সিলেটে করোনায় মৃত্যু ২০১

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সব স্বাভাবিক। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মানুষ। চলছে জীবনের গতি। মৃত্যুর ভয় নেই। করোনা আছে নাকি নেই, এতেও পরোয়া নেই। স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না কেউ। মাস্ক পরছেন না বেশির ভাগ মানুষ। এই অবস্থায় করোনায় নীরব মৃত্যুর মিছিল চলছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের স্বস্তি একটাই- তা হলো আগের চেয়ে মৃত্যু কমেছে। মানুষের মধ্যেও তাড়াহুড়া নেই। চিকিৎসা নিয়েও নেই মাথা ব্যথা। নিজেরা শক্তি সঞ্চয় করে করোনা সঙ্গে লড়াই করছে। করোনাযুদ্ধের ৫ মাসে সিলেটে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন ২০১ জন। তারা হারিয়ে গেছেন চিরতরে। এর মধ্যে অনেক পরিচিত মুখও রয়েছে। করোনার কাছে হেরে তারা এখন না ফেরার দেশে। সিলেটে প্রথম ১০০ জন মারা যান ৩ মাসে। এর পরে ১০০ জন মারা গেলেন পৌনে ২ মাসে। অর্থ্যাৎ শেষ দিকে এসে মৃত্যু বেড়েছে। আর এই মৃত্যু অনেকটা নীরব মৃত্যু। করোনায় মৃত্যু যেনো এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আগের মতো আর অস্থিরতা নেই। নেই চিৎকারও। তবে- আশার কথা হলো এখন আর কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে না। হাসপাতালে রোগীরা সেবা পাচ্ছে। নেই আগের মতো আর ভিড়ও। হাসপাতালে কমছে রোগীর সংখ্যা। তবে- আইসিইউতে রোগী কমছে না। সিলেটে করোনার সিরিয়াস রোগীদের জন্য প্রায় ৫০টির মতো আইসিইউ আছে। এসব আইসিইতে সব সময়ই রোগীর ভিড় বেশি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- হাসপাতালে রোগী কমলেও আইসিইউতেও কমছে না। এর কারণ- করোনা আক্রান্ত অনেকেই শেষ সময়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ কারনে তাদের আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- সিলেট বিভাগে ৫ মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। নিহতদের মধ্যে সিলেটেই মারা গেছেন ১৪৫ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জে ২২, হবিগঞ্জে ১৪ ও মৌলভীবাজারে ২০ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সিলেটে করোনায় প্রথম মারা যান গরিবের ডাক্তার বলে পরিচিত ডা. মঈন উদ্দিন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ সহকারী অধ্যাপক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোগীদের সেবায় ব্যস্ত ছিলেন। ৫ই এপ্রিল তিনি করোনা আক্রান্ত হন। আর মারা যান ১৫ই এপ্রিল। সিলেটে মৃত্যুর এই মিছিল বড়ই করুন। এই মৃত্যুর মিছিলে শরিক হন সিলেটের পরিচিত মুখ, দীর্ঘ দিনের জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ৫ই জুন তিনি নিজ বাসায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ১৫ই জুন না ফেরার দেশে চলে যান। তার মৃত্যুতে এখনো শোকাহত সিলেটের মানুষ। প্রিয় এ নেতার মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই ১৫ই জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে বিদায় নেন আরেক প্রিয় নেতা এম এ হক। তিনি ছিলেন সিলেট বিএনপির অভিভাবক। তার মৃত্যুও নাড়া দেয় সিলেটবাসীকে। এছাড়া করোনায় চিকিৎসক, নার্স, ব্যবসায়ী সহ অনেক পরিচিত জন চিরদিনের মতো সিলেটবাসীর কাছ থেকে হারিয়ে গেছেন। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে- বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬ হাজার ১৮৮, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ১৬৫, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৬২০ ও মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৫৮৫ জন। সিলেট অঞ্চলে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আজ ভর্তি আছেন ১৪২ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৮৭, সুনামগঞ্জে ১২, হবিগঞ্জে ২৪ ও মৌলভীবাজারে ১৯ জন। এদিকে, সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে

সিলেটে ৩৪, সুনাগঞ্জে ১৩ ও মৌলভীবাজারে ৩ জন। আর এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৪ হাজার ৩৮২ সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৮৪৫, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৭৯ ও মৌলভীবাজারে ১ হাজার ২২৯ জন। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে জুন-জুলাই মাসে করোনা আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ছিলো। আগষ্টে এসে সেটি কিছুটা কমে। কিন্তু এক মাসের অধিক সময় ধরে সেটি এক জায়গায় আটকে আছে। এর কারণ- মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিধি। মাস্ক ব্যবহারেও রয়েছে অনীহা।

Advertisement