ব্রিটবাংলা ডেস্ক : প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সাথে প্রতারণার অভিযোগে সিলেটের এক্সেল সিয়ের হোটেলের সাবেক এমডি সাঈদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার রায়ে বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একই সঙ্গে সাঈদ চৌধুরীর সম্পত্তি বিক্রয় এবং হস্তান্তরের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে আদালত।
গত ৯ ফেব্রুয়ারী, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদি ও এক্সেল সিয়রে বিনিয়োগকারী এবং ইস্ট লন্ডনের রয়েল রিজেন্সির পরিচালক আব্দুল বারি এক লিখিত বক্তব্যে এই তথ্য জানান। লিখিত বক্তব্যে আব্দুল বারি জানান, বছরের পর বছরে সাঈদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টার ধারাবাহিকতায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্রিটিশ হাইকোর্টে সাঈদ চৌধুরী এবং এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। তার ব্যক্তিগত বিনিয়োগকৃত ৫৩ লাখ টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি এককভাবে এই মামলা করেন বলে লিখিত বক্তব্যে জানান আব্দুল বারি। গত ২৭ অক্টোবর সেন্ট্রাল লন্ডনের কাউন্টি কোর্টের বিচারক এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার রায়ে সাঈদ চৌধুরীকে ব্যক্তিগতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে আব্দুল বারির বিনিয়োগের ৫৩ লাখ টাকা, মামলার খরচ এবং ইন্টারেস্ট সহ ১৪ দিনের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে সাঈদ চৌধুরীর প্রতি আদেশ জারি করেছেন আদালত।
এছাড়া আবদুল বারীরর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত সাঈদ চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি কিংবা হস্তান্তরের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে আদালত। এ স্থগিতাদেশ সাঈদ চৌধুরীর বাংলাদেশের পৈত্রিক, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক সম্পত্তির ওপরও কার্যকর হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মামলার বাদি আব্দুল বারি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন এক্সেল সিয়রের ডিরেক্টর যথাক্রমে আবদুল লতিফ জেপি এবং আনিসুর রহমান এবং বিনিয়োগকারী সিরাজ হক ও কয়সর খান। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের নামে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনাগুলো বেশ আলোচিত। প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিরা ব্রিটেনের আদালতে বিচার চাইতে গেলে উল্টা বিপদে পড়বেন বলেও প্রতারক চক্র ভয় দেখিয়ে থাকে। এই প্রতারক চক্র সবকিছু জেনে-শুনে পরিকল্পনা করেই এসব প্রতারণা করে থাকে। সাঈদ চৌধুরীর প্রতারণার বিষয়টি ব্রিটিশ আদালতে প্রমাণিত হওয়ার এ ঘটনাটি ভুক্তভোগী অন্যান্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগেকারীদের জন্য একটি অনন্য মাইলফলক। সামনের দিনগুলোতে এটি বিনিয়োগের নামে প্রতারণা করা ব্যক্তি এবং ভুক্তভোগী সকলের জন্য একটি বড় নজির হয়ে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বারি জানান, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সাঈদ চৌধুরী এবং এক্সেলসিয়র সিলেটকে বিবাদী করে মিথ্যাচার ও প্রতারণার সাতটি অভিযোগ এনে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্রিটিশ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করি। পরে সেটি সেন্ট্রাল লন্ডনের কাউন্টি কোর্টের বিজনেস অ্যান্ড প্রোপার্টি সেকশনে স্থানান্থরিত হয়। বিচারক ছিলেন এইচএইচ জে স্যান্ডার্স। দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর নানা ডকুমেন্ট, সাক্ষ্য-প্রমাণ আদান- প্রদানের পর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাঁচদিন এ মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানীর পর আরও প্রায় দুই মাস সময় নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর বিচারক এই মামলার বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ ২২ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বর্ণনায় বিচারক উল্লেখ করেন বিবাদীদের মধ্যে আদালতে সাঈদ চৌধুরী নিজেই নিজের প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে শুনানীর দুই সপ্তাহ আগ পর্যন্ত (১৩ জুলাই) সাঈদ চৌধুরী সলিসিটর দ্বারা প্রতিনিধত্ব করছিলেন। পুরো বিচারকার্যে সাঈদ চৌধুরী এবং তাঁর সাক্ষীগণকে একজন স্বাধীন বাংলাভাষী ইন্টারপ্রিটার সহায়তা করেন। আর এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের পক্ষে আদালতের শুনানীনে কেউ অংশ নেয়নি।
এ মামলায় সাঈদ চৌধুরী এবং এক্সেলসিয় সিলেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও মিথ্যাচারের মোট অভিযোগ ছিলো সাতটি। এরমধ্যে চারটি প্রমাণিত হয়। এরপর বিচারক বাকীগুলো প্রমাণের প্রয়োাজনবোধ করেননি বলে ২২ পৃষ্ঠার রায়ের ১৮ পৃষ্টায় উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল বারি আরো জানান, আদালতের রায় অনুযায়ী অর্থ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত করতে ভিন্ন একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি দেয়া চূড়ান্ত রায়ে আদালত সাইদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী আফিয়া খাতুন চৌধুরীর মালিকানাধীন সম্পত্তির ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য ইনজাংশন জারি করেছে। তাদের ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে থাকা সম্পত্তি এবং সাইদ চৌধুরীর বাংলাদেশের সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক শেয়ার সহ তার সকল প্রকার সম্পত্তির ওপর এ ইনজাংশন কার্যকর হবে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২ লাখ পাউন্ডের সমপরিমান সম্পত্তি সাইদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রীকে বজায় রাখতে হবে।
সাঈদ চৌধুরী বক্তব্য :
এ বিষয়ে ব্রিটবাংলা২৪কমের পক্ষ থেকে সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা যাবে না। আগামী ২২ মার্চ মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে মঙ্গলবারের প্রেস কনফারেন্সে বিনিয়োগকারী আব্দুল বারী অসংখ্য মিথ্যাচার এবং জ্বালিয়াতীর আশ্রয় নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মূলত প্রকল্পটি কুক্ষিগত করার জন্যে তাকে প্ররোচিত করে সুবিধা করতে না পেরেই তার এবং কোম্পানীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও হয়রানীমূলক মামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাঈদ চৌধুরী।