সামরিক শক্তি বৃদ্ধির ঘোষণা গ্রীসের, জাহাজ ফিরিয়ে আনলো তুরস্ক

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে গ্রীসের। প্রথমে আলোচনার কথা শোনা গেলেও এখন উভয় পক্ষই সমানে একে অপরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম থেকে গ্রীসের পাশে ছিল ফ্রান্স। দেশটি তুরস্কের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানায়। ফলে তুরস্কের ওপর চাপ বৃদ্ধিতে অবরোধের হুমকি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর আগেও বেশ জোরালো কন্ঠ শোনা গিয়েছিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগানের। তবে ইইউর অবরোধের হুমকির পরদিনই আনাতোলিয়া বন্দরে জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে তুরস্ক।

তুরস্কের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে গ্রীস।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিস এখন সমুদ্রবিরোধ মেটাতে সামনে আগানোর কথা বলছেন। আগস্ট মাসের ১০ তারিখে গ্রীসের ক্রিট দ্বীপের কাছে একটি গ্যাস অনুসন্ধাকারী জাহাজ মোতায়েন করে তুরস্ক। গ্রীস ও তার মিত্রদের দাবি এই এলাকা গ্রীসের সমুদ্রসীমার অন্তর্ভুক্ত। তাই তুরস্কের জাহাজ মোতায়েনের জবাব দিতে আরব আমিরাতের সহায়তায় ওই এলাকায় একটি নৌ-মহড়া আয়োজন করে গ্রীস। এতে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে যায় দুই দেশের। গ্রীস প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছে, তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তুরস্ক জাহাজ মোতায়েন করেছে। যদিও তুরস্কের দাবি, জাহাজ মোতায়েনের এলাকাটি তাদেরই মালিকানাধীন। দেশটি এ নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছিল সেসময়। তবে গ্রীস জানায়, তুরস্ককে প্রথমে গ্রীসের সমুদ্রসীমা থেকে জাহাজ ফেরত নিতে হবে।

তুরস্ক ও গ্রীসের মধ্যেকার দ্বন্দ্বটি যে গুরুতর তা টের পাওয়া যায় গ্রীসের নতুন করে সমরাস্ত্র কেনার ঘোষণা থেকেই। শনিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিটসোটাকিস সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে ব্যাপক সমরাস্ত্র কেনা হবে। ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর জানিয়েছে, এটি গত দুই দশকের মধ্যে গ্রীসের সবথেকে উচ্চাভিলাসী প্রচেষ্টা। তুরস্কের সঙ্গে চলমান উত্তেজনাকে সামনে রেখেই যে এই তোরজোর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ নিয়ে মিতসোতাকিস বলেন, এখন সময় এসেছে গ্রীসের সেনাবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার। এ জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হবে তা গ্রীসের প্রতিরক্ষাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে। এ লক্ষ্যে, ফ্রান্সের তৈরি ১৮টি রাফালে যুদ্ধবিমান, ৪টি ফ্রিগেট এবং নৌবাহিনীর জন্য ৪টি হেলিকপ্টার কিনছে। সঙ্গে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হবে আরো ১৫ হাজার সেনা। শক্তিশালী করা হবে দেশের অস্ত্র কারখানাগুলোও। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে গ্রীস। একইসঙ্গে সাইবার আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা উভয়েই গ্রীস জোর দিচ্ছে বলে জানান মিতসোতাকিস। এসব বড় সামরিক উন্নয়নের পাশাপাশি ট্যাংক ধ্বংসকারী অস্ত্র, টর্পেডো ও আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইলের মজুদ বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে গ্রীস। সবমিলিয়ে গত ২ দশকের মধ্যে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সবথেকে বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। এ সপ্তাহে নতুন সমরাস্ত্র ক্রয় নিয়ে আরো তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে তুরস্ককে শায়েস্তা করতে করসিকা দ্বীপে সম্মেলনে বসেন দক্ষিণ ইউরোপের নেতারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের আহবানে এ সম্মেলনে যোগ দেন, গ্রীস, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল, সাইপ্রাস ও মাল্টার সরকার প্রধানরা। সেখান থেকে সম্মিলিতভাবে তুরস্ককে জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত আসে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রীসের এই সামরিক উন্নয়নের বিষয়টিও ওই সম্মেলনের পরেই উত্থাপিত হয়েছে। সম্মেলনে গ্রীসকে স্পষ্টভাবে সমর্থন দিয়েছে ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো। ম্যাক্রন তার তুর্কি সমকক্ষ এরদোগানকে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম না করতে হুঁশিয়ারি দেন। ফ্রান্স ওই এলাকায় যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েনের কথাও জানায়। সর্বশেষ, ইউরোপীয় ঐক্যের মুখে বিতর্কিত সমুদ্রাঞ্চল থেকে জাহাজ ফিরিয়ে এনেছে তুরস্ক।

Advertisement