লাগামহীন স্বর্ণের দাম

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: স্বর্ণের বাজারে নজিরবিহীন অস্থিরতা চলছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। সামনে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর বিশ্ববাজারের দামের প্রভাব দেশের বাজারেও পড়েছে। বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ৭৭ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ২২ ক্যারটের (ভালো মানের) প্রতি ভরি স্বর্ণ। চলতি বছর ভরিতে বেড়েছে ১৭ হাজার টাকা। তবে দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যটির ক্রেতা একেবারে কমে গেছে। উল্টো যাদের হাতে মজুদ আছে, তারা বিক্রি করছেন। তবে স্বর্ণের দাম বাড়লেও দেশে রুপাসহ অন্যান্য ধাতব পণ্যে তেমন প্রভাব পড়েনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনায় ডলারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আর চাহিদা বাড়ায় দামেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে- করোনার প্রকোপ ও ডলারের ব্যাপক দরপতন। ফলে মানুষ ডলারের বিকল্প হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া বিশ্বের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, বন্ড ও আমানতের সুদহার কমানো, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা-সবকিছু মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে বিনিয়োগকে নিরাপদ মনে করছেন। এতে স্বর্ণের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, দুটি কারণে দেশের বাজারে বাড়ছে মূল্যবান এই ধাতুটির দাম। প্রথমত, বিশ্ববাজারের প্রভাব এবং দ্বিতীয়ত, ব্যাগেজ রুলে বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনা বন্ধ।

জুয়েলারি সমিতির সাবেক সভাপতি গ্রামীণ জুয়েলার্সের মালিক ড. দিলীপ কুমার রায় সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববাজারের কারণেই দেশে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। মানুষ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনে মজুদ করছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে কেউ আর কিনছেন না। উল্টো যাদের হাতে স্বর্ণ রয়েছে, বাড়তি দামের জন্য তারা বিক্রি করছেন। দাম কমলে তারা আবার কিনবেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বর্ণ কেনা যায়; কিন্তু আমাদের ওই সুবিধা নেই। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের কিছুটা তারতম্য হয়।

সাধারণত অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকলে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে বিনিয়োগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ঝুঁকিতে মার্কিন ডলার। পড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে চলতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ দর কমেছে ডলারের। ফলে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ছিল ৪১ ডলার। সোমবার তা বেড়ে ৬৩ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে এক বছরে দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ, করোনায় আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এতে ডলারের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। বিনিয়োগকারীরা ডলারে বিনিয়োগ করতে চাইছেন না। বিকল্প হিসেবে তারা স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন। তিনি বলেন, স্বর্ণের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা বাড়েনি; করোনার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্বর্ণের মতো বিলাসী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির কথা নয়। কিন্তু স্বর্ণে বিনিয়োগ বেড়েছে। তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম বাড়লেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ধারণা করছি, এক বছরের মধ্যে দাম কমবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা কেটে গেলে স্বর্ণের পরিবর্তে ডলারে বিনিয়োগ বাড়বে।

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে দেশে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৬০ হাজার টাকা। সোমবার তা ৭৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিশ্ববাজারে সোমবার প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ছিল ৬৩ ডলার। বাংলাদেশে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) প্রতি ভরির দাম পড়েছে ৬৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিশ্ববাজারের সঙ্গে ভরিতে পার্থক্য ১২-১৩ হাজার টাকা। বর্তমানে দেশে ২২ ক্যারটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৭ হাজার ২১৫ টাকা। ২১ ক্যারটের প্রতি ভরি ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারট ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সনাতন ৫৪ হাজার ৯৯৫ টাকা। ১৫ দিনের ব্যবধানে ভরিতে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেড়ে গত ৫ আগস্ট এই দাম নির্ধারিত হয়।

Advertisement