আবর্জনায় ঘেঁটে খাবার খুঁজছে গাজাবাসী: জাতিসংঘ

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: নজিরবিহীন দরিদ্রতার শিকার ফিলিস্তিনের গাজাবাসী। বাধ্য হয়ে আবর্জনার স্তূপে খাবার খুঁজছে অবরুদ্ধ এ উপত্যকার বাসিন্দারা। এমনটাই জানালেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিজ লাজ্জারিনি।

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, গাজা ও অন্যত্র বসবাসরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দুর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিজ লাজ্জারিনি বলেন, শরণার্থীরা মরিয়া ও নিরাশ। ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রতিবেদন টেনে তিনি বলেন, গাজায় মানুষজন আবর্জনার মধ্যে খাবার সন্ধান করছে। বহু মানুষ দিনে তাদের পরিবারের মুখে এক বা দুই বেলা খাবার জুটানোর জন্য লড়াই করছে।
এপ্রিলে ইউএনআরডব্লিউএ’র কমিশনার জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন অভিজ্ঞ মানবাধিকারকর্মী লাজ্জারিনি। করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে সংস্থাটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
ইউএনআরডব্লিউএ’র সংকটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে গার্ডিয়ান জানায়, প্রথমত, করোনার সময়ে স্থায়ীভাবে আর্থিক মন্দার সম্মুখীন তারা।

এরপর, তাদের সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরেছে। এছাড়া, দীর্ঘদীন ধরে চলে আসা ইসরাইলি আক্রমণতো রয়েছেই।

এখন, করোনার সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইউএনআরডব্লিউএ সমর্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোয় ৩৬ লাখ ফিলিস্তিনি চরম নাজুক অবস্থা পার করছে। অন্যদিকে, ইসরাইলের পশ্চিম তীর অধিগ্রহণের আশঙ্কাও ঝুলে রয়েছে। অধিগ্রহণ হলে সেখানে সংস্থাটির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সবশেষে, সংস্থাটি ঘিরে উঠে আসা কেলেঙ্কারির কারণে তাদের কার্যক্রম আরো ব্যাহত হয়েছে। গত বছর এক তদন্তে ইউএনআরডব্লিউএ’র তৎকালীন প্রধান পিয়ের ক্র্যাহেনবুলের বিরুদ্ধে বিস্তৃত স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, নিজের এক প্রেমিকাকে সংস্থাটিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। তদন্তের পরপরই পদত্যাগ করেন তিনি।

সাবেক প্রধানের পদত্যাগের পর তিন দশকের মানবিক কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা নিয়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লাজ্জারিনি। তিনি বলেন, এমন অস্থিতিশীল, অস্থির পরিবেশে আমাদের এমন একটি ইউএনআরডব্লিউএ দরকার যার কার্যক্রম অনুমেয়। আমাদের অনুমেয় একটি সংস্থা ও অনুমেয় তহবিল প্রয়োজন।

করোনার সময়ে বিশ্বজুড়ে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞায় ইতিমধ্যে ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। জেরুজালেম ও আম্মানে চার সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকতে হয়েছিল লাজ্জারিনিকে। তিনি বলেন, আমরা অর্থ প্রবাহ বিবেচনায় প্রতিনিয়ত সংকটে রয়েছি। ইউএনআরডব্লিউএ সবসময়ই নগদ অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সাধারণত প্রতি বছর ১৯ কোটি পাউন্ড বাজেট ঘাটতিতে ভুগে ইউএনআরডব্লিউএ। প্রায় প্রতি চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ পরপরই তহবিল ফুরিয়ে যায় ৩০ হাজার কর্মীর এই সংস্থাটির। লাজ্জারিনি জানান, এটা অত্যন্ত বিচলিত করে দেয়ার মতো বিষয়। তিনি জানান, সংস্থাটির স্কুল ও স্বাস্থ্য সেবাগুলো কমিয়ে নেয়া হচ্ছে।

ইউএনআরডব্লিউএ’র আর্থিক সংকট চরম আকার ধারণ করে ২০১৮ সালে। ওই বছর ট্রাম্প সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানের পরিমাণ ৩০ কোটি ডলার কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ নেই।

Advertisement