করোনায় কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবন-জীবিকায়। করোনার প্রভাবে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে রয়েছে। এর জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ পর্যাপ্ত নয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের দেওয়া এ সুবিধার খবরই জানেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিডি-অক্সফাম আয়োজিত এক সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এসডিজি বিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সংলাপটি আয়োজনে সহায়তা করে। এই সংলাপে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

স্বাগত বক্তব্যে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা পারলেও ছোটরা তা পারছে না। প্রণোদনা সব পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ফলে কর্মসংস্থানে এর প্রভাব কম।’

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ ছুটির পর অনেক কারখানা খুললেও সেখানকার বয়স্ক কর্মী, বিশেষ করে যাঁদের বয়স ৪০ বছরের বেশি তাঁদের নেওয়া হচ্ছে না। এতে শ্রমিকদের শরীর ও মনের ওপর চাপ বাড়ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রান্তিক পর্যায়ে বেকারত্ব বাড়বে।’

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ১৯ খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজগুলোর অর্ধেকের বেশিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ নেই। যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন সেখানে দেশের মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৮ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত। প্রণোদনা প্যাকেজের পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মোট শ্রমশক্তির ১২ শতাংশ এর সুবিধা পাবে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাঠামোগত অবস্থান ও দক্ষতার কারণে প্রণোদনা নেওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতে প্রণোদনা কার্যক্রম ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ব্যবসায়ীরা সরকারের দেওয়া এ সুবিধার খবরই জানেন না। ফলে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা বিতরণ হয়েছে অনেক কম।’

সংলাপে সিপিডির গবেষণা তুলে ধরে বলা হয়, করোনায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবন ও জীবিকায়। যাঁরা কাজ হারিয়েছেন তাঁদের নতুন করে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুসারে দেশে দরিদ্র মানুষের হার মোট জনশক্তির ২৪.৩ শতাংশ। করোনার কারণে এ বছর তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এর মানে হলো, অতিরিক্ত এক কোটি ৭৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। এ ছাড়া করোনার কারণে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে রয়েছে। যা দেশের শ্রমশক্তির ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১৭ লাখ যুবক কাজ হারাতে পারেন। এ ছাড়া গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তিন লাখ গার্মেন্টকর্মী কাজ হারিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি ও কাঠামোগত সহায়তা দরকার। যাতে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা এসেছে। যদিও এটি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই বৈদেশিক সহায়তার প্রভাব কী, তা পরিষ্কারভাবে আমরা জানতে পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। এই ঢেউ এলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কী করা হবে, সেটি আগে থেকে নজর দেওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শ্রমসচিব কে এম আবদুস সালাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পাশাপাশি এ বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়েছে। ফলে শিল্প-বাণিজ্যের পাশাপাশি কৃষি খাতেও বেকারত্ব বেড়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনেক উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। এনজিওগুলো তাদের অর্থায়ন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে পারে।’

Advertisement