ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে করোনা ভাইরাস। সেখানে হাসপাতালগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে এক অমানবিক দৃশ্য। মৃতদের লাশের আর জায়গা হচ্ছে না মর্গে। ফলে মৃতদেহ একটার পর একটা রেখে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে বাথরুমে। প্রতিদিন এমন ভয়াবহতা বাড়ছেই সেখানকার বিভিন্ন হাসপাতালে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে যাওয়ায় এখন স্বাস্থ্যকর্মীরাই এসব তথ্য জানাচ্ছেন মিডিয়াকে।
একটি ঘটনায়, একজন চিকিৎসক এএফপিকে বলেছেন, মানুষ মারা যাওয়ার পর তার বেড খালি করতে লাশ সরিয়ে নিয়ে তা র্যাযপিং করতে এবং সরিয়ে অন্যত্র নিতে বাধ্য করা হচ্ছে ডাক্তারদের, যাতে ওই বেড আবার ব্যবহার করা যায়। এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে রেকর্ড করা হয়েছে ২৩,০০০ করোনা রোগী। মারা গেছেন প্রায় ৬০০ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহর হলো গুয়াকুইল। কিন্তু এসব হিসাব সরকারি। বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি।
৩৫ বছর বয়সী একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তিনি যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করছেন তা তার পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মার্চে যখন স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ভেঙে পড়ে তখন প্রতি ২৪ ঘন্টায় একজন নার্সকে দায়িত্ব দেয়া হয় ১৫ থেকে ৩০ জন রোগীর দেখাশোনা করার। তিনি বলেন, এত বেশি সংখ্যক রোগী আসছিলেন যে, তারা আমাদের হাতের ওপরই যেন মারা গেছেন। আবার অনেক সাধারণ রোগীকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে আমাদের হাসপাতালের বিছানাগুলো ফ্রি থাকে। অপারেশন রুম থেকে এনেস্থেসিয়া মেশিন সরিয়ে নিয়ে সেখানে বসানো হয়েছে ভেন্টিলেটর। এখানে মানুষ বড় একা। ব্যথাতুর। চিকিৎসায় অনেক জটিলটা দেখা দেয়। অনেক রোগীর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক নষ্ট হয়ে যায়। অনেক মল ত্যাগ করে ফেলেন। এ সময় তাদের খুব খারাপ লাগে এবং তারা মনে করেন সব সময় তাদেরকে এভাবেই দিন গুজরান করতে হবে। তারা দেখতে পান পাশের একজনই প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আর্তনাদ করছেন। তাদের জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন।
এমন অবস্থা শুরু হাসপাতালেরই নয়, মর্গেও। সেখানকার স্টাফরা আর লাশ গ্রহণ করছেন না। ওই নার্স বলেন, অনেক সময় আমাদেরকেই লাশ র্যারপ-আপ করতে হচ্ছে। তারপর তা নিয়ে বাথরুমে সাজিয়ে রাখতে হচ্ছে। এভাবে লাশ রাখতে রাখতে ছয় থেকে সাত স্তর উঁচু হয়। তারপর হয়তো তা নিতে আসে লোকজন।
২৬ বছর বয়সী আরেকজন নার্স এই চিত্র নিশ্চিত করেছেন। তিনিও বলেছেন, বাথরুমে অনেক মৃতদেহ। অনেক লাশ মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। অনেকে আর্মচেয়ারেই মরে পড়ে আছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমিতদের চাপে গুয়াকিলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এপ্রিলের প্রথম অর্ধাংশে গুয়ায়াস প্রদেশে মারা গেছেন ৬৭০০ মানুষ। যা প্রতি মাসে মৃতের তিনগুন বেশি। গুয়াকুইল হলো এই প্রদেশের রাজধানী। প্রদত্ত তথ্যে দেখা যায় যে, করোনা ভাইরাসে সেখানে সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা গেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো স্বীকার করেছেন যে, প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম দেখানো হয়েছে সরকারি হিসাবে।
গুয়াকিলের দ্বিতীয় বড় একটি হাসপাতালের ২৮ বছর বয়সী একজন ডাক্তার স্বাস্থ্যখাতের সঙ্কটের একই রকম ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেছেন, জরুরি বিভাগের ওয়ার্ডের করিডোরের ভিতর পড়ে আছে লাশ। কারণ, মর্গে জায়গা নেই। সেখানে ২০ থেকে ২৫টি মৃতদেহ পড়ে ছিল, সরিয়ে নেয়ার অপেক্ষায়। ওই চিকিৎসক আরো বলেছেন, এসব মৃতদেহ র্যায়পিং করে তা সরিয়ে নেয়ার দায় বর্তেছে আমাদের ওপর, যাতে বিছানাটা দূষণমুক্ত রাখা যায়। কারণ, এই বিছানায়ই পরের রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হবে।
প্রথম যে হাসপাতালের কথা বলা হয়েছে, সেখানকার রিফ্রিজারেটেড কন্টেইনারকে মৃতদেহ স্তূপ করে রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে ১০ দিন পর্যন্ত পড়ে আছে মৃতদেহ। কেউ নেয়ার নেই। কোন কোন পরিবার যদিও মৃতদেহ নিয়ে যায়, তারা লাশের র্যাছপিং খুলতেই গলিত পদার্থ বেরিয়ে আসে। এতে আরো বিপজ্জনক বিপর্যয় ঘটতে পারে।