এ কোন লন্ডন!

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: এ কোন লন্ডন! চিরচেনা লন্ডনের রাতের চিত্র বা দিনের চিত্র দেখে যে কেউ থমকে যাবেন। পুরো অচেনা এক নগরীর রূপ নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত নগরীর অন্যতম লন্ডন। চারদিকে খা খা। রাজপথ, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পাব সব শূন্য। মনে হতে পারে প্রাচীন কোনো নগরী। আগে এখানে মানুষের বসবাস ছিল। এখন নিস্তব্ধ চারদিক। কোথাও জনমানুষের দেখা নেই।

ভৌতিক পরিবেশ। রাস্তায় কেউ বেরুলে এমন লন্ডনকে দেখে গা শিউরে উঠবেন- কোথায় এসে পৌঁছালাম। থিয়েটার জনশূন্য, পাব-এরও একই অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জনসাধারণকে ঘরের ভিতর অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ১২ সপ্তাহ সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে। এ সময়ে ঘরে বসেই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, সব অপ্রয়োজনীয় কাজ বন্ধ রাখতে। এড়িয়ে চলতে বলেছেন অত্যাবশ্যকীয় না হলে ভ্রমণ। সোমবার রাতে এমন পদক্ষেপকে ‘ড্রাকোনিয়ান’ বা কঠোর বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে বলেছেন, জীবন রক্ষার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি সোমবার রাতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর মানুষে মানুষে উপচে পড়া লন্ডনের রাজপথ দেখা যায় জনশূন্য। লন্ডনে খুব ব্যস্ত চায়না টাউনের রাস্তা দেখে গা শিউরে ওঠে। এখানেই মানুষের গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগতো। সেখানে হঠাৎ ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন দু’একজন মানুষ। ওয়েস্ট এন্ডে ভীষণ ব্যস্ত থাকতো পাবগুলো। তা এখন খা খা করছে। লন্ডনের এ খবর দিয়েছে সেখানকার অনলাইন ডেইলি মেইল। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, করোনা ভাইরাস এখন বৃটেনে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।

বৃটেনে নতুন যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে গ্রান্ড ন্যাশনাল ও প্রিমিয়ারশিপ রাগবি বাতিল করা। ৫ সপ্তাহের জন্য এসব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার সকালে ট্রেন স্টেশনগুলো, রাস্তায় বাস স্টেশনগুলো ছিল ফাঁকা। এদিন লন্ডনভিত্তিক অনেক শ্রমজীবী গণপরিবহন খাতে বড় রকমের দুর্ভোগে পড়েন। ডিস্ট্রিক্ট লাইন টিউবে ছিল হাতেগোনা মানুষ। পরিবহনমন্ত্রী গ্রান্ট শেপস বলেছেন, গত সপ্তাহে ট্রেনের যাত্রী কমে গেছে এক পঞ্চমাংশ। করোনা ভাইরাসের কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। যদি অবিলম্বে নাটকীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে এই ভাইরাসে মারা যেতে পারেন দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষÑ মন্ত্রীদের এ বিষয়ে সতর্কতা দেয়ার পরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার রাতে সরকারি পর্যায়ের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, যদি সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে বৃটেনে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।

৭০ বছরের বেশি বয়স এমন ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা এবং ডায়াবেটিস, অ্যাজমা আছে এমন ব্যক্তিদেরকে ঝুঁকি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত এমন কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের জন্য এ সপ্তাহে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। তাদেরকে ১২ সপ্তাহের জন্য কার্যত লকড-ডাউন করে রাখা হবে। সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স বলেছেন, নতুন গৃহীত এসব পদক্ষেপ ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া বন্ধের ক্ষেত্রে বড় একটি প্রভাব ফেলবে।

Advertisement