আল-মিজান স্কুলের দশম হাফিজ গ্রাজুয়েশন : ৬ জনকে পাগড়ি ও সার্টিফিকেট প্রদান

লন্ডন, ১৭ জানুয়ারি ২০২০ : ইস্ট লন্ডন মস্ক পরিচালিত আল-মিজান স্কুল ও লন্ডন ইস্ট একাডেমি থেকে এ বছর ৬ জন কৃতি শিক্ষার্থী পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছেন। এ নিয়ে গত ১৫ বছরে ৮১ জন শিক্ষার্থী পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করলেন । হিফজ সম্পন্নকারী ছাত্রদের নিয়ে ১৬ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নিচতলায় অনুষ্ঠিত হয় দশম বার্ষিক হুফফাজ গ্রাজুয়েশন সিরিমনি । অনুষ্ঠানে হাফিজদের পাগড়ি পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্রেস্ট ও পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বারাকা খান ফাউন্ডেশনের পক্ষে মুহাম্মদ খান, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম, সিনিয়র ইমাম মুহাম্মদ মাহমুদ, লন্ডন ইস্ট একাডেমির প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আসকর আলী, সহকারী প্রধান শিক্ষক ড. আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি হেড টিচার মুহাম্মদ বদর ও গভর্ণিং বডির চেয়ারম্যান হোসাইন শিপার।

লন্ডন ইস্ট একাডেমির ছাত্র রাইয়ান চৌধুরী ও ওমর ইউনুস মিয়ার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তালহা আহমদ।
অতিথি হিসেবে তেলাওয়াত করেন রিয়াদ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত লন্ডন ইস্ট একাডেমীর সাবেক ছাত্র কামরান হোসাইন।
সনদ প্রাপ্ত ৬ হাফিজ হচ্ছেন মুয়াদ তানভীর, ইশফাক উদ্দিন, মোঃ কাওসার হোসাইন, আহমদ কালিফ, আব্দুল মোবিন ও মাহফুজ ওয়াদুদ।
এছাড়াও আরো ৪ জন ছাত্র পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা হলেন সামি আহমদ, জাকারিয়া আলী, মাহদী রাসুল ও হাসান আলী খান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যারা হাফিজ হলেন তাদের জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের, কারণ তারা পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে একটি বিশাল কাজ সম্পন্ন করেছেন। বক্তারা ছাত্রদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, তোমরা প্রতিদিনই এমন কিছু করবে যাতে তোমাদের মা-বাবা গর্ববোধ করেন। আর মা-বাবাও এমন কিছু করবেন যা সন্তানদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয় । তাঁরা বলেন, কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে ছাত্ররা একটি বিশাল সম্পদ অর্জন করলো। এখন এই সম্পদ ধরে রাখতে কঠোর অধ্যাবসায় প্রয়োজন । মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু অর্জন যতটা কঠিন, তা ধরে রাখা আরো কঠিন । বক্তারা অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ইমাম আব্দুল কাইয়ূম তাঁর বক্তব্যে হাফিজদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হাফিজগণ হচ্ছেন আহাল অব আল্লাহ। তাঁদের মর্যাদা অনেক বেশি। কুরআন মুখস্থ করার পর মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারলে কুরআনের ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন করা যায়। তবে আজকে যারা হাফিজ হলেন তারা যারা মাদ্রাসায় পড়বেন না, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন তারা যেন কুরআনকে বুকে ধরে রাখেন । এটা আপনাদের জন্য একটি বড় আমানত। এই আমানত আল্লাহ তায়ালা আপনাদের দিয়েছেন। অবহেলায় যেন আমানত না হারান।
অনুষ্ঠানে মিডিয়ায় কথা বলেন হাফিজ ইশফাক উদ্দিন ও হাফিজ জাকারিয়া আলী। তাঁরা দুজনই এই অর্জনের জন্য তাঁদের পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করতে পেরে তারা আজ খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতে তারা মদীনা ইউনিভার্সিটি ও অথবা মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষা লাভে আগ্রহী। তবে মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে না পারলেও তারা কুরআনকে বুকে লালন করে এই দেশের কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করবেন।

মিডিয়ায় কথা বলেন হাফিজ ইশফাক উদ্দিনের পিতা মোঃ এবাদ উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদের ছেলে আজ পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ছেলেকে  হাফিজ করার জন্য তাঁর স্ত্রী কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তিনি তাঁর ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
হাফিজ জাকারিয়া আলীর পিতা দেলওয়ার আলী অনুভুতি ব্যক্তি করতে গিয়ে বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত আজ আমাদের চেষ্টা সফল হয়েছে। আমাদের ছেলে হাফিজ হয়েছে। সে যাতে হাফিজ হিসেবে পরবর্তী জীবন অতিবাহিত করতে পারে এই জন্য আমরা তাঁকে গাইড করবো। তিনি বলেন, আমরা তাঁকে ইসলামি শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা লাভে সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবো।
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের মতো এবারও বারাকা খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক হাফিজকে একটি করে আইপ্যাড উপহার দেয়া হয়।

Advertisement