এফবিআইয়ের সহায়তা চাইলেন দুদক চেয়ারম্যান

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: অর্থ পাচারকারীদের আইন আমলে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (এফবিআই) সব দেশের এ ধরনের সংস্থার সহায়তা চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ সোমবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আবাসিক আইন উপদেষ্টা এরিক অপেঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান দুদক চেয়ারম্যান। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য এ বৈঠক হয়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং। এ জাতীয় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় সমন্বয়ের প্রয়োজন। তাই কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অভিপ্রায় জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থ পাচারের লাগাম টেনে ধরা যেতে পারে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কেউ যদি আমেরিকায় অর্থ উপার্জন করে গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ গড়ে তোলেন, সে বিষয়ে দুদকের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ যদি অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে আমেরিকা বা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সম্পদ গড়েন, সেটা দুদক আইনের আওতাভুক্ত অপরাধ। এসব অর্থ পাচারকারীকে আইন আমলে আনতে তিনি এফবিআইসহ সব দেশের এজাতীয় সংস্থার সহযোগিতা চান।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও এফবিআইয়ের সঙ্গে দুদকের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এ দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ও কমিশনের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। এ জন্য দুদকের চেয়ারম্যান তাদের ধন্যবাদ জানান।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক এফবিআইয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। কমিশন আশা করে, দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত বিশেষ করে মানি লন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম, আর্থিক লেনদেনের তদন্তের ক্ষেত্রে ফরেনসিক অ্যানালাইসিস, ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং, অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল, সম্পদ পুনরুদ্ধার (স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি), তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত আর্থিক অপরাধ, মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স, তথ্য বিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয়ে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বিকশিত হবে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শুধু প্রশিক্ষণ নিলে হবে না, প্রতিটি প্রশিক্ষণ হতে হবে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সংমিশ্রণ। দেশীয় ও বিদেশি জ্ঞানের সংমিশ্রণে যে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তারা গ্রহণ করবেন, তার বাস্তব প্রয়োগ নিজ কর্মে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্নীতিসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অপরাধের মিল রয়েছে, সেসব বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রশিক্ষণ মানেই বিদেশে যেতে হবে, কমিশন এমনটা মনে করে না। প্রয়োজনে এসব বিষয়ে এফবিআই অথবা জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের প্রথিতযশা প্রশিক্ষকেরা বাংলাদেশে এসে কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন অথবা আঞ্চলিক পর্যায়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় সমন্বিতভাবে এসব প্রশিক্ষণ হতে পারে। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কমিশন সব সময়ই ভ্যালু ফর মানির বিষয়টি বিবেচনা করে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে নোটবুক অব ইনকোয়ারি সংযোজন বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে কমিশন রিপোর্ট দেখেই তদন্তের গতি-প্রকৃতি অনুধাবন করতে পারছে। এতে কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধ করাও ক্রমান্বয়ে সহজ হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কমিশন দেশের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করেছে। এসব সততা সংঘের সদস্যদের মাধ্যমে কমিশনের অর্থায়নে দুর্নীতিবিরোধী এবং তাদের পরিশুদ্ধ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তিজীবনে নৈতিকতার ব্যবহারিক চর্চার উদ্দেশ্যে সততা সংঘ রয়েছে—এমন প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপন করা হয়েছে। এসব স্টোরে বিভিন্ন শিক্ষা–উপকরণ, চিপস, চকলেটসহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আছে। আবার প্রতিটি পণ্যের মূল্যতালিকা, পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য ক্যাশবাক্স ইত্যাদি সবই রয়েছে, নেই শুধু বিক্রেতা। এমনকি এসব স্টোর সিসিটিভির আওতামুক্ত। অর্থাৎ কোনো প্রকার নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

আজ পর্যন্ত সততা স্টোরের বিষয়ে অনৈতিকতার একটি অভিযোগও কমিশন পায়নি উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের নৈতিকতার উৎকর্ষ আমাদের আশান্বিত করে। নৈতিকতাবিহীন উন্নয়ন কখনো কখনো অর্থহীন হতে পারে, তাই কমিশন জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল-২০১২–এর আলোকে সমাজে সততা ও নিষ্ঠাবোধ বিকাশে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি কমিশনের পরিচালনায় গণশুনানি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য গঠিত ২৮টি প্রাতিষ্ঠানিক দল, কমিশনের অভিযোগকেন্দ্র-১০৬ প্রবর্তনসহ শুদ্ধাচার বিকাশে কমিশনের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আবাসিক আইন উপদেষ্টা এরিক অপেঙ্গা দুদকের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি কমিশনের অভিযোগকেন্দ্রের হটলাইন-১০৬ ও তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি গণশুনানি ও সততা স্টোর পরিদর্শনের আগ্রহ দেখালে দুদক চেয়ারম্যান তাঁকে এসব কার্যক্রম দেখানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালককে অনুরোধ করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, প্রতিরোধ অনুবিভাগের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, আইসিটি ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল প্রমুখ।

Advertisement