মো: রেজাউল করিম মৃধা।। ব্রেক্সিট এখন সবার মুখে মুখে। কি পারলামেন্টে, কি দোকান পাট, পথে ঘাঁটে, বাসে, ট্রেন, স্টিমার বা উরোজাহাজে আর পেপার, পত্রিকা, টেলিভিশন এবং ফেইসবুক তো সরগরম মূহুর্তের মধ্যে।
আসলে ব্রেক্সিট হলে কার ক্ষতি হবে, কার লাভ হবে? কি কি লাভ বা কি কি ক্ষতি? কি করলে আরো বেশী লাভ করা যাবে অথবা কি কি করলে ক্ষতি থেকে বের হওয়া যাবে? এটা পরিস্কার নয়।কেউ ই পরিস্কার করেন নি। এটা অবশ্যই পরিস্কার করা দরকার । পরিস্কার ধারনা ইউকের সরকার ও ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের দেওয়া দরকার।
রেফারেন্ডামের আগে যদি দুটি পক্ষই তাদের সঠিক কার্যক্রম , মেনোফেস্টুর দিক নির্দেশনা এবং বেক্সিটের পক্ষে বিপক্ষের লাভ ক্ষতি তুলে ধরতেন তবে আজ এ অবস্থার সৃস্টি হতো না।তাদের সঠিক ইস্তেহার না দেওয়ার দায় তখনকার প্রধান মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সহ তার সমর্থকরা এবং বরিস জনসন ও তার সমর্থকরা এড়াতে পারেন না। পদত্যাগ করে নিজেদের বাঁচাতে পারলেও দেশের জন্য রেখে গেছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত ।
২০১৬ সালের ২৩শে জুন গণভোটের মাধ্যমে ৫১. ৯ শতাংশ ভোটার ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেয়।জনগণ পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিলো আমরা ই ইউ থাকবো না । এবার ঠেলা সামলাও। ভয় পেয়ে ডেভিড ক্যামেরন পালিয়ে গেলে এর দায়ভার পরে দলের অন্যতম কান্ডারী তেরেসা মের ঘাড়ে।সে ভাঁড়ে । সে ভারে তেরেসা মে একেবারে নতজানু । যাকেই ব্রেক্সিটের দায়িত্ব দেওয়া হয় কিছুদিন যেতে না যেতেই পদত্যাগ করেন। কি বুঝে করেন কি না বুঝে করেন কে জানে। প্রধানমন্ত্রী বারবার ব্রাসেলসে ইইউর সাথে বৈঠক করেন। অনেক সময় তেরেসা মের পদত্যাগের গুন্জুন উঠে। শত প্রতিকুলতা ও ব্যর্থতার মাঝেও আশার আলো খুঁজে বেড়ান প্রধানমন্ত্রী । ডিল, নোডিল, সফট কিম্বা হার্ট ব্রেক্সিট প্রস্তাব নিয়ে ওয়েস্টমিনিস্টারে ও ব্রাসেলসে উভয় স্থানে ব্যার্থ হন তারপরও হাল ছাড়েননি। পার্লামেন্টে বিভিন্ন প্রস্তাব বারবার ব্যার্থ হলেও শেষ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্মতি ও সমর্থন পান।
২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ ব্রেক্সিটের সময় শেষ হলেও এর আগেই সংসদে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব ৩০শে জুন পর্যন্ত কিন্তু ২৭ দেশের নেতারা নিজেদের মধ্যে ৫ঘন্টা আলোচনার পর আগামী ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে ই ইউ থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের কে অনেক শক্তিশালী মনে করে অনড় হয়ে আছেন।আসলে কি তাই না কি জু জুর ভয় দেখাচ্ছেন। আর এই জু জুর ভয়ে অনেকেই ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করে দিচ্ছেন। নিত্য প্রোয়জনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এর ভোক্তভোগী হচ্ছেন সাধারন জনগন।
প্রথম কনসেপ্ট ছিলো ইউরোপ থেকে লোক আসছে তাদের ঠেকাতে হবে। তাদের ঠেকাতে গিয়ে এত সব ঝামেলা এখন একটার সাথে অন্যটির সম্পর্ক যেমন ধরুন ইউরোপের সকল জন সাধারন কে তাদের নিজ নিজ দেশে চলে যেতে হবে। তাহলে ইউকের ও তো অনেক লোক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছেন । তাদের কি হবে?
আবার ইউরোপের সাথে ইউকের বিভিন্ন ব্যাবসায়ী চুক্তি আছে সেগুলির কি হবে? শুধু ইউরোপ থেকে আসা বন্দ করতে গিয়ে। এখন লেজে গোবর অবস্থা। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য অনেক উপায় খুঁজতে খুঁজতে এতটাই নাজেহাল সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সেই জুতা আবিস্কারের গল্পের মত। পায়ে যাতে ময়লা না লাগে সেই পা জুতা না পরিয়ে শহর ঝাড়ু নিয়ে ধূলায় অন্ধকার আবার ধূলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পানি দিয়ে শহর ভিজিয়ে ঠান্ডা সর্দী। কখনো ভেসে যেতে হয় পানিতে। অবশেষে জুতা আবিস্কারক মুচি এসে রাজার পায়ে জুতা পরালো হয়ে গেলে সমস্যার সমাধান।
একবার শুনেছিলাম ইউরোপের যে সব অভিবাসী ইউকে তে আসবেন। তারা সাথে সাথে বেনিফিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। চার বছর থাকতে হবে এবং কাজ করতে হবে। তখন অনেক সমস্যার সমাধান হতো কেননা যে আসবেন বুজেশুনে আসতেন।
এখন জু জুর ভয়ে কি হবে? কি হবে না? ঘর বাড়ীর বেচা কেনা স্থবির। ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেক বড় বড় প্রতিস্ঠান।যুক্তির শেষ নেই। অনেকে বলেন ইউরোপ নাই তো কি হয়েছে? কমনওয়েলথ কান্ট্রি আছে। বৃহৎ কর্মক্ষেত্র তৈরী হবে।
আগামী ছয়মাসের মধ্যে সঠিক ও সুন্দর একটি পদক্ষেপে বেক্সিট সমস্যা হবে।জন সাধারন সহ সকলেই সেই প্রতাশায় অপেক্ষমান।
লেখক : রেজাউল করিম মৃধা : সিনিয়র ক্যামেরা পার্সন, চ্যানেল এস। কমিউনিটি এডিটর, ব্রিটবাংলা২৪.কম এবং ইভেন্ট সেক্রেটারী, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব।