করোনা ভাইরাস মহামারি দেখা দেয় প্রায় ৬ মাস আগে। এ সময়ে তিনি জাকার্তার পোন্দোক র্যাঙ্গোন কবরস্থানে দিনে তিন থেকে চারজন মানুষের দাফন করতেন।
কিন্তু এখন এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ এরও বেশি। তিনি বলেন, আমরা এত্ত এত্ত মানুষকে দাফন করছি। এখন হাঁপিয়ে উঠেছি।
খবরে আরো বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইন্দোনেশিয়ায়। এখন পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। দ্রুত ভরে যাচ্ছে পোন্দোক র্যাঙ্গোন কবরস্তান। যদি বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী মাসের মধ্যে এই কবরস্তানে আর কোনো ফাঁকা জায়গা থাকবে না বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
করোনা সংক্রমণের ফলে এপ্রিলে বিধিনিষেধ আরোপ করে ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু জুনে এসে তা শিথিল করে। এর ফলে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ ও অফিস খুলে যায়। এর তিন মাস পরে এসে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকরা ভয়াবহতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। জাকার্তা গভর্নর আনিস বাস্বেদান বলেছেন, এখনই সময় আবার নতুন করে আংশিক শাটডাউন দেয়ার। বুধবার তিনি বলেছেন, করোনা মহামারি শুরুর সময়ে যতটা আর্জেন্ট ছিল, তার চেয়ে এখন এই শাটডাউন দেয়া আরো বেশি আর্জেন্ট বা জরুরি। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন শহরটির এক কোটি মানুষকে আবার বাসায় অবস্থান করে কাজ করতে, পড়াশোনা করতে এবং নামাজ আদায় করতে।
সোমবার থেকে সেখানে আবার বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমনটা বছরের শুরুতে করা হয়েছিল। গণপরিবহন চলাচল করছে সীমিত আকারে। রেস্তোরাঁ থেকে শুধু খাবার কিনতে যাওয়া লোকদের কাছে খাবার বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে। অনেক অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোনো অফিস তার সক্ষমতার সীমা অনেক কমিয়ে এনেছে।
আরো ভয়ের খবর দিয়েছেন গভর্নর বাস্বেদান। তিনি বলেছেন, হাসপাতালগুলোর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ এরই মধ্যে রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। এসব রুমকে আইসোলেশন রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইসিইউয়ের অবস্থাও তথৈবচ। একই ধারায় সংক্রমণ অব্যাহত থাকলে শহরে বিছানা সঙ্কট দেখা দেবে। তিনি আরো বলেন, এখন জাকার্তার মানুষকে বাঁচানোর বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা এই ধারা অব্যাহত থাকতে দিই, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হবে না হাসপাতালগুলো। ফলে মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যাবে।
গভর্নরের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জাকার্তার ডাক্তাররা। অনেকে বলছেন, এত আগেভাগে বিধিনিষেধ শিথিল করা উচিত হয় নি। পেসাবাতান হাসপাতালের ড. এরলিনা বুরহান বলেছেন, আমার মনে হচ্ছে পরিস্থিতি ভীতিকর হয়ে উঠছে। দিনের পর দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। কমার কোনো লক্ষণই নেই।
ওদিকে গোরখোদকদের মতোই রাজধানীতে স্বাস্থ্যকর্মীদের অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে। তারা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। বুরহান বলেছেন, কোনো ছুটি ছাড়া মার্চ থেকে ম্যারাথন গতিতে চলছে এই কাজ। এরই মধ্যে বহু স্বাস্থ্যকর্মী বলেছেন, তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তারা আর এই কাজ এগিয়ে নিতে পারছেন না।
এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় সরকারি হিসাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার। ডা. বুরহান বলেছেন, সংক্রমণের ধারা অব্যাহত থাকলে তার হাসপাতালের চিকিৎসকরা আল্লাহর ওপর ভরসা করতে বাধ্য হবেন। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন, কাকে চিকিৎসা দেয়া হবে, কাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে আমি ভীতশঙ্কিত। যারা আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের সবাইকে আমরা সাহায্য করতে পারছি না। এত রোগী সামাল দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় মারা গেছেন কমপক্ষে ২০০ স্বাস্থ্যকর্মী।
পারতামিনা হাসপাতাল হলো আরেকটি হাসপাতাল। এখানেও করোনা চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জীবনের ভয় নিয়ে সেখানে কাজে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ডা. শান্দি শানায়া। ২৬ বছর বয়সী এই চিকিৎসক বলেন, আমরা নতুন আক্রান্তকে একটি সংখ্যা হিসেবেই দেখছি না। যখন একজন স্বাস্থ্যকর্মী মারা যান তখন চিন্তা করুন একজন সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে কতটা বঞ্চিত রয়েছেন। আমরা আসলে অনেক আগেই সব উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। করোনা সংক্রমণ কমে আসার আগেই আমরা এই শহরের সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম।
ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। এদেশের জনসংখ্যা ২৭ কোটি। সেখানে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধের সহজ কোন সমাধান নেই। জীবনজীবিকা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাও কঠিন। জাকার্তায় আরো একবার বিধিনিষেধ দেয়ায় হয়তো করোনার বিস্তার কমিয়ে আনা যাবে। কিন্তু কম আয়ের মানুষগুলো আরো ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।