ম,আ,মুক্তাদির ভাইয়ের ছেলে রাহাত লন্ডনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে

(ইব্রাহিম চৌধুরী খোকনের পোষ্ট)

ম,আ,মুক্তাদির ভাইয়ের ছেলে রাহাত লন্ডনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

সংবাদটি দিয়েছেন লন্ডন থেকে আমাদের কমরেডরা ।

৯৫ সালে দখন দেশ ছেড়ে আসি, লন্ডনে দেখেছি এক স্বপ্ন বিলাসী যুবকের স্বপ্ন আর বাস্তবতার সংগ্রাম।
দেখেছি , শিশু সন্তান রাহাতকে নিয়ে এক বোহেমিয়ান বাবার বিচরণ।
সময় গেছে, ম আ মুক্তাদিরও চলে গেছেন/
রাহাতের খুঁজ নেইনি আর ।
আজ খোঁজ পেলাম ,সংবাদটি পেলাম।
অনেকেই আজ খবরটি পেয়ে বেদানার হাহাকারে পেছনে ফিরে দেখবেন।
এক অসহায় আর্তনাদ উঠবে অনেকের বুকে।
রাহাত , বাবার কাছে ফিরে গেলো ?
১৯৮৫ সালের এক মধ্য দুপুরে মুক্তাদির হুলিয়া মাথায় নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রিয় শহর ছাড়ার সময়টিতেও ছাত্র সংঘর্ষ চলছিল। দলের নেতা-কর্মীরা হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে। পুলিশের তল্লাশি চলছে। সিলেট রেলস্টেশনের আউটার সিগনালে দাঁড়িয়ে হাতটা চেপে ধরে বলেছিলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই চলে আসব। ফিরে আসা হয়নি তাঁর। ১৯৯৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৪৪ বছর বয়সে জীবনের সব সংগ্রামের ইতি টানেন মুক্তাদির।
মাতৃভূমি ছেড়ে লন্ডনে গিয়ে বিপাকেই পড়তে হয় মুক্তাদিরকে।

চিন্তা ও সংস্কৃতিতে বিস্তর ফারাক স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মুক্তিযোদ্ধা, লড়াকু মুক্তাদির সংসার যুদ্ধে সহজেই হেরে গেলেন।

লন্ডনে যাওয়ার পর ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। শিশু সন্তানকে রেখেই স্ত্রী তাঁকে ত্যাগ করে চলে যান। চরম বেকায়দায় পড়েন মুক্তাদির।

একদিকে স্বজনহীন পরিবেশে শিশু সন্তানকে মা ছাড়া লালন পালন করা। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে বসবাসের বৈধতাও ছিল না তাঁর।

কাজ-কর্মহীন মুক্তাদিরের লন্ডন অধ্যায় ছিল আরও সংগ্রামের। শিশু সন্তানকে আগলে রেখে একসময় অবলীলায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা সব কর্মযজ্ঞে।

দেশের বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা, ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়া রাজনীতির সহযোদ্ধাদের নিয়ে মানসিক পীড়নে পড়েন মুক্তাদির। এর মধ্যে বাবা মারা যান।
বিয়ে বিচ্ছেদ পরবর্তী সামাজিক ও আইনি জটিলতায় ব্যক্তিগত জীবনে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় তাঁকে। তবে সক্রিয় থাকেন লন্ডনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে।

যুক্তরাজ্যে বাম রাজনীতিতে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন অবলীলায়। বাংলাদেশিদের নিত্যদিনের সাংগঠনিক কাজকর্মের অবধারিত সংগঠকে পরিণত হন।

যুক্তরাজ্যের নাগরিক অধিকার আন্দোলনে প্রগতিশীল ধারার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। মৃত্যুর কিছুদিন আগে মুক্তাদির চিন্তায় ও মননে কাছাকাছি আসেন অন্য এক নারীর।

বেশ ঘটা করে দ্বিতীয়বারের মতো সংসারী হওয়ার উদ্যোগ নেন। টেমস নদীতে জাহাজ ভাসিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের উৎসব করেন লন্ডনে তাঁর অনুরাগীরা।

সেই স্ত্রীর ঘরে আরেক সন্তানের জন্মের দুই সপ্তাহ পরই মারা যান মুক্তাদির। নানা অপ্রাপ্তির তীব্র বেদনা নিয়ে সমাজ বদলের এক মাঠ সংগঠক হয়তো ব্রতী হয়েছিলেন নিজের জীবনটাকে একটুখানি বদলাতে। তা আর হয়ে ওঠেনি।
স্ত্রী সন্তান রেখে দূর দেশের রাজপথেই ছিল মুক্তাদিরের শেষ দিন। যাদের কর্মচাঞ্চল্যে জীবনের অন্তিম সময়েও সক্রিয় ছিলেন, তারাও মনে রাখেননি।
সময়টা বড় নিষ্ঠুর। বাস্তবতা বড় নির্মম।
রাহাতও আজ চলে গেলো!
অবেলায় , অজানায়।

নোট:ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন বিশিষ্ট সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ৷ তার এই লেখাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহিত ৷

Advertisement