॥ ইমরান চৌধুরী ॥
আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম পৃথিবীর দেশগুলো একই ধরনের প্রকোপে নিপাতিত হয়েছে, যার উৎপত্তি, ব্যাপ্তি, কারণ, উপসর্গ, ব্যবস্থা, চিকিৎসা, অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বরাজনীতি হিমশিম খাচ্ছে প্রত্যহ । রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা, ইন্টারনেটসহ সকল সংবাদ মাধ্যম, সাধারণ জ্ঞান, সমীক্ষা, উপাত্ত আজ প্রায় তিন মাস যাবত করছে এক ইআলোচনা, বিশ্লেষণ, উপদেশ, আদেশ ।
বিশ্ব রাজনীতি ; আন্ত দেশীয় রাজনীতি থেকে আলাদা, আবার অনেক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন মত প্রকাশ করে, কিন্তু আপাতঃ দৃষ্টিতে তারা মনে করেন যে, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ারকারণে রাষ্ট্রগুলো খুব একটা আনুষঙ্গিক নয় । যদিও এই তত্ত্ব নিয়ে অনেক বিতর্ক বিদ্যমান । কারণ , অনেক বিজ্ঞ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এবং অর্থনীতিবিদরা তর্ক করে আসছেন যে, রাষ্ট্রগুলো বিশ্বায়নের এই প্রক্রিয়ার একটি প্রয়োজনীয় অংশীদার। বিশ্বায়নের সব কার্যকলাপ, পদ্ধতি এবং প্রকল্পের বাস্তবে পর্যবসিত হতে রাষ্ট্রই সাহায্য করেছে, রাষ্ট্র ঐ সবকে রাহুগ্রস্থ হতে দেয়নি । রাষ্ট্রই এখনও সামরিক নিরাপত্তা প্রদান কারি ; একমাত্র প্রাথমিক মিলিটারি নিরাপত্তা তারাই দিয়ে থাকে, রাষ্ট্রই দিতে পারে বিশ্বায়নের জন্য স্থান সমূহ এবং তারাই এনে দিনে পারে এই প্রক্রিয়ার স্বপক্ষের গণতান্ত্রিক আইনানুগ বৈধতা এবং প্রয়োগ করতে পারে আইনি কাঠামো প্রথম পর্যায়ে – অতএব বিশ্ব রাজনীতি এবং রাষ্ট্র ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত – একে ওপরের সম্পূরক ।
গত দুমাস যাবত জাতিসংঘে নিরাপত্তা কাউন্সিলে সন্ধিস্থাপনের আলাপ আলোচনা করেও ‘ কভিট ১৯ পরিণতির কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে নাই গতকাল রাত পর্যন্ত । যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাকি ১৪টি দেশের আনিত প্রস্তাবনাগুলোকে, মনে হচ্ছে না তারা একটা যৌথ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবে বলে । এদিকে ইইউর প্রেসিডেন্ট এই জোটের রাষ্ট্রগুলো তাদের সীমান্ত বন্ধ করার নিন্দা করেছে, কারণ সীমান্ত বন্ধ করায় পি , পি , ই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌছতে ২৪টি অতিরিক্ত মূল্যবান ঘণ্টা দেরি হওয়াতে অনেক চিকিৎসা ব্যাঘাত ঘটেছে ।
অন্যদিকে মহামারীর সময় থেকে অনেকেই চীন দেশের দিকে উত্থিত আঙুল প্রদর্শন করে আসছে । এক দেশ অন্য দেশকে দোষারোপ করে আসছে নিত্য। হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ) তার দায়িত্ব ঠিক মত পালন না করে প্রথম আঘাত প্রাপ্ত দেশের পক্ষধারণ করেছে বলে অনেকেই ধারনা পোষণ করছে। অনেক দেশ তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্তার অপর্যাপ্ততা গোপন করার জন্য মৃত্যু সংখ্যা গোপন করছে । ঊূহান এর আসল ঘটনা কি নিছক এক গল্প যা কিনা ভিক্ষুকের বিশ্বাস জাতীয় কল্প লোকের গল্প বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ।
কোন কোন দেশ মানুষের জীবন থেকে নির্বাচন উত্তরণ, অর্থনীতি, জনগণের ফ্রিডম, বিজ্ঞান এর প্রতি অনীহা প্রদর্শন করেছে, মহামারীর মধ্যেও রাজনৈতিক সূতাকাটা (পলিটি ক্যালস্পিন ) পুরদোমে চালিয়ে গেছে, সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি সহজ সরল বাংলায় একটা হযবরল অবস্থায় পরিণীত করেছে । এর থেকে বের হয়ে আসতে পৃথিবীকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে বলে মনে হচ্ছে । সবচে বড় যে জিনিশটা দৃষ্টিকটু লেগেছে সেটা হচ্ছে , পি, পি, ই নিয়ে অঘোষিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আবার প্রমাণ করেছে এই স্বার্থপর জগতে কেউই কারো প্রকৃত বন্ধু বা সুহৃদ বা মিত্র নয় ।
তারপর আসা যাক, মহামারী ও রোগ নিরাময়ের টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে এক নতুন ইঁদুর দৌড়, অন্যরা আবার শুরু করেছে সাইবার এস্পিওনায এবং এক দেশ তার দেশের আন্তর্জাতিক তথ্য চোর দিয়ে অন্য দেশের টিকা উদ্ভাবন গবেষণাকে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে পাচার করার চেষ্টা করছে যাতে সবার আগে টিকা আবিষ্কার – উৎপাদন – প্রতিপালন করে নিজের দেশকে সম্পূর্ণ রোগ মুক্ত করত অন্য দেশে চড়া দামে রফতানি করে অধিক রাষ্ট্রীয়ভাবে মুনাফা অর্জনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । আবার এই সব দেশরাই অনুন্নত দেশকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন, দুর্নীতি নিয়ে সাধুবাদ এর বুলি কপচায় ; কি বিচিত্র এই ভুবন !
বিশ্বায়ন কি নিরাসনে ? বিশ্ব রাজনীতি, দিপাক্ষিক, এলাইয়েন্স, ভূ রাজনীতি, ভূ অর্থনীতি নিয়ে কি শুরু হবে এক নতুন নব্য বিশ্ব রাজনীতি ? এক নতুন স্নায়ু যুদ্ধ ? নাকি সরাসরি যুদ্ধ – কারণ কথায় বলে ‘‘ যুদ্ধ শান্তির পূর্বশর্ত ‘‘ ।
জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের একদলীয় অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় উপনিবেশিকবাদ, রাশিয়ার নতুন পেশী প্রদর্শন, ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে গ্রহণের মাধ্যমে উত্থান এবং এই সবের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে কি কভিড ১৯ এর পরবর্তী রাজনীতি?
নাকি আন্ত দেশীয় ভূ রাজনীতি এবং ভূ অর্থনীতি নিয়ে মেতে উঠবে কভিড ১৯ পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতি?
সময় ই বলবে পৃথিবী কোন দিকে ধাবিত হবে !!!!