লন্ডনে স্মরণ সভা: পীর হবিব প্রেরণার উৎস হলে রাজনীতিই লাভবান হবে  

ব্রিটবাংলা ডেস্কঃ: বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির কিংবদন্তী পুরুষ জননেতা পীর হবিবুর রহমান শুধু একজন রাজনীতিক ছিলেননা, ছিলেন একটি রাজনৈতিক শিক্ষাঙ্গন, একটি প্রতিষ্ঠান।

ইউটিউব লিঙ্ক:

https://youtu.be/R_b826mjVyA

এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিলে বর্তমান প্রজন্ম থেকেও দেশ পেতে পারে এমন কিছু রাজনৈতিক কর্মী, যারা মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাখতে পারে যুগান্তকারী ভূমিকা।

প্রয়াত জননেতার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার পূর্ব লন্ডনের গ্রেটোরেক্স ষ্ট্রীটের বিডিসি হলে পীর হবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন, ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

সংগঠনের সভাপতি আজিজ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সৈয়দ আনাস পাশার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পীর হবিবুর রহমানের রাজনীতির এক সময়ের অনুসারী, ব্রিটেনের অভিবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক প্রধান সংগঠন

জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্রেন্টস (জে সি ডব্লিউ আই) এর অবসরপ্রাপ্ত চীফ এক্সিকিউটিভ হাবিব রহমান।সৈয়দ বদরুল হোসেনের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া স্মরণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, পীর হবিবুর রহমানের অনুসারী মুক্তিযোদ্ধা আহবাব চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন, সাবেক সিপিবি নেতা সৈয়দ রকিব, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, লেখক, সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন, পীর হবিব ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি আব্দুল করিম, জাফরাবাদস্কুল এন্ড কলেজ উন্নয়ন কমিটির সেক্রেটারী এনামুল হক, পীর হবিবুর রহমানের বোনের ছেলে সৈয়দ বদরুল হোসেন ও নাতি ইসমাইল হোসেন লিটন প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে প্রয়াত জননেতার দুই ছেলে মোজাফফর হোসেইন লুকু ও মন্জুর হোসেইন সুলু উপস্থিত ছিলেন।

মূল বক্তা হাবিব রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমার জীবনের মানবিক মূল্যবোধের প্রথম পাঠ নিয়েছিলাম জননেতা পীর হবিবুর রহমানের কাছে।

একজন জাতীয় নেতা হয়েও সাধারণ মানুষের বেশভূষায় চলাফেরা করা সততার প্রতীক এই জননেতার সান্নিধ্যে না আসলে রাজনীতি, সমাজ, মানবিক মূল্যবোধ এই বিষয়গুলোর সংজ্ঞা হয়তো আজকের বাস্তবতায় ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হতো আমার সামনে।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের সম্পর্ক কি হওয়া উচিত সম্ভবত এর প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষন নিতেই একবার আমাকে মাওলানা ভাসানীর সাথে ট্রেনের একই কামরায় সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন পীর হবিবুর রহমান।সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিকের সম্পর্ক বিষয়ে ঐ দিন যে পাঠ নিয়েছিলাম আজকের বাস্তবতায় সেটি এখন আর নেই।হাবিব রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকে যে জিনিষটির সবচেয়ে বড় অভাব, তাহলো মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী।প্রশিক্ষনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য যেমন দক্ষ কর্মিবাহিনী তৈরী করা হয়,

দেশ বাঁচাতে হলে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ঠিক তেমনি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী গড়ে তুলার এখন আর কোন বিকল্প নেই।এক্ষেত্রে পীর হবিবুর রহমানের মত বিগত রাজনৈতিক আলেখ্য হতে পারেন সেই প্রশিক্ষন কেন্দ্র ও গবেষণার উপাধান।

তিনি বলেন, প্রয়াত এই নেতারা প্রেরণার উৎস হলে রাজনীতির বর্তমান দৈন্য দশা থেকে হয়তো আমরা বেড়িয়ে আসতে পারি।

রাষ্ট্র ও সমাজ পীর হবিবুর রহমানের মত নেতাদের মূল্যায়নে ব্যর্থ হচ্ছে, এমন অভিযোগ এনে স্মরণ সভার অন্যান্য বক্তা বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখলেও ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিন আমলে গণ মানুষের রাজনীতির চৌকশ কর্মী, ত্রি-কালদর্শী রাজনীতিকপীর হবিবুর রহমানকে মূল্যায়নে ব্যার্থ হয়েছে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ।

স্মরণ সভার অন্যান্য বক্তা বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখলেও ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিন আমলে গণ মানুষের রাজনীতির চৌকশ কর্মী, ত্রি-কালদর্শী রাজনীতিক পীর হবিবুর রহমানকে মূল্যায়নে ব্যার্থ হয়েছে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ। তারা বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পরের বছর ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার বিরোদ্ধে চক্রান্ত শুরু হলে প্রান্তিক জেলা সিলেটে পীর হবিবুর রহমান প্রথম বাংলা ভাষার পক্ষে  কর্মসূচী নিয়ে জন সমক্ষে হাজির হওয়ার মত ইতিহাস সৃষ্টি করলেও রাষ্ট্রিয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’ সিলেক্ট কমিটির নজরে আসেননা কিংবদন্তী এই নেতা। সাম্প্রতিক সময়ে নেতা-পাতিনেতাদের নামে স্থাপনার নামকরণের হিড়িক পড়লেও সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা পীর হবিবুর রহমানের নামে কাজীর বাজার সেতু নাম করনের দাবী উঠলেও তা হয় উপেক্ষিত।

বক্তারা বলেন, স্থাপনার নাম করণ বা রাষ্ট্রিয় পদক দিতে কার্পণ্য করেন, আপত্তি নেই, ‘রাজনীতি’ নামের পবিত্র শব্দটির ইমেজ রক্ষার স্বার্থে কিংবদন্তী এই নেতার জীবন দর্শন থেকে শিক্ষা নিতে আপনাদের কর্মীদের উৎসাহিত করুন। কারন প্রয়াত এই নেতার রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি চরিত্রের অর্ধেক গুনও যদি এই প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীরা অর্জন করতে পারে, তাহলে বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক দৈন্য দশা থেকে আমরা কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পারি।

অনুষ্ঠানের সভাপতি আজিজ চৌধুরী তাঁর সমাপনী বক্তব্যে স্মরণ সভায় উপস্থিত হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,সমাজ,রাজনীতিও বর্তমানপ্রজন্মের স্বার্থেই পীর

হবিবুরর হমানের মত নেতাদের জীবন দর্শন নিয়ে আমাদের চর্চা  করা উচিত।

‘পীর হবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন’সীমিত আকারে হলেওএই চর্চা অব্যাহত রাখতে চায়।

এই কাজে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

Advertisement