্ত আয় এতে যুক্ত করার বিধান ছিলোনা। নতুন আইনে বলা হয়েছে- কারো যদি আয় ১৮৬০০ না থাকে তাহলে তিনি তার আত্মীয় কিংবা পরিচিত কারো ইনকাম দেখিয়ে আবেদন করতে পারবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে বেনিফিট সংক্রান্ত আয়ও এতে অর্ন্তভুক্ত করা হবে। তবে এটি ব্যক্তি বিশেষে এবং তার পরিস্থির উপর নির্ভর করবে। ভিসা অফিসারকে এ ব্যাপারে যতেষ্ট যুক্তি ও প্রমান দেখাতে হবে। পাশাপাশি স্পন্সরের ইনকাম কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত ইনকাম দীর্ঘস্থায়ী, বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রহনযোগ্য হতে হবে। সর্বোপরি ভিসা দেওয়া না দেওয়া নির্ভর করবে, ভিসা অফিসারের সিদ্ধান্ত ও সন্তোষ্টির উপর।
নতুন আইনে আয়সীমা প্রদর্শনে ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আর বেনিফিট সংক্রান্ত আয় প্রদর্শনের সুযোগ রাখার ফলে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দিয়েছে হোম অফিস জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটির স্বনামধন্য আইনজীবি ও তাজ সলিসিটরসের প্রিন্সিপাল তাজ শাহ। তিনি বলেন, স্পাউস ভিসায় শিথিল হওয়া নতুন নিয়মটি কার্যকর হওয়ায় এশিয়ান কমিউনিটির এটি অত্যন্ত সুখবর। এ জন্য দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া পার করতে হয়েছে। যেখানে সরকার চাচ্ছে ইমিগ্রেশন কমিয়ে আনবে। কোর্ট মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত রেখেছে।
আর হোম অফিস বলেছে, তারা সর্বোচ্চ আদালতকে শ্রদ্ধা করে। আদালত যে রায় দিয়েছে তা মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। সে অনুযায়ী ভিসা প্রদানে কোর্টের রায়কে অনুসরন করা হবে।
এদিকে থার্ড পার্টি স্পন্সর নিয়ে কেউ যাতে জালিয়াতির আশ্রয় না নেন তার জন্য আহব্বান জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন এডভাইজার নাশিত রহমান। তার মতে, অতীতে অনেক ভিসা আবেদনে জালিয়াতির কারনে সাধারন মানুষ সীমাহীন ভুগান্তি পেয়েছেন।

Advertisement