:মুনজের অাহমদ চৌধুরী:
“পাচঁ জানুয়ারী ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনটি বিতর্কিত,অগ্রহনযোগ্য ছিল।” সে কথাটি তখন এবং এখনও সবচেয়ে জোর দিয়ে বলছেন,যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে।
অথচ,৫ জানুয়ারীর তারেক রহমানের ভাষায় ‘অগ্রনযোগ্য ও বিতর্কিত নির্বাচনের’ ঠিক চার বছর দশ দিন পর, একই ধারায় ( অর্থাৎ বাকী পাচঁ প্রতিদ্বন্দী মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে,নিজেদের মনোনয়ন জমা না দেয়ায় ) কাউন্সিলের ধার্য তারিখের অাগেই পুনঃ নির্বাচিত হল যুক্তরাজ্য বিএনপির পুরনো নেতৃত্ব।
পাচঁ জানুয়ারীর সেই নির্বাচনে যেমন করে বিভিন্ন স্থানে “জাল ভোট অার কেন্দ্র দখলের একতরফা উৎসব হয়েছিল ” – বিএনপি ও তারেক রহমানের ভাষায়;লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির এবারের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেবল সেটি হয়নি। কারন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে দেশে কোন কোন অাসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু,লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বিএনপির এবারের ‘সচ্ছ’ ‘সিষ্টেমের’ কাউন্সিলে অতদূর পর্যন্ত যেতে হয়নি! কাউন্সিলের দুদিন অাগেই যে দুটি পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল, সে দুটি পদে বর্তমান দুজন ছাড়া বাকী কেউ নিজেদের মনোনয়ন অার জমাই দেননি।
পাচঁ জানুয়ারীর নির্বাচনে দেশের বেশিরভাগ অাসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় তৎকালীন এমপিরাই পুনঃ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কারন,বাকী প্রার্থীরা নিজেদের মনোনয়ন ছেড়ে এভাবে নীরবেই বর্জন করেছিলেন।
পাঠক, নিশ্চয় মনে অাছে, পাচঁ জানুয়ারীর নির্বাচনে ভোটের নির্ধারিত তারিখের অাগেই বিনা ভোটে নির্বাচিত সাংসদদের বিজয়, অভিনন্দন অার শুভেচ্ছার উৎসব হয়েছিল। এখানেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
শুরুতে এ কাউন্সিলটি অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল গত ২ জানুয়ারী। কিন্তু, ঐ কাউন্সিলে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠায় অাগের রাতে ( ১ জানুয়ারী) বিএনপির কেন্দ্রীয় অার্ন্তজাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে যুক্তরাজ্য বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সেটি স্থগিত করা হয়। পরবর্তী কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারিত হয় ১৫ জানুয়ারী। মাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় নির্বাচন কমিশন। ঐ নির্বাচন কমিশন যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সচ্ছ ও গ্রহনযোগ্যতম নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষনাও দেন। মাহিদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন,যুক্তরাজ্য বিএনপির ৪৫ টি জোনের সভাপতি-সম্পাদক ছাড়াও অারো তিন জন করে ভোটার বাড়িয়ে ২২১ জনকে কাউন্সিলার করেন।
সভাপতি পদে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার ফি নির্ধারন করা হয় দুই হাজার পাউন্ড ( বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় দু লক্ষ বিশ হাজার টাকা) ও সাধারন সম্পাদক পদে দেড় হাজার পাউন্ড!
অাজ ( ১৫ জানুয়ারী) অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলে বর্তমান সভাপতি এম এ মালেক ছাড়াও সভাপতি পদে সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন, বর্তমান যুগ্ম সাধারন সম্পাদক তাজ উদ্দীন মনোনয়নপত্র কেনেন। অার সাধারন সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারন সম্পাদক কয়সর এম অাহমেদ ছাড়া মনোনয়নপত্র কেনেন সাবেক কমিটির প্রথম যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নাসিম অাহমদ চৌধুরী,যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক অাহবায়ক দেওয়ান মুকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহ সাধারন সম্পাদক এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল।
গত শনিবার মনোনয়ন পত্র জমাদানের শেষ দিনে এ পাচঁ প্রার্থীর কেউই কেন মনোনয়নপত্র জমা দিলেন না,এ প্রশ্নের উত্তরে,তারা সবাই লন্ডনে বাংলা টেলিভিশনগুলোকে সাক্ষাতকারে বলেছেন কেবল, “নো কমেন্টস”। বলিহারি যাই দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্র চর্চার!
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে যুক্তরাজ্যে তারেক রহমান ও বিএনপি সংক্রান্ত কোন তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনে প্রায়ই দেশ থেকে বিএনপি বীটের সহকর্মী সাংবাদিকদের ফোন পাই। গত দুদিনে অামি অামার সব সোর্স ব্যবহার করে খবরের কৌতুহল জানবার অভিপ্রায় থেকেই ভেতরের খবরটি জানবার চেষ্টা করি।
নিশ্চিত হই , পাচঁ প্রার্থী গত ১২ জানুয়ারী এ নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্তত চারটি বড় অসঙ্গতির প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ বা অাপত্তিপত্র প্রদান করেন। অভিযোগপত্রটির ব্যাপারে মিডিয়া বা সংবাদকর্মীদের কাছে কোনভাবেই মুখ না খুলতে কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সে নির্দেশনার বিষয়টি প্রার্থীরা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেই বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
যা হোক,তারেক রহমানের কাছে দেয়া,সে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়,’বর্তমান সভাপতি সস্পাদক ছাড়া অন্য পাচঁ প্রার্থী যুক্তরাজ্য জুড়ে ২২১ জনের কাউন্সিলার তালিকাটি হাতে পান গত ১১ জানুয়ারী। ভোট গ্রহনের মাত্র তিন দিন অাগে। মাঝখানে শুক্র ও শনিবার থাকায় (প্রায় ৯৫ ভাগ বাংলাদেশী প্রবাসী এ দুদিন রেষ্টুরেন্ট ও ট্যাক্সিতে সার্বক্ষনিক সময় দেওয়ায়)। তারা নির্বাচনী প্রচারনার সময় পান মাত্র একদিন। অার ২২১ জন ভোটারের নাম পদবি ভোটার তালিকায় থাকলেও ঠিকানা ও সবগুলো ফোন নাম্বারও উল্লেখ ছিল না। অভিযোগপত্রে অারো বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে বর্তমান সভাপতি সস্পাদক যেহেতু প্রার্থী, তাই তাদের স্বপদে বহাল না রেখে নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে কাউন্সিল করার অাহব্বান করা হয়।
দুই
এখানে স্মরণ করুন পাঠক, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের অাগেও এভাবে,( লন্ডনের বিএনপির নেতাদের তারেক রহমানের কাছে করা এ অাবেদনপত্রটির মতন করেই), ক্ষমতাশীনদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিরপেক্ষ সরকার বা তত্বাবধায়কের মাধ্যমে নির্বাচন চেয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া,তারেক রহমানের বিএনপি সহ সমমনা দলগুলি।
তখন বাংলাদেশের সে সময়কার সরকার যেমন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের এ ‘ন্যায্য দাবী’ টি শুনেননি। অন্তত তারেক রহমান বা বিএনপির ভাষায়।
তেমনি গত তিনদিন অাগে করা তারেক রহমান বরাবরে যাওয়া লন্ডনের নিজ দলের নেতাদের অাবেদনেও সাড়া দেননি লন্ডনে গত ১০ বছর ধরে বসবাস করে দলে সার্বক্ষনিক সক্রিয় তারেক রহমান।
জনাব তারেক রহমানের সাড়া না দেবার পথটির ফলাফলে অামরা দেখতে পাই,লন্ডনে বিএনপি নেতা,ও এ নির্বাচনের
নির্বাচন কমিশন কমিশনার মাহিদুর রহমান ঘোষনা করেন, ১৫ জানুয়ারীর ভোটের অাগেই নিয়ম অনুযায়ী অার কোন বিকল্প বৈধ প্রার্থী না থাকায় বর্তমান দুজনই অাবার টানা দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের মেয়াদের জন্য সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হচ্ছেন।
এখানকার অনেক বিএনপি কর্মীর প্রশ্ন গত দশ বছরে তারেক রহমান এদেশে থাকার পরও ,একই ব্যাক্তিকে কেন টানা তিনদফায় দলের সেক্রেটারী রাখতে হয়? কেন সভাপতি বার বার করা হয় ১৭ বছরের পুরনো সেক্রেটারী দুবারের যথাক্রমে অাহবায়ক ও সভাপতিকে। তাহলে কোথায় সৃষ্টি হল নতুন নেতৃত্ব?
এখানে,খেয়াল করবেন প্রিয় পাঠক, ৫ জানয়ারীর নির্বাচনের অাগে বাংলাদেশের সে সরকারের ক্ষমতাশীনরাও বলেছিলেন,” এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন”। বিনা প্রতিদ্বন্দিতার বিএনপির এখানকার নির্বাচনও তো শেষবধি দাড়াল লোক দেখানোর নিয়ম রক্ষায়। ক্ষমতার ম্যারপ্যাচে তো অংশগ্রহন মূলক প্রক্রিয়ায় দলের নেতৃত্ব নির্বাচন তো তারেক রহমান যেখানে বাস করেন সেখানেই দলটি করতে পারল না।
নিজ দলে এমন একটি ভোটবিহীন নির্বাচনের পথ ধরে সে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পথটি প্রকারান্তরে কি অনুসরন করল না যুক্তরাজ্য বিএনপি? কেন এমনটি করতে হল? তাতে কি দল লাভবান হলো? নেতাকর্মীরা কি উজ্জীবিত হলেন বা নতুন কোন বার্তা পেলেন। বিএনপি কি নিজেদের ঘরে একটা সুষ্ঠ নির্বাচনের ‘রোল মডেল’ বা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারত না। সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং একটা অবস্থা সৃষ্টি করা করা,প্রতিদ্বন্দিতাপুর্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলে গনতন্ত্র চর্চার নজীর সৃষ্টি করার সুযোগ থেকে কেন দলটি নিজেদের বঞ্চিত করল। বিশেষ করে তারেক রহমান এখানে থাকায় এখানকার বিএনপি নিয়ে কেবল এখানকার নেতাকর্মী নয় মিডিয়া সহ সবারই অাগ্রহ বিষয়টি নিয়ে।
তিন.
অাজ সোমবার দিবাগত গভীর রাতে যখন এ লেখাটি লিখছিলাম,তখন যুক্তরাজ্য বিএনপির এক নেতার ফোন এল। তিনি একদম স্কুল জীবন থেকে ছাত্রদল করে এখন অবধি বিএনপির,বিশেষত শহীদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের একনিষ্ট ভক্ত একজন নেতা। এরকম একটা লেখার ভাবনার কথাটি তাকে বললেই তিনি বললেন,” লিখছেন,লিখুন। অাপনার কাজই তো লেখা। কিন্তু বিএনপির মতো দল পত্রিকায় সংবাদ,কলাম বা গঠনমুলক সমালোচনা দেখে নিজেদের ভ্রান্তি থাকলে তা সংশোধন করবে এটা ভাবা অবান্তর। বরং অতীতে বহু ক্ষেত্রে জনগন দেখেছে, নেতার ভূল সিদ্বান্তই যে সঠিক ছিল সেটা বার বার প্রমানের সর্বচ্চো চেষ্টা করার নজীর। বরং অাপনার লেখাটি প্রকাশের পর অাপনার বিরুদ্ধেই ব্যাক্তিগত পর্যায়ে অাক্রমন না এলে ই অামি অবাক হব।
সংসদের বাইরে থাকলেও দেশে জনগনের দৃষ্টিতে বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপি। দলটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে প্রতিদ্বন্দীতামূলক একটি নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছে। নিজেদের ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে অান্দোলন করছে।
দলটির দ্বিতীয় সর্বচ্চো নেতা জনাব তারেক রহমান গেল দশটি বছর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন গনতন্ত্রের সূতিকাগার খ্যাত এ লন্ডনে বসবাস করছেন। সাত বছর ধরে অামিও তাঁর শহরের কাছের দূরত্বের প্রবাসী। সংবাদের সুত্র ধরেই দুবার তাঁর সাথে দেখা ও কথা বলবার সুযোগ হয়েছিল।
ব্যাক্তিগত স্মতিতর্পনের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী শ্রদ্বেয় পাঠক। অামার নিজের কাছে তাঁর সাথে কথা বলে তখন মনে হয়, তিনি কারো কথা গুরুত্ব দিয়ে,অাগ্রহ নিয়ে শোনেন। কনভিন্সিং।
এ লেখাটি লেখবার কারন অামার “সে মনে হবার” অতীত অনূভুতির জায়গাটি থেকে।
ওয়ান ইলেভেনের ঝড়ের পর থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন দলটির দ্বিতীয় নেতা তারেক রহমান।
মরহুম সিরাজুর রহমানের
কোন একটা লেখায় পড়েছিলাম,’ তারেক রহমান বাংলাদেশের তৃনমূলে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ঘূরে দলে তৃনমূলের নেতৃত্ব সরাসরি কাউন্সিলে নির্বাচিত করার বিপ্লব করেছেন। তাহলে এখানে কেন তিনি নিজে উপস্থিত থাকার পরও সেটি হচ্ছে না বা হল না? অনেক কৌতুহলী কর্মীর প্রশ্ন,লন্ডনে বিএরপির গত দুটি কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তারেক রহমান সরাসরি জড়িত ছিলেন। কিন্তু এবার শুরু থেকেই কেন তিনি কাউন্সিল প্রক্রিয়ার বাইরে? যেখানে অভিযোগ পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের,সেখানে থেকেও নেতার এমত নিরবতা বা দলের নেতাদের লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড না পাওয়ার অভিযোগ তো সরাসরি তারেক রহমানের কাছে।
সেই ভোট বিপ্লব (!) করে অাসা নেতা এ শহরে অাছেন। অাছেন সার্বক্ষনিক সক্রিয় বিএনপিতে।
অার যুক্তরাজ্য বিএনপির সাংগটনিক মর্যাদা দেশে বিএনপির একটি সাংগঠনিক জেলা সমপর্যায়ের।
দীর্ঘ লেখায় অাপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী পাঠক।
তারেক রহমান দলটির সাংগঠনিক লন্ডনের এ জেলায় থাকেন অাজ দশ বছর ।
তার নিজ দলের একটি জেলা কমিটির নির্বাচন কেন ব্যালটের ভোটে গড়াল না, সেটা নিয়ে পাঠকের অাগ্রহ থাকবে।
বহু বিএনপিমনা পাঠকেরও অাগ্রহ থাকবে,তারেক রহমান এখানে দশ বছর বসবাসের পরও কেন বিএনপির মতোন একটি জনসমর্থননির্ভর দল ছোট একটা জেলা কমিটির সমপর্যায়ের কাউন্সিল সুষ্ঠভাবে দলটি ভোটে গড়াতে পারে না? কেন বার বার অসচ্ছতা,পক্ষপাতের অভিযোগ উঠে।
তবে কোন যোগ্যতায় বাংলাদেশে সরকারের কাছ থেকে তারা দেশে সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন অাদায় করবে? অাদৌ কি করতে পারবে?
দেশে একটা অাক্ষরিক অর্থের বিরোধীদল নেই। সরকারের বহু কর্মকান্ডে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে অামিও বিরক্ত। কিন্তু জনগন কেন বিএনপিকে এ সরকারের বিকল্প ভাবছে না? বিএনপির ভাষায় “জুলুমবাজ,দেশবিরোধী” এ সরকার ৯ বছর একটানা ক্ষমতায়। দীর্ঘতম ক্ষমতার থাকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ অাওয়ামীলীগ। এতদিনে কেন “দেশবিরোধী” একটা সরকারের বিরুদ্ধে একটা জনঅান্দোলন গড়ে তুলতে পারল না বিএনপি ? তাদের রাজনৈতিক ভূলেই যে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন এটা তো বাস্তবতা।
বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা এ শহরে থাকবার কারনেও নিজেদের দলে তারা লোক দেখানো হলেও অংশগ্রহনমূলক ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করে প্রমান দেখাতে পারত। যুক্তরাজ্য বিএনপি তো সব প্রার্থীর জন্য অভিযোগবিহীন সচ্ছ একটি পন্থায় একটা ব্যালট বিপ্লবের নির্বাচনের মাধ্যমে তারেক রহমানের নেতৃত্বের সক্ষমতার প্রমান দিতে পারত। অনুকরনীয় কিছু করে দেখাতে পারত দলের দেশের নেতাকর্মীদের।
তাতে করে অন্তত দেশের নেতাকর্মীরা নেতৃত্বের প্রতি উজ্জীবিত হয়ে নিদেনপক্ষে হলেও ফেসবুকের শরীরে কিছু ‘ষ্টাটাস’ লিখে অনলাইন রাজনীতি চাঙ্গা রাখতে পারতেন।
দলটি নিজেদের দ্বিতীয় সর্বচ্চো নেতাটি এখানে থাকার পরও এমন একটি নিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দীতামূলক ভোটপ্রদানের অাবহ সৃষ্টির সুযোগ করতে পারত। একটা জেলা কমিটির দুটো পদে ‘মিডিয়ার চোখ হয়ে জনগনের চোখে পড়বার মতো’ ভোটের লড়াই মাঠে গড়াতে দিতে পারত। তাতে করে নেতৃত্বের সক্ষমতাটুকু অন্তত প্রমানিত হতো।
এটুকু অন্তত বাহ্যিকভাবেও যাঁরা ম্যানেজ করতে পারলেন না,সে নেতৃত্বের অান্দোলনে বা রাজনীতিতে বাংলাদেশে একটা প্রতিদ্বন্দিতামূলক সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিশ্বাসটি,বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একজন ভোটার হিসেবে অামি কিভাবে করব?
পুনশ্চঃ
দেশে একটি কার্যকর বিরোধীদল না থাকবার দায়,সবকিছু একপেশে হয়ে যাবার দায় দেশের বৃহত্তম কর্মীনির্ভর দলটির নেতৃত্বে ব্যার্থতায় দায় তারেক রহমান কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।
দায় থেকে যায় নেতৃত্বের বলবার, পদক্ষেপের সময় জ্ঞানহীনতার, ভূল সিদ্বান্তকে জোর করে চাপিয়ে দেবার দলের অভ্যন্তরের চাপা অভিযোগের।
প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যার্থতার জন্য নেতৃত্বগুলোর নিজেদের ভূল থেকে শিক্ষা না নেবার ভূলগুলি দায়ী। রাজনীতির ইতিহাস বলে,অপেক্ষাকৃত সৎ ও সচ্ছদের রেখে অসচ্ছতা,অস্পষ্টতার জোড়াতালি জনগন তো দূরের কথা,নেতাকর্মীদের অাস্থা টুকুও অর্জনের সক্ষমতা হারায়।
পাঠক এখন অামি এটাও একই সাথে বিশ্বাস করি,বাংলাদেশে দুর্নীতি করতে কোন ভবন লাগে না। তারেক রহমানকে এ সরকারের নেতা মন্ত্রীরা বলে বেড়ান “দুর্নীতির বরপুত্র”। কিন্তু বাংলাদেশে তো গত দশ বছর তারেক রহমান অার তার হাওয়া ভবন নেই।
বিএনপি তো ক্ষমতার বাইরে অাজ বহু বছর। তারেক রহমান দেশছাড়া। দেশজুড়ে দুর্নীতি কি থেমেছে? থামে নি? তাহলে মানুষ কেন বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি অাস্থা রেখে স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে নামছে না।
অাচ্ছা,এ প্রশ্নগুলো কি তারেক রহমানকে কখনো ভাবায় না?
লন্ডন ১৫ ই জানুয়ারী