করোনা: সন্দেহ হলেই পরীক্ষার আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: কেবল সামাজিকভাবে দূরত্ব বৃদ্ধি করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণের ঝুঁকি দূর করতে পর্যাপ্ত নয়। এতে সংক্রমণের হার কমলেও মহামারিটি দমানোর জন্য প্রয়োজন আরো জোরদার পদক্ষেপ। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়া বন্ধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে সংক্রমণের চেইন ভাঙা। আর তার জন্য প্রয়োজন পরীক্ষা ও আইসোলেশন। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি এ বার্তা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসুস। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশগুলোর প্রতি আমাদের একটি সহজ বার্তা রয়েছে: পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা। সকল সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করুন।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন গ্রাস করে নিয়েছে পুরো বিশ্বকে। সবমিলিয়ে ১৫০টি দেশ বা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।

দ্য গার্ডিয়ান অনুসারে, সোমবার পর্যন্ত করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৭ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৮০ হাজার। এতদিন সাধারণত উন্নত দেশগুলোয় এর সংক্রমণ ঘটেছে বেশি। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোতেও। উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভালো থাকায়ও ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরো খারাপ অবস্থায় আছে। সেখানে ভাইরাসটির সংক্রমণ আরো বাড়লে তা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

হাত ধোঁয়া ও কনুইতে কাশি দেয়া ঝুঁকি কমালেও পর্যাপ্ত নয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম সোমবার বলেন, গত সপ্তাহে করোনা ভাইরাস ব্যাপক দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। চীনের তুলনায় বিশ্বের বাকি অংশে এখন মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ভাইরাসটি মোকাবিলায় বেড়েছে সামাজিকভাবে দূরত্ব বৃদ্ধির পদক্ষেপও। যেমন, স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে, জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা, আইসোলেশন ও কনটাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা) পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়েনি। ভাইরাসটি মোকাবিলার মেরুদণ্ডই এসব পদক্ষেপ।

আধানম বলেন, সামাজিকভাবে দূরত্ব বৃদ্ধি সংক্রমণের হার কমায় ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাগুলোর কাজ করার সক্ষমতা বাড়ায়। হাত ধোঁয়া ও কনুইতে কাশি দেয়া আপনার ও অন্যান্যদের জন্য ঝুঁকি কমায়। কিন্তু একক পদক্ষেপ হিসেবে সেগুলো মহামারিটি পুরোপুরো নিঃশেষ করতে সক্ষম নয়। এর জন্য প্রয়োজন সবকিছুর যৌথ প্রচেষ্টা।

সকল সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করুন
আধানম জানান, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে সংক্রমণের চেইন বা ধারা ভাঙা। সেজন্য প্রয়োজন পরীক্ষা ও আইসোলেশন। তিনি বলেন, আপনি চোখে কাপড় বেঁধে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন না। এই মহামারী থামাতে আমাদের জানতে হবে কারা আক্রান্ত হয়েছে। দেশগুলোর প্রতি আমাদের একটি সহজ বার্তা রয়েছে: পরীক্ষা পরীক্ষা, পরীক্ষা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, সকল সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করুন। যদি তারা আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের আইসোলেট করুন। খুঁজে বের করুন তারা গত দুই দিনে কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাদেরও পরীক্ষা করুন। তিনি জানান, বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন নতুন পরীক্ষার কিট তৈরি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১২০টি দেশে ১৫ লাখ পরীক্ষা কিট পাঠানো হয়েছে।

সংক্রমণ এড়াতে আইসোলেশন
সংক্রমণের হার কমাতে যেসব আক্রান্তের অবস্থা মোটামোটি ভালো তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় আইসোলেশনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু বহু দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় এরকম ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ নেই। সেখানে সংকটাপন্ন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়েই হাঁপিয়ে উঠছেন কর্মীরা। সেক্ষেত্রে বৃদ্ধ ও সঙ্কটাপন্ন রোগীদের অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিছু দেশে হালকা আক্রান্তদের জন্য স্টেডিয়াম ও জিম ব্যবহার করে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের যত্নের ব্যাপারে আধানম বলেন, ভাইরাসটিকে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা সুস্থবোধ করার পরও অন্যকে আক্রান্ত করতে পারেন। সেজন্য তাদের মধ্যে আক্রান্তের সকল লক্ষণ দূর হওয়ার পরও আরো অন্তত দুই সপ্তাহ তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে। এ সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া যাবে না।

বিবৃতির শেষের দিকে গিয়ে আধানম বলেন, আরো একবার, আমাদের মূল বার্তা হচ্ছে: পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা। এটা একটা গুরুতর রোগ। এতে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকার প্রমাণ মিললেও, শিশুসহ তরুণরাও মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মূলত উন্নত দেশগুলোতেই এর বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু তারাও এটি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মোকাবিলায় পরীক্ষার ওপর জোর দিলেও ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় পরীক্ষার হার খুবই কম। সংস্থাটির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ১০ লক্ষে চার হাজার ৮০০ জন মানুষ করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন। সেখানে ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে করোনা পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন মাত্র তিন জন।

Advertisement