‘ভ্যাকসিন হিরো’ শেখ হাসিনা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: টিকা দান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বব্যাপী টিকা দান সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই) স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই পুরস্কার প্রদান করেন। জিএভিআই বোর্ড সভাপতি ড. এনগোজি অকোনজো ইবিলা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তা তুলে দেন। শেখ হাসিনা তার অর্জনটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করে বলেন, আজ যে পুরস্কার গ্রহণ করলাম তা আমার নয়। এটা বাংলাদেশের জনগণের এবং আমি তা তাদের প্রতি উৎসর্গ করলাম। প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে দেশবাসীর প্রতি তাদের শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য টিকা দান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহবান জানান। বলেন, আগামীর শিশুরা সুস্বাস্থের অধিকারী হয়ে দেশ পরিচালনা করবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রজন্ম অত্যন্ত জরুরি। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রজন্মই পারে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ থেকে পোলিও, কলেরাসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি দূর করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে জিএভিআই’র সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি। এ সময় রূপকল্প ২০২১ এবং ’৪১ অনুযায়ী সকলের জন্য মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরিপূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। জিএভিআই বোর্ড সভাপতি ড. এনগোজি অকোনজো ইবিলা পুরস্কার তুলে দেয়ার আগে একটি সাইটেশন পাঠ করেন। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি শিশুর সুরক্ষায় জিএভিআইকে সহযোগিতা এবং এর অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে যারা ভ্যাকসিন এলায়েন্স মিশনে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন সেই বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বদের মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানে জিএভিআই ‘ভ্যাকসিন হিরো’ এওয়ার্ড প্রবর্তন করেছে। এই এওয়ার্ড তাদের জন্য যাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য রয়েছে এবং যারা জরুরি ভিত্তিতে শিশুর জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং কোন শিশু ভ্যাকসিনেশন থেকে বাদ না পড়ে সেটি নিশ্চিত করেছেন। শিশু অধিকার রক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রমে শেখ হাসিনা সত্যিকার একজন সফল ব্যক্তিত্ব। অনুষ্ঠানে জিএভিআই’র প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বক্তৃতা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ছাড়াও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য সফরসঙ্গীরা এময় উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের ইমিউনিটি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে: এদিকে অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে রাখাইন রাজ্য থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে প্রবেশ করায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম এবং নিয়মিত টিকাদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ইমিউনিটি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ সব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে কোন স্বাস্থ্য সেবা পায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফলভাবে কলেরার টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, ডিপথেরিয়া ও হাম ছড়িয়ে পড়া মোকাবিলা করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রথম ২০১৭ সালে টিকাদান ক্যাম্পেইনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য জিএভিআই’র সমর্থিত জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর: ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এটা বৈশ্বিক ও প্রাথমিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে। তিনি বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার সুফল বৈশ্বিক এবং এর জন্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সোমবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ট্রাস্টিশীপ কাউন্সিলের প্ল্যানারি কাউন্সিলে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেয়া ভাষণে একথা বলেন তিনি। উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রায় সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অপরিহার্য। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি এমনকি অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকেও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন ধরণের অর্থনৈতিক ক্লেশ ছাড়াই সহায়তা করছে। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বাংলাদেশ সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিশ্চিতকরণে উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
পরে, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ পরিষদ কক্ষে জলবায়ু পদক্ষেপ শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ২শ’ কোটি মানুষের জীবন ধ্বংসের মুখে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী চরম জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে কার্যকর আগাম সতর্কবার্তা প্রক্রিয়ার কারণে হতাহতের সংখ্যা হাজার হাজার থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যতে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ।

Advertisement