সমকাম, সমপ্রেম এবং ধর্ম ও ধর্ষক স্বত্বা

।। মুহাম্মদ আব্দুর রহমান অলি।।

পত্রিকায় পড়েছেন কিংবা টিভিতে দেখেছেন কিংবা কারো জবানীতে শুনেছেন ধর্ষণ, রেইপ বা বলাৎকার শব্দটি। এই অভিজ্ঞতা আপনার বহুবারের, অলমোষ্ট প্রতিদিনের। প্রতিবার আপনার ব্রেইন এই শব্দটি শোনা মাত্রই আপনার মস্তিষ্কে যে চিত্রটি তুলে ধরে সেখানে থাকেন কোন নারী বা মেয়ে বা মেয়ে শিশু।

কেনই বা  হবে না?! নিচের তথ্যগুলোকে দেখলে অন্তত আপনার নিজেরই মনে হবে আপনার চিন্তা অমূলক নয়।

আপনি জানেন কি ?

ব্র্যাকের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।

আপনি জানেন কি? সারা বিশ্বের ৭ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হন, যদি ৭% আপনাকে ব্যতিব্যস্ত না করে তবে জেনে রাখুন ৩৬ শতাংশ নারী যৌন নিপীড়নের শিকার।

আপনি জানেন কি?

বিশ্বব্যাপী হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের ৫১ শতাংশ ভিকটিম নারী এবং নারী ও শিশু মিলিয়ে মোট ৭১ শতাংশ যার প্রতি চারজনের তিনজনকে সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশনের জন্য পাচার করা হয়ে থাকে।

আপনি জানেন কি?

সমস্ত নারীকুলের মাঝে ১৫মিলিয়ন নারী বলেছেন, তাদের জীবনকালে অন্তত একবার ফোর্সড সেক্সের শিকার হয়েছেন।

আপনি জানেন কি?

২০১৫ সালে ২৭টি আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে জরিপ চালিয়ে জানা গেছে  ২৩ শতাংশ ছাত্রী সেক্সুয়াল মিসকন্ডাক্ট বা এসল্টের শিকার হন।

আপনি জানেন কি?

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মাঝে প্রতি ১০জন এ ১ জন নারী অনাকাঙ্ক্ষিত আপত্তিকর যৌনভাবাপন্ন ইমেইল, টেক্সট ম্যাসেজ পেয়ে থাকেন।

আপনি জানেন কি?

নর্থ আফ্রিকা এবং মিডল ইষ্ট এর উপর এক জরিপ থেকে জানা গেছে, সেখানের ৪০-৬০ শতাংশ নারী ঘরের বাইরে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। এমনকি ৩১-৬৪ শতাংশ পুরুষ স্বীকার করেছেন তারা অন্তত একবার হলেও এমন কাজ করেছেন।

আপনি জানেন কি?

৩৯টি দেশের সংসদের মহিলা সাংসদের উপর জরিপে মহিলা সাংসদগণ  জানিয়েছেন ৮২ শতাংশ নারী সাংসদ তাদের দায়িত্ব পালনকালে নানাবিদ হ্যারাসমেন্টের সাথে সাথে যৌন নির্যাতনমূলক আচড়নের মুখোমুখি হয়েছেন।

আপনি জানেন কি?

আমেরিকায় প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষণ অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এবং বছর শেষে গড়ে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় প্রায় ২,৯ ৩,০০০। শান্তির দেশ কানাডায় প্রতি ৪ জনে ১ জন নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়, বার্ষিক যা প্রায় ৪,৬০,০০০। মুক্ত গণতন্ত্রের দেশ গ্রেট ব্রিটেনে প্রতি বছর ৮৫,০০০ ধর্ষণের ঘটনা  ঘটে থাকে।

আপনি জানেন কি?

কানাডায় ১০০০ টি যৌন নির্যাতনের ঘটনার মাত্র ৩৩ টি পুলিশকে জানানো হয়, আমেরিকায় ৬৮% যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতিতরা পুলিশকে কিছুই জানায় না।

আপনি জানেন কি?

খোদ ব্রিটেইনেই ১৭৯০০০টি কল রেসপন্ড করেছে রেইপ ক্রাইসিস সেন্টার। এবং তাদের রেইপ ক্রাইসিস স্পেশালিষ্ট সার্ভিস গ্রহণ করেছেন ৭৮৪৬১ জন যা ২০১৬-২০১৭ সাল থেকে ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

আপনি জানেন কি?

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৩৯১৮ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৪২ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮২ জন। ২০১৭ সালে ৫২৩৫ নারী নির্যাতনের এবং ১২৫১ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ জন। ২০১৬ সালে ৪৮৯৬ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে ৮৪০টি ধর্ষণ ও ১৬৬টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

আপনি জানেন কি?

বাংলাদেশে ২০১৯ সালে এই পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৩জনেরও অধিক নারী ধর্ষিত হয়েছেন। ৬৩০ জন ধর্ষিতা নারীর মাঝে ৩৭জনকে ধর্ষণে পর অত্যা করা হয়েছে, ধর্ষিতা হবার পর ৭জন আত্মহত্যা করেছেন, ১০৫ জন নারীকে এই সময়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

ভুলে যাবেন না, এই সংখ্যাগুলো মিডিয়াতে এসেছে, বাস্তব অবস্থা কি তা আপনাকে অনুমান করতে হবে। প্রতি বছর এই সংখ্যাগুলো বেড়েই চলেছে।

এতক্ষণ আমি তাই করছিলাম যা বা যেভাবে আমরা অভ্যস্ত হয়ে আছি। এবার আমি আপনাদেরকে অপ্রকাশিত বাস্তবতার দিকে নজর দেয়ার আহবান জানাব। শুধু কি মহিলারাই ধর্ষিত হয়? কেন ধর্ষণ হয়? কেন শিশু ধর্ষণ হয়? আপনার কি অনুমান, পুরুষ কি ধর্ষিত হতে পারে? ছেলে শিশু কি ধর্ষিত হয়? কে তার ধর্ষক? (চলবে)

মুহাম্মদ আব্দুর রহমান অলি : প্রেজেন্টার, ফাউন্ডার আরবিএস রেডিও এবং অনলাইন এক্সিভিস্ট ।

Advertisement