বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব অধস্তন (বিচারিক) আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বিচারক শারীরিক উপস্থিতির পাশাপাশি প্রয়োজনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারবেন বলে নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। তবে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম বিচারকের শারীরিক উপস্থিতিতেই সম্পন্ন করতে হবে।আগামীকাল রোববার (২৩ জানুয়ারি) থেকে দেশের সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।শনিবার (২২ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশনাক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সব অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালের বিচারক দেওয়ানি ও ফৌজদারি মোকদ্দমা/মামলায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতিতে অথবা “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০” এবং এই কোর্ট কর্তৃক জারিকৃত এতদ্সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুসরণপূর্বক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সকল প্রকার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।এতে আরও বলা হয়, প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক শারীরিক উপস্থিতিতে অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহে সকল প্রকার মামলা দায়ের করা যাবে। বিচারক শারীরিক উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ অধস্তন ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহে শারীরিক উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ আবেদন দাখিল করতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিতকরণ এবং সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত জেলা ও দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গাউন পরিধানের বাধ্যবাধকতা নেই উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই আদেশ প্রতিপালনে কোনরূপ সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা চাওয়া যাবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কাজ ভার্চুয়ালি পরিচালিত হচ্ছে।এর আগে দেড় বছর ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচার কাজ চলার পর গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর থেকে একে একে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারক কার্যক্রমে ফেরে সবগুলো হাইকোর্ট বেঞ্চ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরই একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ- ২০২০’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।এর দুদিন পর ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে সশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এরপর ওই বছরের ১০ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল আদালতের দুয়ার খুলে দেন সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মহামারির এক দুঃসময়ে দেশের বিচার বিভাগ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে।প্রথমে দেশের অধস্তন আদালত, এরপর হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ও আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। পরে ভার্চুয়ালের পাশাপাশি শারীরিক উপস্থিততে আদালতের কার্যক্রম চলে। একপর্যায়ে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লে আবার সব আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুরু হয়।