সরকার যখন গ্যাং গ্রুপের দ্বারস্থ

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: দুর্ধর্ষ গ্যাং এমএস-১৩ এবং ১৮। তারা মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে, কখনো উৎকোচ দিয়ে, কখনো হত্যার ভয় দেখিয়ে তাদের দলে টানে। এই গ্যাং গ্রুপের সদস্যে জেলখানা ঠাসা। তাদের দেহজুড়ে নানা রকম ট্যাট্টু বা উল্কি আঁকা। তরজাতা দেহ। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এরা কয়েদি, অপরাধী। সতেজতা বিদ্যমান তাদের শরীরে। এমন ঘটনা মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের

সেখানে মধ্যবর্তী নির্বাচন আসন্ন।

সেই নির্বাচনে এই গ্যাং গ্রুপের সমর্থন আদায়ের জন্য তাদের সঙ্গে সমঝোতা করছেন প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে। এমন খবরে ঠাঁসা পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু শুক্রবার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে। এই গ্রুপের সঙ্গে একই রকম চুক্তি করার অভিযোগে বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিচার হচ্ছে এখন। অর্থাৎ এমএস-১৩ গ্যাংটি এল সালভাদরে ব্যাপক শক্তিধর। তারা সেখানে বছরের পর বছর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছে না সরকার। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে না গিয়ে, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয় বা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করে ক্ষমতার মসনদ পাকা করতে সচেষ্ট প্রশাসন। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইল।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, এল সালভাদরে জেলখানা উপচে পড়ছে এমএস-১৩ এবং ১৮ গ্যাংয়ের কয়েদিতে। কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সেখানে অভিযান চালিয়েছে। জানার চেষ্টা করেছে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কিনা। জেনারেল ডিরেক্টরেট অব পেনাল সেন্টারের (ডিজিসিপি) কর্তৃপক্ষ এমন তিনটি জেলখানা পরিদর্শন করেছে।

এতে করোনা পরিস্থিতি কি অবস্থা জেলখানার ভিতরে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, এসব জেলখানার গ্যাং তারকাদের শরীর উল্কিতে সয়লাাব। তাদের বেশির ভাগই মুখে মাস্ক পরেছেন। ছোট্ট ছোট্ট খাঁচার মধ্যে তারা অবস্থান করছেন। অনেকটা মুরগির ফার্মের মতো। কিন্তু তাদের খোঁজখবর নেয়ার ঘটনায় সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়তি খাতির যতœ করা হচ্ছে তাদের।

এছাড়া তাদের সঙ্গে চুক্তি করার রিপোর্ট তো পত্রিকায় আছেই। প্রেসিডেন্ট নায়িব তা অস্বীকার করলেও ঘটনাপরিক্রমায় তেমনটাই ইঙ্গিত মিলছে। গ্যাং স্টারদের সঙ্গে এমন চুক্তির বিষয়ে রিপোর্ট করেছে অনলাইন মিডিয়া আউটলেট এল ফারো। ফলে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল রাউল মেলারা। তার অফিস নিরপেক্ষ। সেখানে প্রেসিডেন্টের কোনো ভূমিকা নেই। এল ফারো শুক্রবার রিপোর্ট করেছে যে, সরকার এমএস-১৩ গ্যাং গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা চালিয়ে আসছে এ বিষয়ে সরকারি বেশ কিছু ডকুমেন্ট তাদের হাতে এসেছে।

সব ডকুমেন্টের মধ্যে রয়েছে জেলখানার লগ বুক, জেলখানার গোয়েন্দা রিপোর্ট। সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট বাকিব বুকেলে। তবে যদি অভিযোগ সত্য হয় তাহলে তা তার জন্য মারাত্মক এক ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে আনতে পারে। এপ্রিলে সহিংস বিক্ষোভ হয় এল সালভাদরে। এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষ নিহত হন। এর কয়েকদিন পরে প্রেসিডেন্ট বুকেলে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংদের বিভিন্ন সেলে মিশ্রিত অবস্থায় রাখার নির্দেশ দেন। সেখানে সেলগুলোকে আলাদা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ধাতব পদার্থ। বাইরের কারো সাথে যাতে তারা যোগাযোগ করতে না পারে, ছবি তুলতে না পারে- নেয়া হয় সেই ব্যবস্থা। তবে গ্যাংয়ের অনেক সদস্যকে আন্ডারপ্যান্ট পরিয়ে রাখার ছবি এবং মেঝেতে একের সঙ্গে অন্যের শরীর মিশিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়- এমন ছবি ছড়িয়ে পড়ে বাইরে।

তবে এই গ্যাং গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতার রিপোর্টকে উদ্ভট বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট বুকেলে। তার এমন উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও ইন্টার-আমেরিকান কমিশন অন হিউম্যান রাইটস। জবাবে বুকেলে তার সমলোচকদের উদ্দেশে বলেছে, তাকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য এসব কাহিনী ফাঁদা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বুকেলে। ক্ষমতায় আসার পর এল সালভাদরে হত্যাকান্ডের হার কুমিয়ে আনার জন্য তাকে কৃতীত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কিভাবে এই হত্যাকান্ড কমে এসেছে? তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, নতুন প্রশাসনের সঙ্গে গোপন কোনো সমঝোতা হয়ে থাকতে পারে গ্যাং তারকাদের। সেন্ট্রাল আমেরিকান ইউনিভার্সিটি এবং জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিসের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ কর্মসূটির গবেষক জেনেতে আগুইলার বলেছেন, এই গ্যাং গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। আগের সরকারও এই গ্রুপকে নানা রকম সুবিধা দিয়েছিল। এর ফলে দেশের ভিতরে হত্যাকান্ড কমে এসেছিল। নতুন সরকারও হয়তো সেটাই করছে।

Advertisement