হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু, মননে বঙ্গবন্ধু

যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা,
যমুনা, গৌরী বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান”
সেলিনা আক্তার জ্যোৎস্না ॥ যে মানুষটির জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হত না, মানুষ স্বাধীন ভাবে মতামত ব্যক্ত করতে পারত না।  উর্দু ভাষাকে  রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হতো।  তাছাড়া সাধারণ আমজনতা, চাকুরিজীবী, শ্রমিক, শিক্ষক সবাই শোষন ও বঞ্চনার শিকার হত, তিঁনিই  হচ্ছেন অবিসংবাদিত নেতা
জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, ইতিহাসের মহানায়ক, বাঙ্গালী জাতির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরতে হয় নির্মমভাবে।  ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে তাকে জীবন দিতে হয়েছিল এই  দেশেই একদল পাষণ্ডর হাতে। তাই এই আগস্ট বাঙালী জাতির এক কালো অধ্যায়। আগস্ট মাস আমাদের জন্য শোকাবহ, বেদনাদায়ক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাকে আমরা জাতির পিতা নামে আখ্যায়িত করি। তিনি আমাদের বাঙ্গালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কারন তার জন্য আমার পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা, পেয়েছি বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র। আমরা পৃথিবীর বুকে গর্ব করে বলতে পারি আমরা একটি স্বাধীন জাতি। আমরা মনে করি যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো তাহলে আজো হয়তো আমরা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতাম।
বঙ্গবন্ধু ছোট বেলা থেকে মানুষের কষ্ট দেখলে বসে থাকতে পারতেন না, ছুটে যেতেন সাহায্যে করার জন্যে, একদিন স্কুল থেকে আসার সময় অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ি ফেরার পথে দেখেন এক পথচারী বৃষ্টিতে ভিজতেছেন তৎক্ষনাৎ নিজের ছাতাখানা দিয়ে দিলেন সেই পথচারীকে আর নিজেই ভেজে ভেজে বাসাই আসেন।
বঙ্গবন্ধু খেলাধুলা পছন্দ করতেন, তাই ছোট কালে খেলার বন্ধুরা মিয়া ভাই  ডাকতেন। সংস্কৃতিমনা ছিলেন। গান শুনতে অনেক পছন্দ করতেন, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গান ছিলো “মা আমার সাধ না মিটিলো, আশা না পুরাইলো” বারবীর শুনতেন।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো কিংবদন্তি সাংবাদিক ভাষা সৈনিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সাথে সরাসরি কথা বলার। শ্রদ্ধেয় গাফফার ভাইয়ের কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধুর অনেক গল্প,  আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আড্ডা দিতেও পছন্দ করতেন। অনেক মজা করে গল্প করতেন সেই গাফফার ভাইয়ের কাছে গল্প শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করে আমাদের বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে জীবিত অনুভব করছি।
বাংলাদেশ গঠন এবং বাঙ্গালির স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিঁনি  বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার মহা নায়ক। আর এ কারনেই তাঁকে  জাতির পিতা নামে ডাকা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর  জন্ম না হলে হয়ত আমাদের স্বাধীনতা অর্জনই আজোও  হতো না।
ছোট কাল থেকে বাবার কাছ থেকে এত বেশি বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনেছি, বড় হওয়ার সাথে সাথে চেষ্টা করেছি বাবার মত বঙ্গবন্ধুর আদর্শগুলোকে মেনে চলার। বাঙালী জাতি যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মেনে চলতো তাহলে বাংলাদেশে কোনদিন দুর্নীতি থাকতো না। যারা বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় থেকে ভালবাসবে না আমি মনে করি তারা বাংলাদেশকে ভালবাসেনা। বাংলাদেশকে ভালবাসতে হলে আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসতে হবে, হৃদয়ে মননে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করতে হবে, তাহলে সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সৈনিক হবে। বঙ্গবন্ধুর মত আপামর জননেতার নেতা হতে পারবেন।  আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শগুলোকে মেনে চলি থাহলে কোনদিন খারাপ কাজ করার কথা মনে আসবেই না। আজকাল আওয়ামী লীগের মধ্যে এত কিছু কিছু নেতা কর্মী কেন দুর্নীতি করেন?  শুধু একটাই কারণ অনেকেই বঙ্গবন্ধুর জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে জানেন না, বঙ্গবন্ধু কি ভাবে আমাদের মহানায়ক হয়েছেন, জীবনের কত কিছু ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হয়েছেন, যদি এই সম্পর্কে এখনকার নেতা -কর্মীরা ভালো করে জানতেন থাহলে কোনদিন দুর্নীতি করতে সাহস পেতেন না। যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন তারা পদের লোভ করে না।
আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আত্ম জীবনি বেশি বেশি করে পৌঁছে দিতে হবে,  ক্লাসে পাঠ্যবই একটা অধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে রাখতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম যত বেশি বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে জানবে ততই আমাদের দেশের জন্য জাতির জন্যে উপকার হবে। এই প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এর সৈনিক করে গড়ে তুলতে হবে।
জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৪৪ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল ঘাতকের হাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির ইতিহাসে এক বড় কলংকময় দিন। ১৫ আগস্ট সারা বিশ্বের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। কলংকিত অধ্যায়।
১৫ আগস্ট শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল সদস্যকে, হত্যা করা হয়েছিল সবার প্রিয় ছোট্ট শেখ রাসেলকে, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালীর বিবেককে, বাঙালীর জাতিসত্ত্বাকে৷ খুনিরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সব হয়ে যাবে শেষ।  কিন্তু ওরা জানেনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চেতনার কখনোই মৃত্যু হয় না। এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ কোটি মুজিবের জন্ম নিয়েছে এই বাংলার ঘরে ঘরে। যুগে যুগে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার হবে জয় জয়কার। বারবার স্বাধীনতা বিরোধী খুনিদের হবে পরাজয়। কারণ মুজিব মানেই স্বাধীনতা, মুজিব মানেই বাংলাদেশ৷
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, এই শোকাবহ দিন থেকে আমরা শপথ নেবো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হোক আমাদের পথ চলা শক্তি, আমরা যেনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে  মননে ধারণ করতে পারি। সেই লক্ষ্যে জাতীয় শোক দিবসের প্রতিজ্ঞা হোক- শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে।
হে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, তুমি আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব।
 বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি, সেই সাথে সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি আল্লাহ যেনো সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।
  জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
: সেলিনা আক্তার জ্যোৎস্না, কলম যোদ্ধা।
Advertisement