লন্ডনের রেডব্রিজ কাউন্সিলে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্যে প্রতিদিন অন্তত ৬শ ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা সচল থাকে। কাউন্সিলের সিসিটিভি ক্যামেরার সুবাধেই গত বছর জারা এলিনার হত্যাকারীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল পুলিশ। এছাড়াও রেডব্রিজ কাউন্সিলে গত কয়েক মাসে প্রায় ১শ হাজার পাউন্ডের অবৈধ ই-সিগারেট উদ্ধার করা হয়েছে।২০২২ সালের ২৬ শে জুন রাত আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বারার ইলফোর্ড এলাকার ক্র্যানব্রোক রোডে খুন হয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়সী জারা এলিনা। তাকে ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ঘাতক জর্ডান ম্যাকসুইনি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার ১২ ঘন্টার মধ্যেই ঘাতককে সনাক্ত এবং পরবর্তীতে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার প্রায় ১০ মিনিট আগে থেকেই আইনজীবি জারার পিছু নিয়েছিল ঘাতক। রেডব্রিজ কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার, কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী জানান, পাবলিকের টেলিফোন কল পাবার সাথে সাথেই সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়। তখন দেখা গেছে, ঘাতক কিভাবে জারার পিছু নিয়েছিল এবং হামলার পর সে কিভাবে ভ্যালেনটাইন্স পার্ক দিয়ে পালিয়ে যায়। রেডব্রিজে প্রতিদিন এ রকম ৬৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নজরধারীতে রাখা হয় বলে জানালেন কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী।
তিনি জানান, কন্ট্রোল রুমে বিশেষভাবে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত দুজন অফিসার একটি স্ক্রীনে এক সঙ্গে অনেকগুলো ক্যামেরা সার্বক্ষনিক মনিটর করেন। গাড়ি চুরি বা অন্যকোনো প্রয়োজনে ইন্সুরেন্স কোম্পানী বা পুলিশের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে বারার জনগণ এই সিসিটিভি ফুটেজ পেতে পারেন। যেসব রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরায় নেই সেইসব রাস্তায় অপরাধ প্রবণতা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের পুলিশে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই অস্থায়ী ক্যামেরা বসানো হয় বলেও জানান তিনি। এছাড়া যে কোনো দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে পাঠানোর জন্যে একটি ভ্যানগাড়িতে উন্নতপ্রযুক্তির শক্তিশালি ক্যামেরা রয়েছে রেডব্রিজ কাউন্সিলের। কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী জানান, রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ক্ষেত্রে কিছু আইন মানতে হয়। যে রাস্তায় কোনো বিপজ্জনক বা অপরাধমূলক কোনো ঘটনা একেবারেই ঘটে না সেই সব রাস্তা বা স্ট্রীটে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আইন অনুমোদন করে না। তবে যদি এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং অপরাধ তৎপরতার রিপোর্ট বেশি আসে তখন বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে অন্তত তিন মাসের জন্যে অস্থায়ীভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে পারে কাউন্সিল। জনহণের করের অর্থে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়াই কাউন্সিলের বড় দায়িত্ব বলে জানান কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী।
এদিকে রেডব্রিজ কাউন্সিলে ইদানিং ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে অসম্ভব পর্যায়ে। এ দিকেও অত্যন্ত সতর্ক রেডব্রিজ কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড মূল্যের অবৈধ ই-সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে রেডব্রিজ কাউন্সিল এবং মেট পুলিশ প্রায় ১শ হাজার পাউন্ড মূলের অবৈধ ইসিগারেট জব্দ করেছে বলে জানালেন কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী। ইসি সিগারেট সর্বোচ্চ ৬শ ভেইপ পর্যন্ত বিক্রির বৈধতা আছে। কিন্তুউদ্ধার হওয়া ইসিগারেটগুলো আড়াই হাজার থেকে ৭ হাজার ভেইপের ইসি সিগারেট রয়েছে। যা বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী জানান, ৬শ ভেপের একটি ইসিগারেট প্রায় তিন প্যাকেট সিগারেটের সমান। সেখানে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার ভেপের একটি ই-সিগারেট একদিনেই শেষ করছে ধুমপায়ীরা। তাতে কি হতে পারে বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী জানালেন, অবৈধ ইসিগারেট ব্রিক্রেতাদের প্রাথমিকভাবে সতর্কতা নোটিশ দেওয়া হবে। তা না মানলে এবং একই অপরাধ করলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবে কাউন্সিল। আইন অনুযায়ী, ১শ পাউন্ড জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ বছরের জেলদন্ড বা লাইসেন্সও হারাতে পারেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিকর ইসিগারেট থেকে নতুন প্রজন্মদের বাঁচাতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান কাউন্সিলর খায়ের চৌধুরী।