মধ্য এশিয়ায় চীনভীতি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের তিন দশকেরও বেশি সময়ে চীন মধ্য এশিয়াজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘প্লেয়ার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর বেশির ভাগের সঙ্গেই চীনের রয়েছে ক্রমবর্ধমান চোখে পড়ার মতো রাজননৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক। কিন্তু এসব দেশ চীন সম্পর্কে জানে বা বোঝে কমই। এমন কি তারা এ দেশটিকে ভয় পায়। ২০০০-এর দশক থেকেই মধ্য এশিয়ার মিডিয়াগুলোতে বেইজিংয়ের নীতির সমালোচনা করা হয়েছে। এই অঞ্চলে চীনের ‘কোমল সম্প্রসারণ’-এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে গত তিন বছরে কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তানে অনেক বিক্ষোভ হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতিতে ক্রমবর্ধমান চীনভীতির বড় রকম নেতিবাচক প্রভাবের কথা মাথায় রেখেই মধ্য এশিয়াসহ অন্যদের সঙ্গে চীন ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’ ও ‘সফট পাওয়ার পলিসি’ রক্ষা করে চলছে।

বেইজিং সফল হচ্ছে অথবা সফল হবে কিনা- তা কি এই অঞ্চলে তাদের প্রবণতাকে বিপরীতমুখী করে দেবে? চীনভীতি কি চীনের বর্তমান অবস্থান ও সম্পর্ককে বিপন্ন করতে পারবে?

স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই এ অঞ্চলের সব সরকারের সঙ্গে শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শুরু করে বেইজিং।

চীনের বন্ধুভাবাপন্ন প্রতিবেশী নীতি দ্রুত দাঁড়িয়ে যায় উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্কে। বছরে ২৬০০ কোটি থেকে ৪৫০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য করার মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার প্রতিটি দেশের সঙ্গে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রথম অথবা দ্বিতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে আছে চীন। তারা এখন রাশিয়ার থেকে অনেক এগিয়ে আছে। অথচ এই রাশিয়া ২০০৮ সাল নাগাদ নিজেদের প্রাধান্য যথেষ্ট বিস্তার করেছিল। তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ উত্তোলন, অবকাঠামো এবং ব্যাংকিং খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রধান বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে বেইজিং। এ ছাড়া এ অঞ্চলে ভোক্তাপণ্য রপ্তানি দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের।

২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘোষণায় এ অঞ্চলে চীনের উচ্চাভিলাষ প্রকাশ পায়। তিনি হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে। এর উদ্দেশ্য এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ এবং অন্য মহাদেশগুলোর সঙ্গে প্রাচীণ বাণিজ্যিক রুট ব্যবহার করে আঞ্চলিক সংযুক্তি, বাণিজ্য ও অবকাঠামোর উন্নয়ন। উপরন্তু চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সরকার আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি অভিন্ন অবস্থানে এসেছে। তারা সহিংস উগ্রপন্থার মতো হুমকি মোকাবিলার জন্য সহযোগিতার একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে চীনের উন্নয়ন মডেলের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় পুুঁজিবাদ এবং রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি। তাই বৈশি^ক শক্তি স্তরে নিজেদের সফল আবির্ভাব সত্ত্বেও এসব মডেল অন্যান্য মডেল, যেমন রাশিয়ার মডেলের তুলনায় অনেকটাই অজনপ্রিয়। এই উন্নয়নকে মধ্য এশিয়ার যুবসমাজের অর্ধেক থেকে তিন চতুর্থাংশ দেখে থাকে বেঞ্চমার্ক হিসেবে। সোভিয়েত অঞ্চল থেকে যে ‘ক্লিক’ এবং ভীতি ছড়ানো হয়েছে, উত্তরাধিকারসূত্রে তার ফলে এ নিয়ে উদ্বেগ আরো বেশি। চীন ও সোভিয়েত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সোভিয়েত শাসকগোষ্ঠী চীনকে ইসলাম ও সব তুর্কি জনগণের শত্রু হিসেবে ফুটিয়ে তোলে।

এ ধরনের বিষয় মধ্য এশিয়ায় চীনের জন্য সুনির্দিষ্ট নয়। এশিয়া থেকে আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় বেইজিংয়ের যে উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে বিশে^ নেতৃত্বদানকারী শক্তি হওয়ার এবং বিদেশে দ্রুতগতিতে তাদের যে উপস্থিতি তাতে বিতর্ক, বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি চীনভীতি সেন্টিমেন্টও দেখা দিয়েছে।

Advertisement