সৌদিতে কথিত হিজরত চেষ্টা, ১৭ জেএমবি সদস্য ধরা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : তাবলিগের নামে সৌদি আরবে গিয়ে ইমাম মাহাদির সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় কথিত ‘হিজরত’-এ যাওয়ার পথে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সোমবার (৪ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এ তথ্য জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তাররা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশের জেএমবি) সদস্য। তাদের নাম হায়দার আলী (৪৪), মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, জামিরুল ইসলাম (২৪), বিল্লাল হোসেন (৩৮), শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), সাইফুল ইসলাম (২৫), মোজাম্মেল হক (৩৩), শাহজালাল (৩৪), আক্তারুজ্জামান (৩০), মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), সোহাইল সরদার (৩৩), ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ( ২৮) ও সোহাগ হাসান (২০)।
সৌদি আরবে পালিয়ে থেকে সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান নামের এক ব্যক্তি কথিত এই হিজরত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার ছড়ানো গুজব বা প্ররোচণায় বিশ্বাস করে এরই মধ্যে ১১ জন সৌদি আরবে চলে গেছেন।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) তহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় কাকরাইল মসজিদের বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ কার্যালয়ের সামনে থেকে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মুঠোফোন ফোন, দুই লাখ ৩৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা ও ৯২২ মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জেএমবি সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।

এডিসি আরো বলেন, জনৈক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি জিহাদের পক্ষে ঈমাম মাহাদির সৈনিক হিসাবে বিভিন্ন বক্তব্য এবং গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে অডিও ভিডিও প্রকাশ করেন।

এডিসি জানান, গ্রেপ্তাররা মোস্তাকের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঈমাম মাহাদির সৈনিক হিসাবে যুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাবলিগ-জামায়াতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরবে পৌঁছাবে।

গ্রেপ্তারদের বলা হয়েছিল, করোনা দুর্যোগে আকাশ থেকে একধরনের গজব নেমে আসবে এবং সমস্ত কিছু ধোঁয়াছন্ন হয়ে যাবে তখন সীমান্তে কোনো পাহারা থাকবে না! এই সময় তারা যেন চলে আসেন। এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন।

গ্রেপ্তারদের আরো জানানো হয়েছিল, আগামী ৪০ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফিররা সবাই মারা যাবে, ঈমানদারদের শুধু হালকা কাঁশি হবে, ঈমাম মাহাদির আগমন; এই রমজানে সমাগত তাই তারা যেভাবে পারে সেভাবে যেন আসার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক তারা ঢাকায় আসেন।

এডিসি তোহিদ বলেন, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরো সাতজন ঈমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে কথিত হিজরত করেছেন বলে জানিয়েছেন গ্রেপ্তাররা।

Advertisement