সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা : সিলেটে বন্যায় গৃহহারা মানুষের জন্য ১ হাজার ঘর নির্মাণ করবে জমজম ট্রাস্ট

বৃহত্তর সিলেটে বন্যায় গৃহহারা মানুষের জন্য জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট ১ হাজার ঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।যুক্তরাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন টিভিওয়ান এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করবে। সেইফ হোম গ্রেটার সিলেট’ নামক এই প্রজেক্টের কাজ আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ শুরু হবে এবং ১ বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন,এই ১ হাজার ঘরের একেকটি নির্মাণ করতে ব্যয় হবে ২ হাজার পাউন্ড। আর পুরো প্রজেক্ট বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা।আমাদের কাছে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিতে পারবো।কাজ শুরু হয়ে গেলে বিত্তবান মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।যারা ২ হাজার পাউন্ড দিয়ে একটি ঘর তৈরি করে দেবেন তার ন্যামপ্লেট ঘরের দেয়ালে লাগানো থাকবে।গত ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সস্মেলনে প্রজেক্টের ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় ।

তৌহিদুল করিম মুজাহিদ-এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিভি ওয়ান-এর ডিরেক্টর অপারেশন গোলাম রাসুল ।বক্তব্য রাখেন জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন চৌধুরী ও টিভি ওয়ান এর ডাইরেক্টর শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত করেন শরীফ আহমদ।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়,শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় বৃহত্তর সিলেটে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য উপাত্ত না পাওয়া গেলেও সরকারের নানা বিভাগ,অধিদপ্তর ও জাতিসংঘের তথ্য মতে সিলেট বিভাগের ৭৫ পার্সেন্ট এলাকা কোনো না কোনোভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ।তার মধ্যে সিলেট জেলার ৮০ পার্সেন্ট এবং সুনামগঞ্জ জেলার ৯০ পার্সেন্ট অঞ্চল সম্পূর্ন প্লাবিত হয়।এ বছর বন্যায় ১৮টি জেলায় মোট আনুমানিক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকারও বেিশ ।যার ৮৫ পার্সেন্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শুধুমাত্র সিলেট বিভাগে ।প্রাণ হারিয়েছে ৬৫ জন। প্রায় ৭ লাখ ৭ হাজার একরের ফসল নষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার।৬ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ।শত শত মসজিদ এবং মাদ্রাসাও সম্পূর্ন বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এখনো প্রায় ১১৮টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিজ ঘরে অবস্থান করতে পারছে না ।এছাড়াও, সিলেট বিভাগে সম্পূর্ন বা আংশিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০০ হাজারেরও বেশি।তবে সংখ্যার এ হিসাব দিয়ে বৃহত্তর সিলেটে ঘটে যাওয়া এবারের ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন কোনো ভাবেই সম্ভব নয় ।বহু গ্রাম বা গ্রামের অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।ফলে হাজার হাজার পরিবার এমনও আছে যে,তারা শুধুমাত্র ঘর হারিয়েছে এমন নয়,পাশাপাশি হারিয়েছে ভিটা মাটিও ।বর্তমানে বন্যাপরবর্তী একটি কঠিন সময় পার করছে সিলেট বিভাগের প্রায় ১ কোটি মানুষ । বন্যার শুরু থেকেই টিভি ওয়ান বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্বস্ত মানবিক ও চ্যারিট্যাবল সংস্থ্যার মাধ্যমে জরুরী ত্রাণবিতরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।বর্তমানে বন্যার পানি নেমে গেলেও আকস্মিক বন্যা যে ভবাবহ ক্ষতি করেছে তা অনুধাবন করে টিভি ওয়ান এ সংকটের পুরো সময় সিলেটবাসীর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট এবং টিভি ওয়ান এর যৌথ উদ্যোগ “সেইফ হোম গ্রেটার সিলেট” ।

এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে মোট ১ হাজার ঘর নির্মান করা হবে।মোট চার ধাপে ২৫০টি করে নির্মিত হবে ১ হাজার ঘর।পাকা বা ইটের তৈরী দেয়াল এবং ছাদ নির্মান করা হবে মজবুত টিন দিয়ে ।দুই রুম বিশিষ্ট আধা পাকা এ ঘরের প্রতিটি রুম এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে ১৩ ফুট করে । আর প্রত্যেকটি বাড়িতে থাকবে বারান্দা।প্রত্যেকটি ঘরের আয়তন হবে ৪২৯ বর্গফুট। যা হবে ছোট একটি পরিবারের জন্য নিরাপদ এবং টেকসই স্থায়ী মাথা গোজার ঠিকানা। “সেইফ হোম” এর এমন একটি ঘর নির্মাণ করতে প্রয়োজন হবে মাত্র ২ হাজার পাউন্ড।টিভি ওয়ান এ প্রকল্পের জন্য অর্থ বা তহবিল সংগ্রহ করতে নিয়মিত চ্যারিটি অ্যাপিল , বিজ্ঞাপন ও নানামাত্রিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে । প্রাপ্ত অর্থ জমা হবে টিভি ওয়ানের দীর্ঘ সময়ের পার্টনার জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের সেইফ হোম তহবিলে।জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বৃটেনের চ্যরিটি কমিশন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীনে এনজিও বিষয়ক বুরে‌্যার নিবন্ধিত একটি মানবিক সংস্থা । এ সংস্থাটি মুলতঃ সিলেটের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে এবং ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে । দীর্ঘ তিন দশকে জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট সিলেট বিভাগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ইয়াতিম ও বিধবাদের সহায়তা, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, গৃহ নির্মাণ এবং মসজিদ নির্মাণের মত বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মানবিক কাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এছাড়া সিডর, আইলা, আরফান ইত্যাদি টর্নেডোর ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রতি বছর বন্যায় জরুরী ত্রান প্রদানের মাধ্যমে দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।এ বছরের বন্যায় সংস্থটি প্রায় ৩ হাজার ২শ ৮০ পরিবারকে জরুরী খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয় প্রদান করেছে। মানবিক কাজে জমজম চ্যারিটি একটি দ্বয়িত্বশীল, বিশ্বস্ত এবং জবাবদিহিমূলক সংস্থা । টিভি ওয়ান “সেইফ হোম” প্রকল্পের প্রতিটি দানের নিয়মিত আপডেট দর্শক ও দাতাদের সামনে অত্যন্ত যত্নের সাথে তুলে ধরবে।লিখিত বক্তব্যে কমিউনিটির দানশীল মানুষদেরকে ‘সেইফ হোম গ্রেটার সিলেট’ প্রকল্পে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আসতে আহবান জানানো হয়। সেইফ হোমের মাধ্যমে নিন্মোক্ত উপায়ে সিলেটে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। যেমন: ব্যাক্তিগত দানের মাধ্যমে, এক বা একাধিক পরিবার এক সাথে মিলে, একাধিক বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী মিলে, কমিউনিটির পক্ষ থেকে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে, সামাজিক, ক্রীড়া এবং সেচ্ছা সেবক সংগঠনের পক্ষ থেকে, স্কুলের অভিবাবকদের পক্ষ থেকে এবং মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষ থেকে । মঈন উদ্দিন আহমদ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশাবাদী বৃটেন ও ইউরোপে বসবাসকারী প্রত্যেক বাংলাদেশী এই মহতি উদ্যোগে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন। আল্লাহ নিশ্চই আমাদের ভালো কাজের প্রতিদান দিবেন ।

Advertisement