ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে বৃটিশ রয়েল নেভি শিপ পাঠানোর পরামর্শ ঢাকার

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : এবার আর কোনো রাখঢাক নয়। একজন রোহিঙ্গাকেও গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ- এমনটা সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়কে। গভীর সমুদ্রে অনুমান ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা ভাসছে। করোনা আতঙ্কে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্য তারা রাখাইন ছেড়েছিল। কিন্ত দেশটির বর্ডারে ভিড়তে পারেনি, প্রত্যাখ্যাত হয়ে আন্দামান এবং বঙ্গোপসাগরে ভাসছে তাদের বোঝাই করা নৌকা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাসমান রোহিঙ্গাদের গ্রহণে বাংলাদেশের ওপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ। সোমবার বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ফোন করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের গ্রহণে অনুরোধ জানান।

জবাবে বৃটিশ মন্ত্রীকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিস্তারিত তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমিত সম্পদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে ইতোমধ্যে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিপদে আছে। তারপরও বাংলাদেশকেই অনুরোধ করা হচ্ছে। অথচ ওই ভাসমান রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান যে এলাকায় সেই দেশগুলোকে কেউ আশ্রয় দিতে বলছে না, তারা নিজেরাও এগিয়ে আসছে না। মন্ত্রী ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে বৃটিশ রয়েল নেভি শিপ পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, বৃটেনের রয়েল জাহাজ এসেও তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দিতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে এগিয়ে আসা উচিত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের ওপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের দায়িত্ব বর্তায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, ফোনালাপে বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মিস্টার আহমেদকে মন্ত্রী মোমেন বলেন- বাংলাদেশের ওপর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গার ওই বিশাল বোঝা কিছুটা লাঘবে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো এগিয়ে আসতে পারে। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে গাদাগাদি অবস্থায় থাকা ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে রাষ্ট্রগুলো ভাগ করে নিতে পারে এবং তাদের দেশে নিয়ে ভালভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। বছরের পর বছর ধরে চলা রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত, কার্যকর তথা টেকসই সমাধানে পদক্ষেপ নিতেও তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্ট মতে, চারদিন আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ঢাকার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন-গভীর সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের কোন দায়িত্ব নেই। তবে মি. মোমেন এ-ও বলেছেন, বাংলাদেশ চায় না মানুষ মরুক। এ জন্য তাদের রক্ষায় অন্যদের অগ্রসর হয়ে আসা উচিত। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বিবৃতিতে বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ এবং শিশুদের ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিশ্ব সংস্থাটি এ-ও বলেছে, সাগরে অবস্থানরত শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে সকল রাষ্ট্রের অধিকতর সমন্বয় এবং দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া প্রয়োজন। লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি জানিয়েছে- দুটি নৌকায় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে। তারা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে এখন বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় আছে।
আন্তর্জাতিক আইন মতে, গভীর সমুদ্রে কেউ বিপাকে পড়লে বা আশ্রয় চাইলে তাদের উদ্ধার এবং দেখাশোনার দায়িত্ব হচ্ছে গভীর সমুদ্রের আশপাশের দেশগুলোর। ভাসমান অবস্থায় রোহিঙ্গারা সমুদ্রের যে অংশে অবস্থান করছে তার কাছাকাছি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত ও ফিলিপাইনের অবস্থান।

রাখাইনে মিলিটারি অপারেশ চলছে অথচ ইইউ সেখানে বিনিয়োগ অব্যাহত

এদিকে রাখাইন পরিস্থিতির অংশবিশেষ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বৃটিশ মন্ত্রী আহমেদকে বলেন, মিয়ানমারে এখনও মিলিটারি অপারেশন চলছে এবং রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এবিষয়ে সোচ্চার নয়।

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের সঙ্কটে বৃটেনের সহযোগিতা কামনা

ওদিকে বাংলাদেশের বহুলোক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চাকুরি হারিয়ে খাবারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে উল্লেখ করে (করোনার এই সময়ে) তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে বৃটেনের প্রতি আহবান জানান মন্ত্রী ড. মোমেন। বলেন, মানবিক কারণে তাদের চাকরির সুরক্ষার দাবিতে বৃটেনসহ উন্নত বিশ্বের সোচ্চার হওয়া উচিত। বৃটিশ
ক্রেতারা যাতে গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাতিল না করেন সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃটিশমন্ত্রীর একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন। বলেন, ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের গার্মেন্টসখাত সমস্যাসংকুল অবস্থায় পড়েছে। ক্রয়াদেশ বজায় রাখতে বৃটেনকে একটি বিশেষ ফান্ড গঠনের অনুরোধও করেন মন্ত্রী। করোনা প্রতিরোধে বৃটেনকে বাংলাদেশ উপহার হিসেবে চিকিৎসা সামগ্রী দেয়ার প্রস্তাব করলে জবাবে বৃটিশ প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেনেরর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Advertisement