স্যাকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট ইউকে

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সেনা শাসন এবং রাজনীতির নামে প্রহসনকে বর্তমান বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নিম্নগামীতার জন্য দায়ী

ব্রিটবাংলা ডেস্ক:

১৩ই জুন বুধবার লন্ডনের পার্লামেন্ট হাউজে ব্রিটিশ এমপি জিম ফ্রিটজপ্যাট্রিকের সভাপতিত্বে স্যাকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট ইউকে “Secularism: Hope for Unity, Peace and Justice” শিরোনামে একটি সেমিনার আয়োজন করে।

স্যাকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট ইউকে সাধারণ সম্পাদক জেসমিন চৌধুরীর প্রারম্ভিক বক্তৃতা দিয়ে শুরু হওয়া সেমিনারের সমাপ্তি ঘটে সংগঠনের সভাপতি পুষ্পিতা গুপ্তের সঞ্চালনায় প্রশ্ন উত্তর পর্বের মাধ্যমে।

সকাল এগারোটায় শুরু হওয়া এই সেমিনারে প্রধান বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং একটি মানবতাবোধ সম্পন্ন জাতি গঠনে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অসাম্প্রদায়িকতার গুরুত্ব আলোচনা করেন।

এর পরে বক্তব্য রাখেন মেহজাবিন খালেদ এমপি।

তিনি তাঁর বক্তব্যে স্যাকুলার বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকারের নানা কার্যক্রমের উপর আলোকপাত করেন।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল স্যাকুলার ফোরাম ফর বাংলাদেশ এর আহবায়ক ড. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সেকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট ইউএসএ এর শুভ রায়।

সেমিনারে বক্তারা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সেনা শাসন এবং রাজনীতির নামে প্রহসনকে বর্তমান বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নিম্নগামীতার জন্য দায়ী করেন।

মানবাধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর সমঅধিকারের এই নিম্নগামী সূচককে উর্ধগামী করতে জোটবদ্ধ ভাবে আরো লম্বাসময় ধরে কাজ করতে হবে।

“সেনা শাসক কর্তৃক আরোপিত রাষ্ট্র ধর্ম বিষয়টি কি ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রধান অন্তরায় নয়? এবং আওয়ামীলীগ সরকারের দশ বছর শাসনামলে কেনো সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা হয়নি ?” সাংবাদিক অসীম চক্রবর্তীর করা এমন প্রশ্নের জবাবে এমপি মেহজাবিন খালেদ বলেন রাষ্ট্রধর্ম বাতিল এবং সাধারণ মানুষের মাইন্ডসেট বদলের জন্য দশবছর যথেষ্ট নয়।

লম্বা সময় ধরে প্রোথিত শিকড় উপড়াতে আরো দীর্ঘপথ পাড়িদিতে হবে।

“আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত দশ বছরে সাম্প্রদায়িকতা বিরুধী এবং সমঅধিকার রক্ষার জন্য এমন কোনো আইন করা হয়েছে কি না এবং বিলেতে বাঙালি কমিউনিটিতে ধর্মান্ধতা দূর এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উৎসারণ করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না” এমন এক প্রশ্নের জবাবে
জানা গেলো বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সমঅধিকার রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরুধী কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। তবে লন্ডনে বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রতিনিধি এব্যাপারে কোনো উত্তর দেননি।

প্রতিবার নির্বাচনোত্তর সময়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হন।

যেহেতু নির্বাচন প্রায় সমাগত তাই আগামী নির্বাচন পূর্বাপর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা ঠেকাতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা জানতে করা এক প্রশ্নের উত্তরে মেহজাবিন খালেদ জানালেন যেহেতু তিনি এইধরণের কোনো কমিটির অন্তর্ভুক্ত নয় তাই পুরো বিষয় উনার জানা নেই।

তবে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর গওহর রিজভী পার্লামেন্টের এমপি দেন নিয়ে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং নিরাপত্তা বিষয়ে একটি সংসদীয় সভা আয়োজন করবেন। যে সভা থেকে একটি দৃঢ় দিকনির্দেশনা প্রণয়ন করা হবে।

উল্লেখ্য উক্ত সেমিনার গত ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ব্রেক্সিট বিষয়ে জরুরি সভার জন্য পার্লামেন্ট হাউজ জনাকীর্ন হওয়ায় সেমিনারের তারিখ বদলিয়ে ১৩ই জুন অনুষ্ঠিত হয়।

ফলে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ডক্টর গওহর রিজভী এবং হিউম্যানিস্ট ইউকের সিইও এন্ড্রু কপ্সন উপস্থিত হতে পারেন নি।
সেমিনারে অন্যান্য বিষয়ের সাথে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয় :
■ নির্বাচন পূর্বাপর বাংলদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়
■ মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অসাম্প্রদায়িকতা রোধ করতে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
■ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমঅধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল কিভাবে এই এইসব বিষয়ের উন্নয়ন সাধন করবে তার রূপরেখা তাদের রাজনৈতিক মেনুফ্যাস্টোতে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করতে হবে।
■ স্যাকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের মতো আরো এসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

উক্ত সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সায়েদ আহমদ সাদ সাংবাদিক উর্মি মাজহার এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন উপকমিটির সদস্য সুশান্ত দাসগুপ্ত, মানবাধিকার কর্মী জ্ঞান গুপ্ত প্রমুখ।

Advertisement