আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন চেয়ে রিট

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (পিসিআইসি) গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।

আবেদনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট আবদেনের ওপর শুনানি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী।

অ্যাডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলামসহ সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আজ রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন দাখিল করেন।

রিট আবেদনে আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে। ১৪৫ পৃষ্ঠার রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি আকারে ১৫২২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট (মোট ১ হাজার ৬৬৭ পৃষ্ঠা) দেওয়া হয়েছে। এতে ৮টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

৪ সপ্তাহের মধ্যে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের অনুরোধ জানিয়ে গতবছর ১০ সেপ্টেম্বর বিবাদীদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও সংশ্লিষ্টরা নোটিশের জবাব না দেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

রিট আবেদনে পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য ও ইতিহাস, পুলিশের গৌরবময় অর্জন ও তাদের শৃঙ্খলা বিধানের আইনি কাঠামো তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের তথ্য নিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন গণম্যাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু, হেফাজতে নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, মাদক ব্যবসা ও উদ্ধারকৃত মাদক আত্মসাত, স্বেচ্ছাচারী আটক ও আটক বাণিজ্য, অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া, মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ, মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি, তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষগ্রহণ, সাংবাদিক নির্যাতন, কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামীদের নাম বাদ দেওয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতিসহ মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

রিট আবেদনে ৮টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন আন্ত্মর্জাতিক আইনে পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ তদন্ত করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ/কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিসত্মান, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর রয়েছে। ভারতের ২৭টি অঙ্গরাজ্যে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ রয়েছে। বাংলাদেশেও ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আজও আইনে পরিণত হয়নি।

রিট আবেদনের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে বিচারের প্রাথমিক ধাপ ‘তদন্ত’ সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয় না।’

Advertisement