৩২ নয়, ৩৫–ই যৌক্তিক

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ালে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এতে করে সব পক্ষই লাভবান হবে। একজন শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। সরকারও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবে। রাষ্ট্র তুলনামূলক মেধাবীদের স্থান দিতে পারবে। সব পক্ষই লাভবান হবে, এমন একটি কাজ না হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। তারপরও আমাদের দেশের তরুণদের প্রায় ১ যুগ ধরে এই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের অনেক রকম প্রতিকূলতায়ও পড়তে হয়েছে। মিটিং, মিছিল, সভা, সমাবেশ এমনকি অনশনও করেছে আন্দোলনকারীরা। তাদের অনেককেই গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে। সরকার এখনো দাবি মেনে নেয়নি। কিন্তু তরুণ সমাজ অদম্য। তারা দাবি থেকে সরে আসেননি। বর্তমানে বিষয়টি সরকারি প্রতিশ্রুতি পর্যায়ে ঝুলে আছে।

প্রতিশ্রুতিতে আস্থা নেই
গত পাঁচ বছর আগে সরকার চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। পাঁচ বছর পর নির্বাচনের আগে সরকার আবারও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এ সব মৌখিক প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করার মতো আস্থা সরকার অর্জন করতে পারেনি। কারণ এ রকম উদ্যোগ আগে নিলেও বাস্তবায়িত হয়নি। কয়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে খুব দ্রুত বয়সসীমা বাড়ছে বলে মনেও হয় না। তবে অর্থমন্ত্রীর কথাই চূড়ান্ত কিছু নয়।

দাবি এখন দুটি
দাবি এখন একটি নয়, দুটি। প্রথমত ৪০ তম বিসিএসের আগেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যটি হচ্ছে ৩২ বছর নয়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার সুপারিশ করেছে। আন্দোলনকারীরা তার প্রতিফলন চান। যখন রাশেদ খান মেনন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন, তিনিও এই মেয়াদ বৃদ্ধি চেয়েছিলেন।

৪০ তম বিসিএসের আগেই কেন দরকার
বর্তমান সরকারের এ পর্যায়ের মেয়াদ আর অল্প দিন। যে কাজ করলে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে, সে কাজ নির্বাচনের আগে না হলে নির্বাচনে জয়ী হলে নিকট ভবিষ্যতে হবে, এ কথা মানার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া একটি বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি হলে তার পরবর্তী একটি বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি হতেও অনেক দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা নিয়োগ হয় না। নন গেজেটেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাও নিয়োগ হয়। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় শ্রেণিরও অনেক নিয়োগ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে করা হচ্ছে। সেই বিবেচনায় ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষার আগেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

৩২ নয়, ৩৫ জরুরি
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবি শক্ত যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ বছর। তারপর বাস্তবতাও বদলেছে অনেকখানি। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়েনি। বর্তমানে একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতকোত্তর শেষ করতে স্কুলিং এর হিসেবেই প্রায় তিন বছর বেশি সময় প্রয়োজন হয়। গড় আয়ু বৃদ্ধি এই দাবিকে আরও জোরালো করেছে। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের সময় বাড়লে সংগত কারণে প্রবেশের বয়সসীমাও বাড়ার কথা। কিন্তু তাও বাড়েনি। তা ছাড়া এমন একজন শিক্ষার্থীও পাওয়া যাবে না যিনি যথাসময়ে লেখাপড়া শেষ করতে পারেন। পদ্ধতিগত ত্রুটি এবং সেশনজট প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই আছে। হয়তো সেটি আর আগের মতো ৫-৭ বছরের নেই। এসব দিক বিবেচনা করলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করাই যৌক্তিক।

প্রধান পাঠক্রম কোনটি?
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের চেয়ে চাকরির পরীক্ষার যে পাঠক্রম সেটাতেই অধিক মনোনিবেশ করছে। তা অনেকটাই চাকরিতে প্রবেশের বয়স কম হওয়ার কারণে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে ত্রিশ বছরের মধ্যে দ্রুত সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে না পারলে সরকারি চাকরির আবেদনের বয়সসীমা আর থাকে না। এ কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর থেকেই চাকরির পড়ালেখা শুরু করেন। এতে করে উচ্চশিক্ষার জন্য যে পাঠক্রম তৈরি করা হয়, তাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ থাকে নামমাত্র। এমনকি ক্লাসে বসেও অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ জ্ঞানের একখানা গাইড খুলে রাখাকে জীবনের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

চাকরির চেষ্টার সময় কম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বাদ দিয়ে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির কোচিংয়ে যান। ক্লাসের পরীক্ষার পড়া প্রস্তুত করার চেয়ে চাকরির পরীক্ষায় যে প্রশ্ন আসে সেগুলো সমাধানের কাজে ব্যস্ত থাকেন। এসব আর যাই হোক জাতি গঠনের জন্য ইতিবাচক কিছু নয়। লেখা-পড়া শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা চাকরির চেষ্টার পর্যাপ্ত সময় পেলে তাদের এই পথে যেতে হতো না।

ঘুষ দেওয়ার সমস্যা
লেখাপড়া শেষ করার পর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় কম হওয়ার কারণে চাকরিতে প্রবেশে অনেকেই অসৎ পথে হাঁটার চেষ্টা করেন। যেহেতু সময় কম, তাই নিজেদের শেষ চেষ্টা হিসেবে যত উৎকোচই লাগুক না কেন তারা দিতে সম্মত হন। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফল করেছেন, সেসব চাকরি প্রার্থীরা অস্তিত্বের সংকটে ভোগেন। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে যাদের পরিচিতি আছে তারা দেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেছনের সারির শিক্ষার্থী—যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা না করে চাকরির পড়ালেখা করেছেন তাদের চাকরি হচ্ছে। তখন তারা যত টাকা লাগুক, আর যাই হোক না কেন নিজেদের মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে হলেও একটি চাকরির সন্ধান করেন।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু দিন ধরে চাকরি প্রত্যাশীরা আন্দোলন করছেন। তারা অবৈধ কোনো সুবিধা চান না। তারা চাকরির চেষ্টার পর্যাপ্ত সময় চান। আশা করি ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পূর্বেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হবে।

Advertisement