কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ট্রাম্পের

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক যেভাবে উসকে দিয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিসকে ঘায়েল করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বৃহস্পতিবার কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার সাংবিধানিক যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা উসকে দিলেন তিনি। বিবিসির খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর জন্ম নেয়া কমলা হ্যারিসের বাবা জ্যামাইকান, মা ভারতীয়। ডেমোক্র্যাট এ নারী সিনেটরের যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার ‘সাংবিধানিক যোগ্যতা আছে কিনা’ সম্প্রতি মার্কিন এক আইনের অধ্যাপক এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ও চতুর্দশ সংশোধনীর দিকে ইঙ্গিত দিয়ে অধ্যাপক ইস্টম্যান বলেন, কমলা হ্যারিসের জন্মের সময় তার বাবা-মা দুজনেরই যদি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না থাকে, তাহলে জো বাইডেনের এ রানিং মেটের সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার যোগ্যতা থাকে না।

ট্রাম্প বলেন, আমি আজই শুনেছি যে ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যা যা প্রয়োজন; তা নাকি তার (কমলা) নেই। যে আইনজীবী এটা লিখেছেন তিনি খুবই যোগ্যতাসম্পন্ন, খুবই মেধাবী আইনজীবী।

তিনি আরও বলেন, আমি জানি না; এটা ঠিক কি না। কেবল ধারণা করতে পারি যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাকে বেছে নেয়ার আগে ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চয়ই এটি খতিয়ে দেখেছে।

‘কিন্তু এটি খুবই গুরুতর বিষয়, আপনারা বলছেন, আরও অনেকে বলছেন যে তিনি (কমলা) সাংবিধানিকভাবে যোগ্যতা অর্জন করেননি। কেননা তিনি এদেশে জন্মই নেননি।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যৌথভাবে তুলোধোনা করলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ও তার রানিংমেট কমলা হ্যারিস।

বলেছেন, ট্রাম্প একজন অযোগ্য নেতা। তিনি আমেরিকাকে বিভক্ত করেছেন। দেশের ঐক্য ছিন্নভিন্ন করেছেন। হ্যারিস বলেন, যোগ্য ও যথাযথ নেতৃত্বের অভাবে আমেরিকা কাঁদছে। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে সরিয়ে আমেরিকাকে ‘নতুন করে নির্মাণের’ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা। বাইডেন ও হ্যারিসকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন ট্রাম্পও।

বলেছেন, হ্যারিস ইতোমধ্যে নিজের নির্বাচনী লড়াই থেকে ‘নুড়ি পাথরের মতো নিচে গড়িয়ে পড়েছেন।’ আর নির্বাচনে বাইডেন জিতলে মার্কিনিদের চীনা ভাষা শিখতে হবে। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও সিএনএনের।

আগামী নভেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী (দ্বিতীয় মেয়াদে) ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়বেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন সিনেটর হ্যারিস।

প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোনো রাজনৈতিক দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও ৫৫ বছর বয়সী এই নারী।

বুধবার ডেলাওয়ার রাজ্যের উইলমিংটনে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন বাইডেন ও হ্যারিস।

তবে নির্বাচনী অনুষ্ঠানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন।

অ্যালেক্সিস আই ডুপন্ট হাই স্কুলের জিমনেশিয়ামে হাতেগোনা কয়েকজন শ্রোতাকে সামনে রেখে বাইডেন বলেন, আমরা এই নভেম্বরে যাকে বেছে নেব, তিনিই নির্ধারণ করবেন আমেরিকার দীর্ঘ সময়ের ভবিষ্যৎ।

হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। এ ব্যাপারে বাইডেন বলেন, ‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমেরিকার ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে ট্রাম্পই সবচেয়ে বেশি বাজে মন্তব্য ও ঘ্যানঘ্যান করেছেন।’

বাইডেন ট্রাম্পের করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলা, জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্বের হার সামাল দেয়ার ব্যর্থতা এবং তার বর্ণবাদী বক্তব্য ও বিভাজনের রাজনীতি নিয়েও জোর সমালোচনা করেন।

বাইডেনের পর মঞ্চে এসে হ্যারিস বলেন, আমি কাজে লেগে যেতে প্রস্তুত আছি। এরপর ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ করেন তিনি।

করোনা মহামারী মোকাবেলায় ট্রাম্পের নেতৃত্বের অযোগ্যতার প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ভাইরাসটি প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রভাব ফেলেছে। তবে যে কোনো উন্নত দেশের চেয়ে আমেরিকার যে বাজে পরিস্থিতি হয়েছে তার কারণ রয়েছে। এটা ট্রাম্পেরই ব্যর্থতা। শুরু থেকে তিনি এটাকে (করোনাভাইরাস) গুরুত্ব দেননি।

করোনা পরীক্ষা, সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ ও মাস্ক পরা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনি এমন উদ্ভট, তার বিশ্বাস তিনি বিশেষজ্ঞদের থেকেও ভালো জানেন, বলেন হ্যারিস। হ্যারিস আরও বলেন, শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্পের অব্যবস্থাপনা দেশকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে ডুবিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নতুন নেতৃত্বের জন্য কাঁদছে আমেরিকা। যদিও আমাদের একজন প্রেসিডেন্ট আছে, কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়েই ভাবেন বেশি, সেই সব মানুষকে নিয়ে নয়, যারা তাকে নির্বাচিত করেছিল।’ বাইডেন ও হ্যারিসের আক্রমণের জবাবে বুধবার হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন হ্যারিস।

Advertisement