‘আমার বোন স্কুলে গেলো ছাত্রী হয়ে, ফিরলো ধর্ষিতা হয়ে’কুলাউড়ায় মানববন্ধনে ভিকটিমের ভাই

সিলেট অফিস :: সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী (১৩)-কে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ মামলা রুজু করায় এবং পুলিশ কর্তৃক ধর্ষিতা ও ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি-ধামকি এবং মানসিক হয়রানী করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টার ভিতরে ঘটনার প্রধান আসামী আনিছ মিয়া (৩২)-কে গ্রেফতার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন বক্তারা।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৭ শত শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় হাজারো জনতা।

ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সহকারী শিক্ষক আব্দুস সামাদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ভিকটিমের ভাই, প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডি’র সদস্য উমেদ আলী, সহকারী শিক্ষক জামাল আহমদ, সহকারী শিক্ষক হামিদ খান, সহকারী অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম, সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম রাফা, ফাহমিদা ইসলাম শোভা, সফিকুল হাসান প্রমুখ।

মানববন্ধনে ভিকটিমের ভাই বলেন, আমার বোন গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) স্কুলে গিয়েছিলো ছাত্রী হয়ে কিন্তু ফিরেছে ধর্ষিতা হয়ে। বাড়ি ফেরার পথে নরপশু আনিছ ও সানু আমার বোনকে হত্যার উদ্দেশ্যে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। আমার বোনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো চাকুর আঘাত রয়েছে। ঘটনার পর আমার বোনকে নিয়ে বিকাল ৫ টার দিকে কুলাউড়া থানার কুলাউড়া থানার দুই এসআই ও এক কনস্টেবল আমার বোনকে একা একটি রুমে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে রাত ২ টা পর্যন্ত আটকে রেখে জোড়জবস্তি করে মনগড়া ঘটনার বিবরনী আদায় করে। কিন্তু এর আগে আমার বোন প্রথম যে ঘটনার বিবরনী দেয় তা তারা ছিঁড়ে ফেলে।

ভিকটিমের ভাই আরও বলেন, আমার বোনকে ওই তিন পুলিশ ভয় দেখিয়ে বলে- ‘তোমার জেল হবে, তোমার ফাঁসি হবে, তোমার পরিবারের ক্ষতি হবে, তোমার পরিবার ধ্বংস হবে। তাই আমরা যেভাবে বলছি এইভাবে ঘটনা বলো।’

ভিকটিমের ভাই বলেন, আমার বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কুলাউড়া থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রুজু হয়েছে। তারা (পুলিশ) টাকা খেয়ে মামলার মুল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ওই পুলিশদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল তথ্য সবাই পেয়ে যাবেন। আমি আমার বোন ধর্ষণের বিচার চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই।’

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সেদিন কিভাবে একজন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছিলো তা ভিকটিম নিজেই বলেছে। আনিছ ধর্ষণ করার পর সানু যখন ধর্ষণ করেছিলো ঠিক তখন মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে সেই বখাটে আনিছ ও সানু পালিয়ে যায়। ভিকটিম প্রকাশ্যে এরকম জবানবন্দি দেয়ার পরও থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রুজু করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। যারা ঘটনায় বিচার দাবি করছে তাদেরকে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার যখন সুশাসনের পথে ভালো দৃষ্টান্ত রাখতে মরিয়া ঠিক তখনই এরা একটা ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সরকারের নীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা ওইসব রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা করি না। ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে ভাটেরাবাসী। ভিকটিমের ভাইয়ের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামী আনিছকে গ্রেফতার এবং ঘটনা ধামাচাপা দিতে যারা ওঁৎপাত করছে সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

মানববন্ধন শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ধর্ষণকারীদের ফাঁসি দাবি করে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়।

এবিষয়ে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি পক্ষ কাজ করছে। মামলা এজহার গ্রহণের সময় ভিকটিমের মা, বাবা, ভাই উপস্থিত ছিলো।

এদিকে স্থানীয়রা জানায়, গত ২৪ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণীতে পড়–য়া এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক একটি জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে ভাটেরা ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ গ্রামের সোনা মিয়া মহরির ছেলে আনিছ মিয়া (৩২) ও ভবানীপুর গ্রামের সোনা মিয়া ওরফে মেলেটারির ছেলে সানু মিয়া (৩৫)। ধর্ষণের পর ছাত্রীকে পাঁচ হাজার টাকার লোভ দেখায় ওই দুই লম্পট। এসময় ভিকটিমের চিৎকার চেচাঁমেচি শোনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ওই দুই বখাটে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ সানু মিয়াকে আটক করে। কিন্তু এঘটনার প্রধান আসামী আনিছ মিয়াকে এখনও পলাতক।

Advertisement