কানেক্ট বাংলাদেশের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

গত মঙ্গলবার, ৩০ শে এপ্রিল ২০১৯ইং লন্ডনের স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে কানেক্ট বাংলাদেশের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়। 

২০১৬ সালের ২৯ শে এপ্রিল প্যারিস সম্মেলনের মাধ্যমে কানেক্ট বাংলাদেশের জন্ম হয়।

প্রবাসীদের ন্যায্য নাগরিক অধিকার ও প্রবাসীদের অর্থায়নে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য কানেক্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠালাভ করে।বক্তারা বলেন,প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিভিন্ন উন্নত দেশে বসবাস করার মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের শিক্ষায় শিক্ষিত এবং কাজের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ এই সকল প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের উন্নত ধ্যান-ধারণা, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের অর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুনগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

এই গুনগত পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্যময় বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে বদ্ধপরিকর।বক্তারা আরো বলেন যে, বর্তমানে প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ বাংলাদেশের নাগরিক প্রবাসে বসবাস করছেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ন্যায্য অধিকার অর্জন এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে কানেক্ট বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

সম্মিলিত নেতৃত্বের চর্চা করে কানেক্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য একাত্মতা প্রকাশ করে সকলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।  কানেক্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তোলে ধরা হয়।

মূলনীতি :বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবাসীদের অধিকার।

উদ্দেশ্য :কানেক্ট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে একটি আদর্শ, সূখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

কানেক্ট বাংলাদেশর উদ্দেশ্য হল প্রবাসীদের জন্য ন্যায়বিচার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ন্যায্য অধিকার অর্জন ও প্রতিষ্ঠা করা।লক্ষ্য: বাংলাদেশে অর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবী বা নিবেদিত প্রাণ হবার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করা, যাতে তারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় স্ব স্ব ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ম ও পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পান।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কি কি কাজ করা প্রয়োজন, সেগুলি চিহ্নিত করা এবং বিস্তারিত কর্মসূচী তৈরী এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধাপে ধাপে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা ও এগিয়ে যাওয়া।

প্রতিটি দেশে প্রবাসীদের সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং সেসব সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচী প্রণয়ন, নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা।

দেশে ও বিদেশে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সাধারণ সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন কর্মসূচী ও কার্যক্রম গ্রহণ করা।

বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ন্যায্য দাবি দাওয়া প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।

বাংলাদেশের নীতি নির্ধারনী ও প্রশাসনিক বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীগণ যাতে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কানেক্ট বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখবে ও একে অপরকে সহযোগিতা করবে।

তৃণমূল থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিষয়ক কর্মসূচীর মাধ্যমে কানেক্ট বাংলাদেশ প্রত্যেক নাগরিককে মানুষের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন সাধন করে উন্নত সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের যথার্থ ভাবমূর্তি বিনির্মাণে স্বকীয় ভূমিকা রাখবে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কানেক্ট বাংলাদেশ সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ – বিরোধী সকল আইন বাতিলের জন্য কানেক্ট বাংলাদেশ সর্বাত্মক কর্মসূচী গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ন্যায় সংগত স্বার্থ রক্ষায় সদা সচেষ্ট ও প্রস্তুত থাকবে।

কানেক্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য ৮ দফা দাবিনামা

১. প্রবাসে বসবাসরত সকল প্রবাসী ও তাদের সন্তানদের বা পরিবাবের সদস্যদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস কর্তৃক জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট কার্ড প্রদান করার ব্যবস্থা (দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ড নিজ দেশে পাসপোর্ট হিসেবে গণ্য হবে) করতে হবে।

বিশেষ করে দ্বৈত নাগরিকগনের বাংলাদেশী নাগরিকের মতো সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে। যেমন: সম্পত্তির অধিকার, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার, চাকুরীর ক্ষেত্রে দক্ষতার ভিত্তিতে সুযোগ দেয়া সহ বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃস্টি করে প্রয়োজনীয় আইন ও নিয়মনীতি অচিরেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হউক।

২. প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য (স্ব স্ব দেশ দূতাবাসের মাধ্যমে, পোস্ট এবং অনলাইন মাধ্যমে) প্রয়োজনীয় আইন এবং নিয়মাবলী অচিরেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হউক।

৩. বাংলাদেশ প্রবাসীদের সকল নাগরিক অধিকারসহ পরিবারের সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হউক।

৪. প্রবাসে আহত, নিহত, অসুস্থ বা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারী কর্মী বা রেমিটেন্স প্রেরণকারীর পরিবারের জন্য আর্থিক প্রণোদনা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বিশেষ করে প্রবাসে চুক্তিভিত্তিক কর্মী প্রেরণ পূর্বে সরকারি ভাবে বীমার ব্যাবস্থা ইত্যাদি প্রদানসহ স্বাবলম্বী করে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নিয়মনীতি অচিরেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫. প্রবাসীরা যেন বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি ও নিরাপত্তা গড়ে তোলা এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি উপজেলাবাসীদের জন্য আলাদা শিল্পপরিষদ গড়ে তোলা, যাতে প্রবাসীরা দেশের উন্নতির জন্য তাদের দক্ষতা এবং শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় আইন ও নিয়মাবলী অচিরেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হউক।

৬. বাংলাদেশ সার্বিক উন্নয়নে প্রবাসীদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কারিগরি জ্ঞান এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতার কাজে লাগানো, নিরপেক্ষ বোর্ড গঠনের জন্য পরামর্শ প্রদান, লাল ফিতা সিস্টেম সহজীকরণ এবং আর্থিক বিনিয়োগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিপণন ক্ষেত্রে পূজির নিরাপত্তা এবং দীর্ঘসূত্র বা দীর্ঘ সময়সীমার প্রবণতা তিরোহিত করে নিয়মনীতি অচিরেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হউক।

৭. বাংলাদেশ ও বিদেশে প্রবাসীদের উপর সব ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করা এবং পৃথিবীর সব দেশে বসবাসকারীরা মৌলিক ও মানবিক অধিকারসমূহ সমুন্নত ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসের তত্ত্বাবধানে বিদেশে বিভিন্ন শহরে মোবাইল অফিসের মাধ্যমে আইনী ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা অচিরেই প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হউক এবং

৮. যেহেতু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবচেয়ে কর্মক্ষম ও স্বাবলম্বী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মোট ভোটারের প্রায় ১০ ভাগের ১ ভাগ ভোটার ও মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৬ ভাগের ১ ভাগ হলেও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কোনো রকম প্রতিনিধিত্ব নাই; সেহেতু জাতীয় সংসদে আনুপাতিক হারে সাংসদ মনোনীত করে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নিয়মনীতি অচিরেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হউক।কানেক্ট বাংলাদেশের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বক্তব্য রাখেন,আবু আহমেদ খিজির,শামস উদ্দিন,মোঃ এমদালুল হক আকন্দ লিটন,আজিজুর রহমান আজিজ,মোঃ হাফিজুর রহমান সুমন জাহাঙ্গীর আলম ,সাদি আহমেদ,আবু নাসের শিপন ,মনির মাহমুদ ,মোঃ আশিকুর রহমান সুজন,মোঃ মহিবুল্লাহ  মোঃ শাহার আলী,বাবুল তালুকদার,গিয়াস উদ্দিন আহমেদ,নুরুল আমিন শেখ নূর,মোঃ মুবারক হোসাইন টিটু, জয়নাল আবেদীন,শিব্বির আহমেদ,জালাল উদ্দিন,কামরুজ্জামান চৌধুরী,শিবলী সাদেক প্রমুখ ।

কানেক্ট বাংলাদেশের যৌথ নেতৃত্বের মডেল অনুযায়ী সভায় সমন্বয়কদের উপস্থিত প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে আবু আহমেদ খিজিরকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় ও উক্ত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিব্বির আহমেদ।  সভা শেষে কেক কেটে তৃতীয় জন্ম বার্ষিকী পালন করা হয়।

Advertisement